বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

যুদ্ধ শেষ করার সুযোগ কাজে লাগাতে পারবে ইসরায়েল-হামাস

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ৭ অক্টোবর, ২০২৫ ২১:২৬

গাজায় দুই বছর ধরে চলা যুদ্ধ-সংঘাতে এখন পর্যন্ত ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছে এবং আরও ১ লাখ ৬৯ হাজার ৬৭৯ জন আহত হয়েছে। এই দীর্ঘ সংঘাতের পর এমন একটি চুক্তির সম্ভাবনা সামনে এসেছে যা গাজায় হত্যাকাণ্ড এবং ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করতে এবং জীবিত জিম্মিদের তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে পারবে। বলা যায় এটাই সর্বশেষ সুযোগ যেটা কাজে লাগিয়ে এই গণহত্যা বন্ধ করা সম্ভব। কিন্তু এ বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয় যে, হামাস এবং ইসরায়েল যুদ্ধ শেষ করার এই মোক্ষম সুযোগ কাজে লাগাতে পারবে কি না।

এটা অনেকটাই কাকতালীয় ঘটনা যে গাজা সংঘাতের ঠিক দুই বছরপূর্তির মধ্যেই যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের সীমান্তে প্রবেশ করে আকস্মিক হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। সে সময়ের হামলায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগই ইসরায়েলি বেসামরিক নাগরিক এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয়। ইসরায়েলের ধারণা ২০ জন জিম্মি এখনো জীবিত আছে এবং তারা আরও ২৮ জনের মৃরদেহও ফেরত চায়।

ইসরায়েলের ভয়াবহ আগ্রাসনে গাজার বেশিরভাগ অংশই ধ্বংস হয়ে গেছে এবং ৬৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এদের বেশির ভাগই বেসামরিক নাগরিক এবং ১৮ হাজারেরও বেশি শিশু।

ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিন উভয় দেশের নাগরিকরাই যুদ্ধের অবসান চায়। তারা চলমান এই যুদ্ধ নিয়ে হতাশ ও ক্লান্ত। এক জরিপে দেখা গেছে, সংখ্যাগরিষ্ঠরা এমন একটি চুক্তি চায় যার মাধ্যমে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা যাবে এবং যুদ্ধের অবসান ঘটবে। ইসরায়েলের সশস্ত্র বাহিনী এবং আইডিএফের লাখ লাখ রিজার্ভ সেনা মাসের পর মাস ধরে সক্রিয়ভাবে ইউনিফর্ম পরে যুদ্ধ করে যাচ্ছে। তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে চায়।

গাজার ২০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। সেখানে মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষের মধ্যে অসহায় হয়ে পড়েছেন ক্ষুধার্ত মানুষ। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর কঠোর অবরোধের কারণে কোনো ধরনের ত্রাণ সহায়তা গাজায় প্রবেশ করতে পারছে না।

হামাস দুই বছর আগে ইসরায়েলকে যে ধ্বংসাত্মক শক্তি দিয়ে আক্রমণ করতে সক্ষম হয়েছিল তা অনেক আগেই একটি সুসংগত সামরিক সংগঠন হিসেবে ভেঙে পড়েছে।

হামাসও এখন যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি জানিয়েছে। তারা জিম্মিদের মুক্তি এবং গাজার শাসনভার ফিলিস্তিনি টেকনোক্র্যাটদের কাছে হস্তান্তরের বিষয়ে রাজি হয়েছে। তারা স্বীকার করেছে যে, তাদের ভারী অস্ত্রের অবশিষ্টাংশ হস্তান্তর করতে হবে অথবা ভেঙে ফেলতে হবে। তবে তারা আত্মরক্ষার জন্য পর্যাপ্ত অস্ত্র রাখতে চায়।

অপরদিকে ইসরায়েল হামাসের আত্মসমর্পণের শর্তাবলি নির্ধারণ করতে চাইছে। কিন্তু হামাসের কাছে একটি গুরুতর আলোচনার সুযোগ থাকা এক মাস আগে তারা যা ভেবেছিল তার চেয়েও বেশি সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত করেছে। প্রায় এক মাস আগে দোহার একটি ভবনে ধারাবাহিক হামলা চালিয়ে ইসরায়েল হামাসের নেতৃত্বকে ধ্বংসের চেষ্টা করেছিল এবং ব্যর্থ হয়েছিল। মূলত ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাব নিয়েই সে সময় আলোচনা চলছিল।

তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মনে ভিন্ন ধরনের চিন্তা রয়েছে। তিনি তার ক্ষমতা ধরে রাখতে চান, দুর্নীতির জন্য তার বিচার স্থগিত রাখতে চান এবং পরের বছর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়লাভ করতে চান।

এটা তিনি তখনই অর্জন করতে পারবেন যখন তিনি ‘সম্পূর্ণ বিজয়’ ঘোষণা করতে পারবেন। তিনি এটাকে জিম্মিদের প্রত্যাবর্তন, হামাসের ধ্বংস এবং গাজার সামরিকীকরণ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। যদি তিনি তা করতে না পারেন, তাহলে গত দুই বছরে লেবানন এবং ইরানে-ইসরায়েল তার শত্রুদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে যে ক্ষয়ক্ষতি করেছে শুধু সেসব বিষয় উল্লেখ করাই তার পক্ষে যথেষ্ট হবে না।

মিসরে হামাস এবং ইসরায়েলি আলোচকরা মুখোমুখি সাক্ষাৎ করবেন না। মিসরীয় এবং কাতারি কর্মকর্তারা এ ক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারী হবেন এবং সেখানে উপস্থিত মার্কিন কর্মকর্তারাও একটি বড় প্রভাব ফেলবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এই আলোচনার ভিত্তি হলো- মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০-দফা গাজা শান্তি পরিকল্পনা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি জোরালোভাবে স্থায়ী শান্তি স্থাপনের কথা বারবার বললেও জর্ডান নদী এবং ভূমধ্যসাগরের মধ্যবর্তী ভূমির নিয়ন্ত্রণে ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনিদের মধ্যে দীর্ঘ সংঘাতের অবসানের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। এতে পশ্চিম তীরের ভবিষ্যৎ কী হবে তা উল্লেখ করা হয়নি। যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্যরা ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে সম্মত হলেও পশ্চিম তীরের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।

আরব ও ইহুদিদের মধ্যে এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে চলা এই সংঘাতের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পারে এমন একটি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে হামাস ও মধ্যস্থতাকারীদের মধ্যে অনুষ্ঠিত প্রথম দফার বৈঠক ‘ইতিবাচকভাবে’ শেষ হয়েছে। যদিও আলোচনার অগ্রগতি বা সম্ভাব্য সমঝোতার বিষয়ে এখনো বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।

গাজা যুদ্ধের অবসান ও মানবিক সহায়তা প্রবাহ পুনরায় চালুর পথ তৈরি করতে এই আলোচনা একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

গত সোমবার মিসরের শার্ম আল-শেখ শহরে অনুষ্ঠিত এ আলোচনায় অংশ নেন হামাসের প্রতিনিধিরা। মধ্যস্থতাকারী হিসেবে এতে যুক্ত ছিলেন মিসর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা। মঙ্গলবারও এ আলোচনা চলবে জানা গেছে।

এ ক্ষেত্রে প্রথম চ্যালেঞ্জ হলো- ইসরায়েলি কারাগারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনি এবং যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে বিনা বিচারে আটক গাজার নাগরিকদের বিনিময়ে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির জন্য পরিস্থিতি তৈরি করা। যদিও এটা কোনো সহজ কাজ নয়।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দ্রুত ফলাফল চাচ্ছেন। তিনি মধ্যপ্রাচ্যে বড় ধরনের দরকষাকষির মধ্যস্থতার মাধ্যমে তার উচ্চাকাঙ্ক্ষা পুনরুজ্জীবিত করতে চান, যার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে ইসরায়েল ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন। ইসরায়েল যখন গাজায় বিপুলসংখ্যক ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে এবং মানবিক সহায়তার ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে এবং হামাস ইসরায়েলি বন্দিদের জিম্মি করে রেখেছে তখন এমন পরিস্থিতি সম্ভ হচ্ছে না। সৌদি কর্তৃপক্ষ একাধিক প্রকাশ্য বিবৃতিতে এটাও স্পষ্ট করে দিয়েছে যে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের জন্য একটি স্পষ্ট এবং অপরিবর্তনীয় পথ ছাড়া ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে না।

এ বিভাগের আরো খবর