গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত হামলায় একদিনে আরও অন্তত ৯১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে আল জাজিরা এই তথ্য জানিয়েছে।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়, ইসরায়েলি বাহিনী টানা আকাশ ও স্থল হামলা চালিয়ে গাজা শহর দখলের চেষ্টা করেছে, যেখানে একজন খ্যাতনামা চিকিৎসকের পরিবারের সদস্যরাও নিহত হয়েছেন।
আল জাজিরা জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী আবাসিক ভবন, আশ্রয়কেন্দ্র, বাস্তুচ্যুতদের তাঁবু এবং এমনকি সামরিক নির্দেশে শহর ছাড়তে থাকা একটি ট্রাকেও বোমা হামলা চালিয়েছে। গত শনিবার ভোরে গাজা শহরের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল-শিফার পরিচালক ড. মোহাম্মদ আবু সালমিয়ার বাড়িতে হামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন আবু সালমিয়ার ভাই, ভাবি এবং তাদের সন্তানরা। আবু সালমিয়া বলেন, ‘ভাই ও তার স্ত্রীর মরদেহ দেখে আমি স্তম্ভিত হয়ে পড়ি। এখানে সবকিছুই সম্ভব, যেমন সবচেয়ে প্রিয়জনকে শহীদ বা আহত অবস্থায় দেখতে হয়।’
হামাস এই হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এটি ডাক্তারদের শহর ছাড়তে বাধ্য করার জন্য একটি ‘সন্ত্রাসী বার্তা’। তারা আরও জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় আগ্রাসন শুরুর পর ইসরায়েলি বাহিনী প্রায় ১,৭০০ স্বাস্থ্যকর্মীকে হত্যা করেছে এবং আরও ৪০০ জনকে বন্দি করেছে। আরেকটি ইসরায়েলি হামলায় গাজা শহর ছেড়ে যাওয়া একটি ট্রাকে থাকা ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়, এতে অন্তত চারজন নিহত হন। এই হামলাটি শহরের নাসর এলাকায় ঘটেছিল।
কেন্দ্রীয় গাজার আজ-জাওয়াইদা থেকে আল জাজিরার প্রতিবেদক হিন্দ খৌদারি জানান, নিহতরা অবিরাম বিমান হামলা, কামানের গোলা এবং ড্রোন হামলা থেকে বাঁচতে শহর ছাড়ছিলেন। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলি বাহিনী বিস্ফোরক ভর্তি রোবটও ব্যবহার করছে, যা পুরো এলাকা নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছে এবং বড় ধরনের ক্ষতি করছে। এগুলো বিস্ফোরিত হলে মনে হয় যেন ভূমিকম্প হচ্ছে।’
তিনি আরও জানান, পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে উদ্ধারকর্মী ও চিকিৎসকরা আটকে পড়া বা আহত ফিলিস্তিনিদের কাছেও পৌঁছাতে পারছেন না।
ইসরায়েলি ৪৬ বন্দির ছবি প্রকাশ করল হামাস
ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগঠন হামাসের সশস্ত্র শাখা গাজার অবশিষ্ট বেশিরভাগ বন্দির একটি ‘বিদায়ী ছবি’ প্রকাশ করেছে। তারা সতর্ক করে দিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণ তাদের জীবন বিপন্ন করতে পারে।
শনিবার আল-কাসসাম ব্রিগেড তাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে ৪৬ জন বন্দির ছবি প্রকাশ করে। প্রতিটি ছবিতে ‘রন আরাদ’ নামে একজন ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর পাইলটের নাম লেখা আছে। ১৯৮৬ সালে দক্ষিণ লেবাননে ওই পাইলট ‘নিখোঁজ’ হন, যাকে আজও পাওয়া যায়নি।
ছবির পাশাপাশি লেখা হয়েছে, ‘নেতানিয়াহুর একগুঁয়েমি এবং (সামরিক প্রধান) জামিরের আত্মসমর্পণের কারণে... গাজা সিটিতে অভিযানের শুরুতে তোলা একটি বিদায়ী ছবি।’
এদিকে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, তাদের বিশ্বাস গাজায় এখনো প্রায় ২০ জন বন্দি জীবিত আছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও বলেছেন, ২০ জনেরও কম বন্দি জীবিত থাকতে পারে।
ট্রাম্প এবং নেতানিয়াহু বারবার বলেছেন, তারা সমস্ত জীবিত ও মৃত বন্দিকে ফিরিয়ে আনবেন এবং হামাসকে ‘ধ্বংস’ করবেন।
তবে হামাস বারবার সতর্ক করে আসছে, ইসরায়েলি আক্রমণ তীব্রতর হলে বন্দীদের জীবন বিপন্ন হবে। কেননা ইতোমধ্যে কয়েকজন ইসরায়েলি বোমায় নিহত হয়েছেন।
হামাসের এই ছবিটি প্রকাশের পর ইসরায়েলের শহরগুলোর রাস্তায় লাখ লাখ লোক আবারও সরকারের নিন্দা জানাতে নেমে এসেছে। তারা যুদ্ধের অবসান এবং সমস্ত বন্দিদের ফিরিয়ে আনার জন্য একটি তাৎক্ষণিক ও বিস্তৃত চুক্তির দাবি জানায়।
এই মাসের শুরুতে, হামাস দুই ইসরায়েলি বন্দির একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। এরও এক মাস আগে আরও দুই ক্ষীণকায় ইসরায়েলি বন্দির ফুটেজ প্রকাশ হয়েছিল।
গাজা সিটির বৃহত্তম কেন্দ্রে কয়েক সপ্তাহ ধরে ভারী বিমান হামলা অব্যাহত থাকার পর ইসরায়েল সম্প্রতি স্থল আক্রমণ তীব্র করে। এর ফলে লাখ লাখ বাসিন্দা পালিয়ে গেছে।
ফের গাজা থেকে ইসরায়েলে রকেট হামলা
গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলে রকেট হামলা চালিয়েছে প্রতিরোধ যোদ্ধারা। তীব্র অবরোধ ও অভিযানের পরেও রোববার এ হামলা চালানো হয়। খবর টাইমস অব ইসরায়েলের।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর (আইডিএফ) বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, কিছুক্ষণ আগে উত্তর গাজা উপত্যকা থেকে দক্ষিণ উপকূলীয় শহর আশদোদে দুটি রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছে।
আরও জানানো হয়েছে, একটি রকেট বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দ্বারা প্রতিহত করা গেলেও দ্বিতীয় রকেটটি একটি খোলা জায়গায় আঘাত করে। আশদোদে হামলার পর নিকটবর্তী শহরগুলোতে সাইরেন বেজে ওঠার কারণে হামলায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো আহত বা বড় ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
টাইমস অব ইসরায়েলের খবরে বলা হয়, ব্যাপক অভিযানের কারণে গাজা থেকে প্রজেক্টাইলসহ দূরপাল্লার আক্রমণ ক্রমশ কমে যাচ্ছে। বিশেষ করে আইডিএফের স্থল আক্রমণের কারণে গাজার প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে।
উল্লেখ্য, এর আগেও গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছে প্রতিরোধ যোদ্ধারা।