বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভারতীয় তরুণদের স্বপ্ন চুরমার করে দিচ্ছে ট্রাম্পের ভিসা নীতি?

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ১৯:৩১

স্বপ্নিল চক্রবর্তী (ছদ্মনাম) কলকাতার কাছেই খড়গপুরের আইআইটির চতুর্থ বর্ষের ইঞ্জিনিয়ারিং স্নাতক স্তরের মেধাবী ছাত্র। আরও বহু ব্যাচমেটের মতোই সামনের বছর কোনো মাল্টিন্যাশনালে মোটা বেতনের চাকরিতে যোগ দিয়ে মার্কিন মুলুকে পাড়ি দেওয়ার স্বপ্ন দেখছিলেন এই তরুণ। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একটি প্রোক্ল্যামেশন আপাতত তার সেই পরিকল্পনাকে মোটামুটি তছনছ করে দিয়েছে বলা যেতে পারে।

স্বপ্নিল ফোনে বলছিলেন, এটা ঠিকই যে আমাদের ব্যাচের অনেকেই এখন আর গ্র্যাজুয়েশনের পরেই আমেরিকা যাওয়ার কথা ভাবে না। কিন্তু আমার সেই উচ্চমাধ্যমিকের সময় থেকেই নানা কারণে ইচ্ছা ছিল আইআইটি থেকে পাস করে আমেরিকায় বছর কয়েক কাটিয়ে আসবো।

কিন্তু যে এইচ ১বি ক্যাটাগরির ভিসায় স্বপ্নিলের মতো টেক বা মেডিক্যাল গ্র্যাজুয়েটদের মার্কিন কোম্পানিগুলো এতদিন চাকরি দিয়ে নিয়ে যেত, সেটার ফি গত ২০ সেপ্টেম্বরের পর থেকে এক লাফে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১ লাখ ডলার। অথচ এতদিন এই ক্যাটাগরির প্রতিটি ভিসার ফি ছিল মাত্র ২০০০ থেকে ৫০০০ ডলার।

এই ১ লাখ ডলারের অঙ্কটা এইচ ১বি ভিসায় আমেরিকায় গিয়ে যারা চাকরি করছেন, তাদের বার্ষিক গড় বেতনের চেয়েও বেশি।

অন্যভাবে বললে, ব্যতিক্রমী রকমের মেধাবী বা দক্ষতাসম্পন্ন না হলে বিদেশি কোনও প্রফেশনালকে এত চড়া ফি দিয়ে কোনো কোম্পানি আমেরিকায় কখনোই আনতে চাইবে না। কারণ তাতে তাদের খরচ পড়বে এখনকার তুলনায় প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি।

আর এটার প্রভাব পড়বে ভারতেই সবচেয়ে বেশি। কারণ আমেরিকা প্রতি বছর যত এইচ ১বি ভিসা দিয়ে থাকে, তার ৭০ শতাংশেরও বেশি পান ভারতীয় নাগরিকরাই।

গত আর্থিক বছরেও আমেরিকার এইচ ১বি ভিসা পাওয়া ১০০ জনের মধ্যে ৭১ জনই ছিলেন ভারতীয়। এর তুলনায় চীনা নাগরিকরা ছিলেন সংখ্যায় ১১.৭ জন।

বস্তুত যে দশটি দেশের নাগরিকরা সবচেয়ে বেশি এইচ ১বি ভিসা পেয়ে থাকেন, ভারতের পর বাকি নয়টি দেশ মিলিয়েও তারা ভারতীয়দের চেয়ে অনেক কম সংখ্যক ভিসা পান আর এটা ঐতিহাসিকভাবেই সত্যি।

টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিস (টিসিএস) বা ইনফোসিসের মতো ভারতীয় কোম্পানিগুলোও এই ভিসার খুব বড় গ্রাহক।

আমেরিকার সিটিজেনশিপ ও ইমিগ্রেশন সার্ভিসেসের ওয়েবসাইট বলছে, চলতি আর্থিক বছরের জুন মাস পর্যন্ত আমেরিকা যে ১ লাখ ৭ হাজারের মতো এইচ ১বি ভিসা মঞ্জুর করেছে, তার ১৩ শতাংশই পেয়েছে বিভিন্ন ভারতীয় কোম্পানি। নতুন ব্যবস্থায় এই রেওয়াজটা প্রবল অনিশ্চিত হয়ে পড়বে অবধারিতভাবে।

মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক তো প্রথমে বলেছিলেন, কোনো তিন বছর মেয়াদী এইচ ১বি ভিসার প্রত্যেক বছরেই সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে এই ১ লাখ ডলার ফি গুনতে হবে। পরে অবশ্য মার্কিন প্রশাসন পরিষ্কার করেছে যে এটা হবে একটা এককালীন পেমেন্ট।

এটাও পরে ঘোষণা করা হয়েছে যে মেডিক্যাল খাতে যারা এইচ ১বি ভিসায় আসবেন এই চড়া ফি থেকে ছাড় পাবেন তারাও।

কিন্তু তাতে স্বপ্নিলের মতো ভারতের হাজার হাজার ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থী বা টেক গ্র্যাডদের কোনো সুরাহা হচ্ছে না। এজেন্য অনেকেই এখন আপাতত দেশের মধ্যেই চাকরির কথা ভাবছেন।

সোশ্যাল মিডিয়াসহ নানা প্ল্যাটফর্মে ভারতীয়রা অনেকেই মন্তব্য করছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কার্যত এইচ ১বি ভিসার কফিনে শেষ পেরেক মেড়ে দিয়েছেন ফলে এই রুটে নতুন করে ভারতীয়দের আমেরিকা যাওয়ার রাস্তা একরকম বন্ধই হতে চলেছে।

ঠিক কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে?

ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (আইআইটি) বা ভারতের অন্যান্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে অধ্যাপনায় যুক্ত আছেন, এমন অনেকেই আবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন কয়েক বছর আগেও তরুণ গ্র্যাজুয়েটদের আমেরিকায় পাড়ি দেওয়ার যে ‘ক্রেজ’ ছিল তা এখন অনেকটাই স্তিমিত হয়ে এসেছে।

ফলে এইচ ১বি ভিসা বন্ধ হয়ে গেলেও তাতে খুব বড় কোনো হাহাকার পড়ে যাবে না বলেই তাদের অভিমত।বর্তমানে হায়দরাবাদ আইআইটির অধ্যাপক ড. সৌম্য জানা নিজে খড়্গপুর আইআইটি থেকে স্নাতক স্তরে পড়াশোনা করে বহু বছর যুক্তরাষ্ট্রে কাটিয়ে এসেছেন।

তিনি বলেন, নব্বইয়ের দশকে আমরা যখন আইআইটি থেকে পাস করে বেরিয়েছি তার তুলনায় এখন সদ্য গ্র্যাজুয়েটদের আমেরিকায় যাওয়ার ঝোঁক অনেক কম। বরং ভারতীয়রা এখন বেশির ভাগই চায় তাদের কেরিয়ারের পরবর্তী কোনো পর্যায়ে মার্কিন ইকোসিস্টেম বা আমেরিকার বাজারের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে। এদের ক্ষেত্রে এইচ ১বির নিয়ম পরিবর্তন খুব একটা প্রভাব ফেলবে বলে মনে হয় না।

কারও আবার ধারণা, আমেরিকার ইতিহাস বলে সে দেশের ইমিগ্রেশন নীতি এরকম নানা ওঠাপড়ার মধ্যে দিয়ে যায় ফলে এই পর্বটাও একটা সময় কেটে যেতে বাধ্য এবং আমেরিকাও তাদের নিজের স্বার্থেই বিদেশি পেশাদারদের জন্য দরজা খুলে দেবে।

কানপুর আইআইটির সাবেক শিক্ষার্থী অজয় কুমার কয়াল বলেন, এই মুহূর্তে ভারতীয়দের জন্য ভবিষ্যৎ বেশ অন্ধকার বলে মনে হচ্ছে, সেটা ঠিকই। তবে আমার মতে এখনই ওভাররিঅ্যাক্ট করারও কোনো দরকার নেই।

এই দেশটা ঐতিহাসিকভাবে এরকম নানা সাইকেলের মধ্য দিয়ে গেছে কাজেই এই পরিস্থিতিটাও চিরকাল থাকবে না বলেই আমাদের বিশ্বাস। আইআইটির যে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা এখন আমেরিকায় বহু বছর ধরে রয়েছেন বা সে দেশের নাগরিকত্ব নিয়েছেন, তাদের কেউ কেউ আবার বিশ্বাস করেন ট্রাম্প প্রশাসনের এই নীতি ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের জন্য একটা বড় বিপর্যয় ডেকে আনবে।

ভারতীয়-আমেরিকান শিল্পোদ্যোগী ও খড়্গপুর আইআইটি-র প্রাক্তন ছাত্র বিপ্লব পাল যেমন সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, আজকে যে পুনে, ব্যাঙ্গালোর, হায়দরাবাদ তৈরি হয়েছে যেখানে কম করে হলেও ১০ লাখের বেশি শুধু বাঙালি চাকরি করছে এটা কি ভারত সরকার করে দিয়েছে? এগুলো সম্ভব হয়ছে আইটি বিজনেস কোম্পানিগুলোর জন্য এবং এই আইটি বিজনেসে এইচ ১বিতে লোক পাঠানো খুব দরকার। কারণ আমেরিকা থেকে কাজ তুলতে গেলে, তাদের ফ্যাক্টরি বা অফিসে বসে কাজ শিখে সেটা এরা ভারতীয়দের শেখায়। আজ ওই ভিসাটা না থাকলে, বাকি শহরগুলোর চাকরির অবস্থাও কলকাতার মতো হতো।

তাছাড়া যারা গেছে, অনেকেই ভারতে কোম্পানি খুলেছে। ভারতে তারা বছরে ৫০ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠায়। যা ভারতের ফরেন রিজার্ভের সবচেয়ে বড় উৎস।

এটা খুব ভুল ধারণা যারা ভারতের বাইরে আমেরিকায় কাজ করছে- তারা ভারতকে কিছু ফিরিয়ে দেয়নি। আজকে ভারতের এই ৫০ লাখ আইটি চাকরি তৈরিই হতো না এই ভিসায় লোকজন আমেরিকায় না গেলে। এমনটাই যুক্তি দিয়েছেন বিপ্লব পাল।

এ বিভাগের আরো খবর