ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করা অসম্ভব, কারণ তারা ক্রমাগত সমস্ত চুক্তি লঙ্ঘন করে এবং সামরিক হস্তক্ষেপের হুমকি দেয়।
এক্স-পোস্টে তিনি বলেন, ‘আমরা যে পক্ষের মুখোমুখি (যুক্তরাষ্ট্র), তারা প্রতিটি বিষয়ে তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে। তারা মিথ্যা বলে, সামরিক হুমকি দেয়। আমরা এমন একটি পক্ষের সঙ্গে আলোচনা বা চুক্তি করতে পারি না।’
খামেনি আরও বলেন, ওয়াশিংটন সুযোগ পেলে আবারও ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালাতে পারে অথবা ইরানের ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাদের হত্যা করতে পারে।
৫ হাজার পরমাণু শক্তি তৈরিতে ইরান
দেশগুলোর সঙ্গে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই ইরান এবার রাশিয়ার সঙ্গে এক গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি সেরে ফেলেছে। এই চুক্তির আওতায় ইরান তার বিদ্যুৎ উৎপাদনে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারকে বহুগুণে বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। তেহরানের এই পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষমতার ভারসাম্যে পরিবর্তন আনতে পারে বলে মনে করছেন সমরবিদরা।
ইরান বারবার দাবি করে এসেছে যে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাধ্যমে পরমাণু অস্ত্র তৈরির কোনো উদ্দেশ্য তাদের নেই। বরং পরিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম ব্যবহার করে তারা বেসামরিক খাতের, বিশেষত বিদ্যুৎ উৎপাদনের উন্নয়ন ঘটাতে চায়।
এবার সেই পরিকল্পনার কথাই ঘোষণা করলেন ইরানের আণবিক শক্তি সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ ইসলামী। তিনি জানিয়েছেন, দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ হরমোজগানে ৫,০০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার নতুন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করা হবে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্যেই তিনি রাশিয়ার সাথে চুক্তি সেরে ফেলেছেন।
মোহাম্মদ ইসলামীর সাম্প্রতিক রাশিয়া সফরের সময়ই এই চুক্তিটি সম্পন্ন হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ইরান ও রাশিয়ার মাঝে কৌশলগত সহযোগিতার সুযোগকে কাজে লাগিয়েছি। রাশিয়ার পরমাণু সংস্থা রোসাটমের সাথে বেশ কয়েকটি চুক্তি হয়েছে। পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে দেশটির সাথে আমাদের সুসম্পর্ক রয়েছে।’ ২৫ সেপ্টেম্বর মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম তাসনিম নিউজ এজেন্সি এক প্রতিবেদনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
বর্তমানে ইরানের বুশেহরে দেশটির অন্যতম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির দ্বিতীয় ও তৃতীয় ইউনিটের নির্মাণকাজ রাশিয়ার হাতেই রয়েছে। ইরান ২০৪১ সালের মধ্যে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহার করে ২০,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে।
পারমাণবিক কর্মসূচিতে পশ্চিমাদের সাথে উত্তেজনার মাঝেই রাশিয়ার সঙ্গে ইরানের এমন চুক্তিতে স্বভাবতই অবাক হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল। সমরবিদরা মনে করছেন, পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে ইরান সফল হলে মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতার ভারসাম্যে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে, যার ফলে পশ্চিমাদের শাসন ব্যবস্থায় ভাটা পড়তে পারে।
এর আগে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ রাশিয়া ও চীনের প্রস্তাবিত একটি খসড়া প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। খসড়ায় ইরানের পারমাণবিক চুক্তির সমর্থনে গৃহীত জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব ছয় মাসের জন্য বাড়ানোর দাবি জানানো হয়েছিল।