ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় পর্যদুস্ত উপত্যকার বাসিন্দারা। সড়ক, আকাশ ও জলপথে গাজায় খাদ্যসামগ্রী, ওষুধ ও জ্বালানির মতো প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রবেশে অবরোধ আরোপ করেছে ইসরায়েল। এর ফলে গাজায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
খাদ্যসংকটে দিশেহারা হয়ে শেষ পর্যন্ত গাজায় জাতিসংঘের খাদ্য গুদামে হামলা চালিয়েছে সাধারণ মানুষ। গুদামের দরজা ভেঙে তারা আটা-ময়দার মতো অতি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে গেছেন বলে জানিয়েছে গাজায় কাজ করা জাতিসংঘের বিশেষ সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ।
মিশর থেকে গাজাবাসীর জন্য পাঠানো সাহায্য সামগ্রী গাজার দাইর আল-বালাহ শহরের জাতিসংঘের রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সি ফর প্যালেস্টাইন রিফিউজির (ইউএনআরডব্লিউএ) একটি গুদামে সংরক্ষিত ছিল বলে জানিয়েছে সিএনএন।
এ বিষয়ে গাজায় ইউএনআরডব্লিউএর পরিচালক টমাস হোয়াইট আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘মোবাইল ও ইন্টারনেট বন্ধ হওয়ার পর এখানকার (গাজা) পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। বহির্বিশ্ব, এমনকি নিজের পরিবার থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় স্থানীয়রা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।’
সংস্থাটি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, উত্তর গাজা থেকে দক্ষিণে ব্যাপক বাস্তুচ্যুতির কারণে জনসাধারণের ওপর প্রচণ্ড চাপ পড়েছে। দক্ষিণের কিছু কিছু পরিবারে অর্ধশতাধিক আত্মীয়-স্বজন এসে জমেছেন আশ্রয়ের লক্ষ্যে। সেইসঙ্গে জরুরি পরিষেবা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় মানুষ হতাশ হয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আর এসব হতাশা ও যুদ্ধের কারণে গাজায় যে কোনো সময় আইনের শাসনে ধস নামতে পারে।
হোয়াইট বলেন, ‘মিশর থেকে সাহায্য আসলেও তা অতি দ্রুতি শেষ হয়ে যাচ্ছে। এখানে যে সহায়তা আসছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগণ্য। বিলাসিতা নয়, একেবারে বেঁচে থাকার জন্য যতটুকু মৌলিক চাহিদা দরকার বহিরাগত সহায়তা দিয়ে তাও পূরণ হচ্ছে না।’
গত এক সপ্তাহে ৮০টির বেশি ট্রাক গাজায় প্রবেশ করলেও শনিবার ব্ল্যাকআউটের কারণে কোনো সহায়তা বহনকারী ট্রাক সেখানে ঢুকতে পারেনি।
বিষয়টি নিয়ে জাতিসংঘের এ মূখপাত্র বলেন, ‘সহযোগিতার বর্তমান যে পদ্ধতি তা আস্তে আস্তে অকার্যকর হয়ে পড়ছে। ইসরায়েলের আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণে অল্প কয়েকটি ট্রাক (গাজায়) প্রবেশ, ধীরগতি, কঠোর তল্লাশি চলছে। ফলে প্রয়োজনের চেয়েও অপ্রতুল সহায়তা দিয়ে স্থানীয় চাহিদা একেবারেই সামলানো যাচ্ছে না।
‘গাজাবাসীর আতঙ্ক ও হতাশা কমাতে উপত্যকায় মানবিক সহায়তা সরবরাহের একটি নিয়মিত ও অনবরত প্রবাহ চাই আমরা।’
তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৮ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। রোববার হামাস সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিনিদের প্রাণহানির এই সংখ্যা জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় গত ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৮ হাজার ৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৩ হাজার ৩৪২ শিশু এবং ২ হাজার ৬২ জন নারী রয়েছে। এ সময়ে আহত হয়েছেন আরও ২০ হাজার ২৪২ জন।
অন্যদিকে, হামাসের হামলায় ইসরায়েলে প্রাণহানি ১ হাজার ৪০০ ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছেন আরও ৫ হাজারের বেশি মানুষ।