নোবেল শান্তি পুরস্কারের স্বপ্নটা এবারও পূরণ হলো না মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। শেষ এক বছরে বিশ্বজুড়ে একাধিক সংঘাত রুখে দিয়েছেন, এমন দাবি করে নিজেকে নোবেলের দাবিদার হিসেবে ঘোষণা করে আসছিলেন দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় আসা এই রাজনীতিক।এ বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন ভেনিজুয়েলার বিরোধী নেতা মারিয়া কোরিনা মাচাদো। ভেনিজুয়েলার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় মাচাদোর নিরলস কাজ ও দেশটিতে একনায়কতন্ত্র থেকে ন্যায্য ও শান্তিপূর্ণ পরিবর্তনের সংগ্রামের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই ট্রাম্প নোবেল পুরস্কার পাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে আসছেন। তিনি মনে করেন, বিশ্বজুড়ে সংঘাত কমাতে তার ভূমিকা বড়। বৃহস্পতিবার এক বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘তারা যা করবে, সেটা তাদের বিষয়। আমি একটাই কথা জানি—আমি এসব কিছু পুরস্কারের জন্য করিনি। আমি করেছি, কারণ আমি অনেক মানুষের জীবন বাঁচিয়েছি।’২০২৫ সালের জন্য মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল ১ ফেব্রুয়ারি। ট্রাম্পের কিছু মনোনয়ন সেই সময়সীমার পর জমা পড়ায় সেগুলো বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। নিউইয়র্কের রিপাবলিকান প্রতিনিধি ক্লডিয়া টেনি ডিসেম্বরে তাকে মনোনীত করেছিলেন ২০২০ সালে ইসরায়েল ও কয়েকটি আরব দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’ চুক্তির মধ্যস্থতার জন্য।ট্রাম্প ও তার সমর্থকেরা অবশ্য এই সিদ্ধান্তকে তার প্রতি ‘ইচ্ছাকৃত উপেক্ষা’ হিসেবে দেখছেন। তাদের দাবি, ট্রাম্প ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রথম দেওয়া হয় ১৯০১ সালে। আলফ্রেড নোবেল তার উইলে উল্লেখ করেছিলেন, এই পুরস্কার দেওয়া হবে এমন কাউকে, যিনি জাতির মধ্যে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন, নিরস্ত্রীকরণ বা শান্তি প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছেন।ট্রাম্প ওবামার নোবেল জয় নিয়েও কটাক্ষ করে বলেন, ‘সে কিছুই না করেই পুরস্কার পেয়েছিল। তারা ওবামাকে পুরস্কার দিয়েছে দেশের ক্ষতি করার জন্য।’ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি সাতটি যুদ্ধ শেষ করেছেন। তবে তার দাবি নিয়ে বিতর্ক আছে, কারণ এর বেশ কিছু সংঘাত কেবল উত্তেজনা কমানো পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল।ইসরায়েল ও হামাসের যুদ্ধ থামাতে কিছু অগ্রগতি হলেও পুরো যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়েও ট্রাম্পের দাবিগুলো এখনো বাস্তবে প্রমাণিত হয়নি।গত আগস্টে তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে আলাস্কায় বৈঠকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, কিন্তু ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে ডাকেননি। বৈঠক ব্যর্থ হয়, ২০২২ সালে শুরু হওয়া যুদ্ধ এখনো শেষ করা সম্ভব হয়নি।ট্রাম্প আন্তর্জাতিক শান্তির কথা বললেও, নিজ দেশে তার প্রশাসন বিভক্ত ও অশান্ত। তিনি অভিবাসীদের বহিষ্কারে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অভিযান শুরু করেছেন। বিরোধীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ক্ষমতা ব্যবহার করছেন। অপরাধ নিয়ন্ত্রণের নামে সেনাবাহিনীও নামিয়েছেন মার্কিন শহরগুলোতে।এছাড়া ট্রাম্প প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিয়েছেন, যা জলবায়ু রক্ষায় বৈশ্বিক প্রচেষ্টায় বড় ধাক্কা দেয়। তিনি বাণিজ্যযুদ্ধে জড়িয়েছেন নানা দেশের সঙ্গে, আর নিজের ইচ্ছা চাপিয়ে দিতে শুল্কনীতিকে ব্যবহার করেছেন অস্ত্র হিসেবে।এ বছর ট্রাম্পের নাম প্রস্তাব করেছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত ও পাকিস্তান সরকারও। তারা সবাই দাবি করেছিলেন, ট্রাম্প তাদের অঞ্চলে শান্তি স্থাপনে ভূমিকা রেখেছেন। তবে এসব মনোনয়নও সময়সীমার পর জমা পড়ায় বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।অবশেষে পুরস্কার গেল মাচাদোর হাতে—যিনি দীর্ঘদিন ধরে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে আসছেন এবং নিজের দেশকে গণতন্ত্রের পথে ফেরানোর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
নোবেল জেতার স্বপ্নভঙ্গ ট্রাম্পের
এ বিভাগের আরো খবর/p>