বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বৈধতা সংকটে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ৭ অক্টোবর, ২০২৫ ২২:২৭

অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও আরও কয়েকটি পশ্চিমা দেশ জাতিসংঘে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে তাদের শর্ত ছিল স্পষ্ট, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) পূর্ণ সংস্কার ছাড়া কোনও অগ্রগতি তারা সমর্থন করবে না। তিন দশকের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগের পর এই সংস্কার সহজ নয় বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

১৯৯৩ সালে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন মুক্তি সংস্থা (পিএলও)-এর মধ্যে ওসলো চুক্তির ফলেই জন্ম নেয় পিএ। চুক্তির লক্ষ্য ছিল দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান—পশ্চিম তীর, গাজা ও পূর্ব জেরুজালেম নিয়ে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন, পাশাপাশি বিদ্যমান ইসরায়েল রাষ্ট্র।

চুক্তি অনুযায়ী, পিএ-কে ধীরে ধীরে পশ্চিম তীর ও গাজায় স্বশাসনের ক্ষমতা দেওয়ার কথা ছিল। কর সংগ্রহ, আইনসভা ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আয়োজন এবং প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন, সবই তাদের হাতে হস্তান্তরের পরিকল্পনা করা হয়েছিল।

তবে ইসরায়েল পূর্ব জেরুজালেমে প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ দিতে অস্বীকৃতি জানায়, যা পরবর্তী ‘চূড়ান্ত অবস্থান’ আলোচনার জন্য রেখে দেওয়া হয়।

১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পিএ-র নিয়ন্ত্রণে ফাতাহ দল। দলটির চেয়ারম্যান মাহমুদ আব্বাস ২০০৫ সাল থেকে প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে আছেন। যদিও তার মেয়াদ চার বছরেই শেষ হওয়ার কথা ছিল। ২০০৭ সালে হামাসের গাজা দখলের পর থেকে ফাতাহ কেবল পশ্চিম তীরে সীমাবদ্ধ।

ফাতাহ এতটাই প্রশাসনিক কাঠামোর সঙ্গে জড়িয়ে গেছে যে, বিশ্লেষকদের মতে, পিএ ছাড়া দলটির টিকে থাকা সম্ভব নয়। অথচ জনগণের চোখে ফাতাহ ও আব্বাস দুজনই এখন খুবই অজনপ্রিয়। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অদক্ষতার দায়ে জর্জরিত।

ফিলিস্তিনিদের অনেকেই মনে করেন, বৈধ নেতা তিনি-ই, যিনি ইসরায়েলি দখলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারবেন। সাম্প্রতিক এক জরিপে মাত্র ৬ শতাংশ ভোটার জানিয়েছেন, তারা আব্বাসকে ভোট দিতে চান। কারাগারে বন্দি নেতা মারওয়ান বারঘুতিকে সমর্থন করবেন ৪১ শতাংশ। হামাসের যেকোনও প্রার্থীকে ভোট দিতে চান ১৫ শতাংশ।

ফলাফলে স্পষ্টভাবে ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি আব্বাসের পদত্যাগের পক্ষে। ফাতাহর জনপ্রিয়তা নেমে এসেছে ১৮ শতাংশে, যেখানে হামাসের সমর্থন ২৯ শতাংশ।

পিএ নিয়ে প্রত্যাশা ও বাস্তবতায় বিশাল ফারাক। ফিলিস্তিনিদের কাছে এটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তুতি, সেবা প্রদান ও দখলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের কেন্দ্র।

ইসরায়েলের কাছে পিএ হলো দখলকৃত ভূখণ্ডে প্রশাসনিক হাতিয়ার। যাদের কাজ ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও প্রতিরোধ দমন করা।

এই লক্ষ্যেই ফাতাহকে শুরু থেকেই আন্তর্জাতিক তহবিল দেওয়া হয় নিরাপত্তা সংস্থা গঠনের জন্য। পরে ইসরায়েলের সঙ্গে ‘নিরাপত্তা সহযোগিতা’ চুক্তি হয়, যা অনেক ফিলিস্তিনির চোখে প্রতিরোধ দমনের হাতিয়ার।

পিএ-র আয় নির্ভর করে মূলত ইসরায়েল ও বিদেশি অনুদানের ওপর। ওসলো চুক্তি অনুযায়ী, ফিলিস্তিনিদের কর ইসরায়েল আদায় করে পিএ-কে দেয়। কিন্তু বহুবার ইসরায়েল এসব রাজস্ব আটকে রেখেছে বা কমিয়েছে।

অন্যদিকে, সবচেয়ে বড় দাতা যুক্তরাষ্ট্র অনুদানের মাধ্যমেই পিএ ও ফাতাহর রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে আসছে বলে অভিযোগ। ২০১৮-১৯ সালে ট্রাম্প প্রশাসন ফাতাহর নিরাপত্তা তহবিল ও জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ)-র অনুদান বন্ধ করে দেয়।

বিশ্লেষকদের মতে, এর উদ্দেশ্য ছিল ফাতাহকে ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনায় ফিরিয়ে আনা, যা অধিকাংশ ফিলিস্তিনির কাছে ছিল সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।

হামাসের উত্থানের পর ফাতাহর বৈধতা আরও দুর্বল হয়। পশ্চিমা দেশগুলোর শর্ত অনুযায়ী পিএ সংস্কার মানে স্বচ্ছ প্রশাসন, জবাবদিহি ও অবাধ নির্বাচন। অর্থাৎ ফাতাহকে তার প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে।

কিন্তু সেটিই দলটির অস্তিত্বের ভিত্তি। প্রায় ৯০ বছর বয়সি আব্বাসের পর নেতৃত্ব কার হাতে যাবে, তা নিয়েও অনিশ্চয়তা। ফলে নেতৃত্ব পরিবর্তনের সময় পিএ অভ্যন্তরীণ অস্থিরতায় পড়তে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, ফাতাহর একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ও বিদেশি প্রভাব থেকে মুক্ত না হলে পিএ কোনোভাবেই রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রস্তুত নয়।

দশকের পর দশক ধরে পশ্চিমা দেশগুলোর নীতিগত দ্বিমুখিতা ও ইসরায়েলের প্রতি সহনশীলতা পিএ-কে দুর্বল করে তুলেছে। ফলত, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যে স্বপ্ন ওসলো চুক্তির মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল, তা আজও বৈধতার সংকটে জর্জরিত এক অসমাপ্ত প্রতিশ্রুতিতেই রয়ে গেছে।

এ বিভাগের আরো খবর