বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

গাজা ঘোষণাপত্রে সই করল যুক্তরাষ্ট্রসহ চার দেশ

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ১৫ অক্টোবর, ২০২৫ ০১:২৭

মিসরে শান্তি সম্মেলন

গাজায় যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও আঞ্চলিক নেতারা একটি ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছেন। গত সোমবার মিসরের শারম আল-শেখ শহরে এ ঘোষণাপত্র স্বাক্ষরিত হয়। ঘোষণাপত্র স্বাক্ষরকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের জন্য একটি অসাধারণ দিন’ আখ্যা দিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন ট্রাম্প। ইসরায়েল ও হামাসের জিম্মি ও বন্দি বিনিময়ের কয়েক ঘণ্টা পর ঘোষণাপত্রটি স্বাক্ষর হয়।ঘোষণাপত্রটির নাম রাখা হয়েছে ‘ট্রাম্প ডিক্লারেশন ফর এন্ডিউরিং পিস অ্যান্ড প্রসপারিটি’ বা ‘টেকসই শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য ট্রাম্প ঘোষণা’। মূলত মধ্যপ্রাচ্য ও গাজায় স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে করা হয়েছে এটি।এতে স্বাক্ষর করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। হোয়াইট হাউস কর্তৃক প্রকাশিত সম্পূর্ণ অংশটি নীচে দেওয়া হল।ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে—আমরা স্বাক্ষরকারীরা ট্রাম্প শান্তি চুক্তির সকল পক্ষের ঐতিহাসিক প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবায়নকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাই। এই চুক্তি দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা গভীর দুর্ভোগ ও ক্ষতির অবসান ঘটিয়ে আশা, নিরাপত্তা এবং শান্তি ও সমৃদ্ধির এক যৌথ দৃষ্টিভঙ্গিতে সংজ্ঞায়িত একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।আমরা গাজায় যুদ্ধের অবসান ও মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আন্তরিক প্রচেষ্টাকে সম্পূর্ণ সমর্থন জানাই এবং তার পাশে আছি। আমরা একসঙ্গে এই চুক্তি এমনভাবে বাস্তবায়ন করব, যাতে ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি উভয় অঞ্চলের সকল মানুষের জন্য শান্তি, নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের সুযোগ নিশ্চিত হয়।ঘোষণাপত্রে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, আমরা বুঝতে পারছি স্থায়ী শান্তি তখনই সম্ভব হবে, যখন ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি উভয় জনগোষ্ঠী তাদের মৌলিক মানবাধিকার সুরক্ষিত রেখে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রেখে সমৃদ্ধির পথে আগাতে পারবে। আমরা বিশ্বাস করি, অর্থবহ অগ্রগতি শুধুমাত্র সহযোগিতা ও ধারাবাহিক সংলাপের মাধ্যমেই অর্জিত হয়।জাতি ও জনগণের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।তাতে বলা হয়েছে, আমরা এই অঞ্চলের গভীর ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মিক গুরুত্ব স্বীকার করি—যেখানে খ্রিস্টধর্ম, ইসলাম ও ইহুদি ধর্মসহ বিভিন্ন বিশ্বাসের শিকড় গভীরভাবে রয়েছে। শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রতি আমাদের অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে আমরা এই পবিত্র সম্পর্কগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা জানাব এবং ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্থাপনাগুলোর সুরক্ষাকে সর্বাগ্রে রাখব।এ ছাড়া বলা হয়েছে, আমরা সব ধরনের উগ্রবাদ ও চরমপন্থা নির্মূলের প্রতিশ্রুতিতে ঐক্যবদ্ধ। কোনো সমাজই বিকশিত হতে পারে না, যদি সহিংসতা ও বর্ণবাদকে স্বাভাবিক বলে মেনে নেওয়া হয়, অথবা উগ্র মতাদর্শ নাগরিক জীবনের ভিত্তিকে হুমকির মুখে ফেলে।আমরা উগ্রবাদের জন্ম দেয় এমন সব পরিস্থিতি মোকাবিলার অঙ্গীকার করছি এবং শিক্ষা, সুযোগ সৃষ্টি ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাকে স্থায়ী শান্তির ভিত্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।আমরা ঘোষণা করছি যে, ভবিষ্যতের যেকোনো বিরোধ আমরা বলপ্রয়োগ বা দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের পরিবর্তে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করব। আমরা স্বীকার করি, মধ্যপ্রাচ্য আর দীর্ঘ যুদ্ধ, স্থগিত আলোচনা বা অসম্পূর্ণ শান্তিচুক্তির পুনরাবৃত্তি সহ্য করতে পারে না। গত দুই বছরের ট্র্যাজেডিগুলো আমাদের জন্য একটি কঠোর শিক্ষা— ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অতীতের ব্যর্থতার চেয়ে আরো ভালো ভবিষ্যতের দাবিদার।আমরা সহনশীলতা, মর্যাদা ও প্রতিটি মানুষের জন্য সমান সুযোগ কামনা করি, যাতে এই অঞ্চলটি এমন এক জায়গায় পরিণত হয়, যেখানে জাতি, ধর্ম বা বর্ণ নির্বিশেষে সবাই শান্তি, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সঙ্গে তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে। আমরা পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও যৌথ নিয়তির নীতির ভিত্তিতে এই অঞ্চলে শান্তি, নিরাপত্তা ও যৌথ সমৃদ্ধির একটি বিস্তৃত দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করছি।আরো বলা হয়েছে, এই চেতনা থেকেই আমরা গাজা উপত্যকায় ব্যাপক ও টেকসই শান্তি ব্যবস্থার অগ্রগতি এবং ইসরায়েল ও তার প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ পারস্পরিকভাবে উপকারী সম্পর্কের বিকাশকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাই। আমরা এই অর্জন বাস্তবায়ন ও টিকিয়ে রাখতে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার করছি, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শান্তিতে একসঙ্গে উন্নতি করতে পারে এমন এক দৃঢ় প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি তৈরি হয়। আমরা স্থায়ী শান্তির ভবিষ্যতের প্রতি নিজেদের সম্পূর্ণভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ করছি।ইসরায়েলে ঝটিকা সফরে গিয়ে দেশটির পার্লামেন্টে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রশংসা করেছেন ট্রাম্প। এরপর তিনি গাজা শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে মিসরে যান। সেখানে তিনি এবং মিসর, কাতার ও তুরস্কের নেতারা গাজা চুক্তির জিম্মাদার হিসেবে ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন।শার্ম আল-শেখের রিসোর্টে ট্রাম্প বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বলেন, এটি বিশ্বের ও মধ্যপ্রাচ্যের জন্য একটি অসাধারণ দিন।ট্রাম্প স্বাক্ষর করার আগে দুবার ‘এটি টিকে থাকবে’ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, নথিতে নিয়ম-কানুন ও আরো অনেক কিছু স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে।গাজা যুদ্ধের অবসানে ট্রাম্পের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সোমবার হামাস উপত্যকায় দুই বছর ধরে তাদের কাছে জিম্মি থাকা ইসরায়েলিদের সর্বশেষ ২০ জনকে জীবিত অবস্থায় ফেরত দিয়েছে।ইসরায়েলের কারা বিভাগ জানিয়েছে, এর বিনিময়ে ইসরায়েল তাদের কারাগারে থাকা ১ হাজার ৯৬৮ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে।ইসরায়েলি পার্লামেন্টে উপস্থিত হলে দীর্ঘক্ষণ ধরে করতালির মাধ্যমে ট্রাম্পকে স্বাগত জানানো হয়। সেখানে ভাষণে ট্রাম্প আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশে বলেন, ৭ অক্টোবর (২০২৩) থেকে চলতি সপ্তাহ পর্যন্ত ইসরায়েল যুদ্ধে জড়িয়েছিল। এই যুদ্ধের ভার বহন করা কেবল গর্বিত কোনো জাতি ও বিশ্বস্ত জনগণই সহ্য করতে পারে।তিনি আরো বলেন, এই ভূখণ্ডের পরিবারগুলোতে বছরের পর বছর ধরে সত্যিকারের শান্তিময় একটি দিনও আসেনি। শুধু ইসরায়েলিদের জন্যই নয়, ফিলিস্তিনিদের এবং আরো অনেকের জন্য দীর্ঘ ও বেদনাদায়ক দুঃস্বপ্নের অবশেষে অবসান ঘটেছে।জিম্মি পরিবারগুলোর সমর্থনে তেল আবিবে জমায়েত বিপুলসংখ্যক লোকজন জিম্মি মুক্তির খবরে উল্লাস করেছে, অনেকে আনন্দে কান্নায় ভেঙে পড়েছে এবং সমবেতভাবে গানও গেয়েছে।অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লায় বন্দিদের বহনকারী বাসগুলো পৌঁছালে তাদের স্বাগত জানাতে জনতা ভীড় জমায়। এ সময় অনেকে ‘আল্লাহু আকবার’ স্লোগান দেয়।গাজার খান ইউনিসে বন্দিদের বহনকারী ধীর গতির রেড ক্রস বাসগুলো পৌঁছালে অপেক্ষমাণ স্বজনরা তাদের প্রিয়জনদের উষ্ণ আলিঙ্গনের মাধ্যমে স্বাগত জানাতে শুরু করে।ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ একাধিক পোস্টে জিম্মিদের ফিরে আসায় স্বাগত জানিয়েছে।যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীনে হামাসের হাতে জিম্মি অবস্থায় মারা যাওয়া ২৭ জনের মৃতদেহ এবং এর আগে গাজায় সংঘাতের সময় ২০১৪ সালে নিহত একজন সৈন্যের দেহাবশেষও ফিরিয়ে দেওয়ার কথা রয়েছে।ইসরায়েল সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা হামাস কর্তৃক রেড ক্রসের কাছে হস্তান্তর করা দুই বন্দির মৃতদেহ পেয়েছে এবং তারা এখনো আরো দুজনের দেহাবশেষ ফেরত পাওয়ার আশা করছে।২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার সময় ২৫১ জনকে জিম্মি করে হামাস। ওই হামলায় ১ হাজার ২১৯ জন নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। ৪৭ জন ছাড়া বাকি সব জিম্মিকে এর আগের যুদ্ধবিরতিতে মুক্তি দেওয়া হয়। গাজায় যুদ্ধবিরতি চালুতে সেখানকার মানুষের মনে স্বস্তি এসেছে। তবে, যুদ্ধের ফলে বেশিরভাগ অঞ্চলই ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে মুক্তি পাওয়া ২৫ বছর বয়সী ইউসুফ আফানা খান ইউনিসে এএফপিকে বলেন, সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হলো-আমার পুরো পরিবার আমাকে স্বাগত জানাতে জড়ো হয়েছে। আমি ১০ মাস কারাগারে কাটিয়েছি। আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন দিনগুলোর অন্যতম এসব দিন।ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফরের লক্ষ্য হলো, গত সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি চুক্তিতে মধ্যস্থতায় তার ভূমিকা উদযাপন করা। তবে, এখনো অনেক কিছু নিয়ে আলোচনা বাকি রয়েছে।সম্ভাব্য বাধাগুলোর মধ্যে রয়েছে— হামাসের নিরস্ত্রীকরণে অস্বীকৃতি ও বিধ্বস্ত অঞ্চল থেকে সম্পূর্ণ প্রত্যাহারে ইসরাইলের প্রতিশ্রুতি না পাওয়া।ট্রাম্প সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে গাজার জন্য একটি ২০ দফা পরিকল্পনা ঘোষণা করেন, যা যুদ্ধবিরতি আনতে সহায়তা করে।হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাসেম সোমবার ট্রাম্প ও গাজা চুক্তির মধ্যস্থতাকারীদের ‘ইসরায়েলের আচরণ পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখার এবং তাদের জনগণের বিরুদ্ধে আগ্রাসন পুনরায় শুরু না করার বিষয়টি নিশ্চিত করার’ আহ্বান জানান।হামাস-নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুসারে, গাজায় ইসরায়েলের অভিযানে কমপক্ষে ৬৭ হাজার ৮৬৯ জন নিহত হয়েছে। জাতিসংঘ এই তথ্য বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করে।তথ্যটি বেসামরিক ও যোদ্ধাদের মধ্যে পার্থক্য করে না। তবে ইঙ্গিত দেয় যে-নিহতদের অর্ধেকেরও বেশি নারী ও শিশু।

এ বিভাগের আরো খবর