বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ইঁদুরের মতো গর্ত খুঁড়ে যেভাবে বাঁচানো হয় সুড়ঙ্গে আটকা ৪১ প্রাণ

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ২৯ নভেম্বর, ২০২৩ ০৯:৫৪

‘ব়্যাট হোল মাইনিং’ পদ্ধতি খনি থেকে কাঁচামাল উত্তোলনের জন্য প্রয়োগ করা হয়। বিশেষত কয়লা খনিতে এই প্রক্রিয়া খুবই প্রচলিত। এর মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ, অভিজ্ঞ শ্রমিকেরা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে খনিতে নামেন। তারা অল্প জায়গা নিয়ে সরু গর্ত খুঁড়তে খুঁড়তে এগিয়ে চলেন। ঠিক যেমন করে গর্ত খোঁড়ে ইঁদুর। প্রয়োজনীয় কয়লা তুলে আবার ওই একই পদ্ধতিতে বেরিয়ে আসেন তারা।

ভারতের উত্তরাখণ্ডের সুড়ঙ্গে আটকা শ্রমিকদের উদ্ধারে যন্ত্রের সব প্রয়োগ কৌশলই যখন প্রায় ব্যর্থ, তখন আশার আলো দেখাতে শুরু করে ১২ জনের একটি দলের ‘সাদামাটা’ চেষ্টা। শাবল-গাঁইতি ব্যবহার করে খননকাজ শুরু করে ইঁদুরের মতো গর্ত করে সুড়ঙ্গে আটকে থাকা ৪১ শ্রমিককে উদ্ধার করেন তারা।

১৭ দিন পর মঙ্গলবার রাতে কীভাবে একে একে আটকে পড়া ওই শ্রমিকদের বের করে আনা হয় এবং তাদের প্রাণ বাঁচানোর কৌশলের সেই বর্ণনা আনন্দবাজার পত্রিকাকে দিয়েছেন উদ্ধারকারী দলটির প্রধান ওয়াকিল হাসান।

টানা কদিন ধরে নানা উপায়ে কাজ করতে করতে এক পর্যায়ে ধসে পড়া সুড়ঙ্গের মধ্য দিয়ে ড্রিলিং করার সময় অগার মেশিনের ব্লেডগুলো ধ্বংসস্তূপে আটকে যায়। এর পর কর্মীরা শাবল-গাঁইতি ব্যবহার করে খননকাজ শুরু করেন। ড্রিলিং মেশিনের যে টুকরোগুলো সুড়ঙ্গে আটকে ছিল তা সরানো হয়।

যে পদ্ধতিতে কাজ করেছেন ওয়াকিলেরা, তাকে বলে ‘ব়্যাট হোল মাইনিং’। অর্থাৎ, ইঁদুরের মতো গর্ত করে এগিয়ে যাওয়া। ওয়াকিলের নেতৃত্বে ১২ জনের দলটি ওই কাজটি করে।

‘ব়্যাট হোল মাইনিং’ পদ্ধতি খনি থেকে কাঁচামাল উত্তোলনের জন্য প্রয়োগ করা হয়। বিশেষত কয়লা খনিতে এই প্রক্রিয়া খুবই প্রচলিত। এর মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ, অভিজ্ঞ শ্রমিকেরা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে খনিতে নামেন। তারা অল্প জায়গা নিয়ে সরু গর্ত খুঁড়তে খুঁড়তে এগিয়ে চলেন। ঠিক যেমন করে গর্ত খোঁড়ে ইঁদুর। প্রয়োজনীয় কয়লা তুলে আবার ওই একই পদ্ধতিতে বেরিয়ে আসেন তারা।

আমেরিকার যন্ত্র বিকল হওয়ার পরে উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গে শ্রমিকদের বার করতে মনুষ্য-নির্ভর এই পদ্ধতিই অবলম্বন করা হয়েছিল। কিন্তু এ কাজে তেমন পারিশ্রমিক নেই।

ওয়াকিল অবশ্য বলেছেন, ‘সব কাজ পয়সার জন্য হয় না। এই কাজ মানুষের জন্য। এখানে যেমন মানুষের জীবন জড়িয়ে ছিল, তেমনই জড়িয়ে ছিল দেশবাসীর আশা। সেই আশা পূরণ করা সহজ ছিল না।

‘কিন্তু আমরাও আত্মবিশ্বাসী ছিলাম যে, ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে কাজ শেষ করব। পেরেছি। সকলের আশা পূরণ করতে পেরে গর্ব হচ্ছে। দেশকে, দেশবাসীকে রক্ষা করতে সীমান্তে সেনা লড়াই করে। আজ আমাদের মধ্যে সেই অনুভূতি হচ্ছে। মনে হচ্ছে, আমরাও দেশের জন্য কিছু করলাম।’

টানা প্রায় ২৮ ঘণ্টা কাজ করেছেন ওয়াকিলেরা। কিন্তু গোটাটাই পরিকল্পনা করে। ওয়াকিল বলছিলেন, ‘১২ জনের প্রত্যেককে আলাদা আলাদা সময় অনুযায়ী পাঠানো হয়েছে কাজে। কাজের গতি যাতে না কমে, সেই মতো পরিকল্পনা করে এগিয়েছি। যাতে কাজ চলতে থাকে। আমাদের ক্লান্তির জন্য যাতে কাজের গতি কমে না যায়, সে কথা ভেবেই এটা করেছিলাম।’

কখনও মনে হয়নি যুদ্ধটা হেরে যেতে পারেন? ফোনের ওপারে ওয়াকিলের কণ্ঠস্বর বেশ দৃঢ় শোনাল। বললেন, ‘কখনো ভাবিনি যে, এই কাজটা করতে পারব না। বা এই কাজে আমরা ব্যর্থ হব। আমরা ধরেই নিয়েছিলাম, এই কাজটা যে কোনও ভাবে করতে হবে। জিততে হবে। টিমের সবাইকে বলেছিলাম, এই কাজ করতে না পারার কোনও কারণ নেই। এক বারও ভাবিনি যে, করতে পারব না। কেউ আট ঘণ্টা কাজ করেছে টানা। কেউ বা ১০ ঘণ্টা। আমাদের আগের ওই সব অভিজ্ঞতা যে এভাবে ৪১ জনের প্রাণ বাঁচাবে, আগে ভাবিনি।’

ওয়াকিলের দলের ১২ জন ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে এগিয়েছিল সুড়ঙ্গের ভেতরে। সেখানে পৌঁছে একজন দেয়াল খুঁড়তে থাকেন। অন্যজন সেই ধ্বংসস্তূপ সংগ্রহ করেন এবং তৃতীয় জন তা চাকা লাগানো গাড়িতে তুলে দেন। সেই গাড়ি ধ্বংসস্তূপ সুড়ঙ্গের বাইরে নিয়ে যায়। শেয পর্যন্ত এই পদ্ধতিতেই এসেছে সাফল্য।

গত ১২ নভেম্বর ভোরে উত্তরাখণ্ডে উত্তরকাশীর সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গে ধস নামে। ভেতরে আটকে পড়েন ৪১ জন শ্রমিক। এত দিন ধরে তাদের বের করার জন্য নান ভাবে চেষ্টা করা হচ্ছিল। কিন্তু ধ্বংসস্তূপ খুঁড়ে শ্রমিকদের কাছে পৌঁছনো সম্ভব হচ্ছিল না কিছুতেই।

খোঁড়ার সময়ে গত শুক্রবার বাধা আসে। ধ্বংসস্তূপের ভেতরের লোহার কাঠামোয় ধাক্কা খেয়ে ভেঙে যায় আমেরিকায় তৈরি খননযন্ত্র। উদ্ধারকাজ থমকে যায়। উদ্ধার করার আগে পর্যন্ত সুড়ঙ্গের শ্রমিকদের সঙ্গে প্রশাসনের পক্ষে সবসময় যোগাযোগ রাখা হয়েছিল। পাইপের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে কথা চলছিল। পৌঁছে দেয়া হচ্ছিল খাবার, জল এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।

দেশ-বিদেশ থেকে আনা হয়েছিল উন্নতমানের যন্ত্র। এসেছিলেন তাবড় তাবড় প্রযুক্তিবিদেরা। এই যন্ত্রের যুগেও শেষ পর্যন্ত তবু হাতই হল ভরসা। উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গে ইঁদুরের মতো খননকাজ চালিয়ে এল সাফল্য। ১৭ দিন পর উদ্ধার করে আনা হয় ৪১ জন শ্রমিককে।

মঙ্গলবার দুপুরে ইঁদুরের মতো গর্ত খুঁড়ে সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গে আটক শ্রমিকদের কাছে পৌঁছে যান উদ্ধারকারী দলের সদস্যেরা। যে পাইপের মাধ্যমে বেরিয়ে আসেন শ্রমিকেরা, তা উপযুক্ত জায়গায় রাখা হয়েছিল। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যেরা শ্রমিকদের বোঝান, কীভাবে ওই পাইপ দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসতে হবে তাদের।

এই পাইপটি আড়াই ফুট চওড়া। পাইপের যে সব জায়গায় ঝালাই হয়েছে, সেগুলো বেশ ধারাল। সেখান দিয়ে বেরোনোর সময় আঘাত লাগতে পারে শ্রমিকদের। এ সব ঝুঁকির কথাই বুঝিয়ে দেয়া হয় শ্রমিকদের। প্রথমে মনে করা হয়েছিল, সুড়ঙ্গ থেকে হামাগুড়ি দিয়ে হেঁটে বেরোবেন শ্রমিকেরা। কিন্তু দীর্ঘ ১৭ দিন সুড়ঙ্গে আটক থাকার কারণে তারা শারীরিকভাবে সক্ষম ছিলেন না। সে কারণে চাকা লাগানো ট্রলির মাধ্যমে পাইপ দিয়ে তাদের বের করে আনা হয়।

এ বিভাগের আরো খবর