দীর্ঘ দুই বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ইসরায়েল-হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। এই যুদ্ধবিরতির প্রধান শর্ত হচ্ছে গাজা থেকে স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসকে নির্মূল করা।
অন্যদিকে, ফিলিস্তিনিরা তাদের শাসনভার কোন বিদেশি শাসকের হাতে দিতে নারাজ। এক্ষেত্রে গাজায় হামাস গাজায় ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রপতি মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষের (পিএনএ) সঙ্গে যুক্ত হতে নতুন একটি প্লাটফর্ম খুলতে চায়। খবর তাসের।
আল আরাবিয়া টেলিভিশন চ্যানেল হামাসের একজন প্রতিনিধির বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে। হামাসের ওই নেতা বলেন, আমরা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন শাখা খুলতে প্রস্তুত।
হামাসের বর্তমানে পিএনএর সঙ্গে কোন সংঘাতের ইচ্ছা নেই। হামাস আন্দোলন বিশ্বাস করে যে গাজা উপত্যকায় স্বাধীনতাকামী যোদ্ধাদের নিরস্ত্রীকরণের বিষয়টি অতিরঞ্জিত এবং দ্রুত এটি সমাধান করা হবে।
নাম প্রকাশ না করে এক হামাস নেতা বলেন, নিরস্ত্রীকরণ একটি জটিল সমস্যা, তবে আমরা একটি সমাধান খুঁজে বের করব।
তিনি উল্লেখ করেন, অস্ত্র সমর্পণ এবং গাজা উপত্যকার ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থা সম্পর্কিত বিষয়গুলি জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে আলোচনা করা উচিত।
সোমবার হামাস এবং অন্য ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় ২০ জন জীবিত ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে। একই সঙ্গে চারজন নিহত জিম্মির মৃতদেহও হস্তান্তর করেছে।
রেডক্রসের মাধ্যমে জিম্মিদের ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং তারা ইতোমধ্যেই ইসরায়েলের ভূখণ্ডে চলে গেছে।
এর পরিবর্তে, ইসরায়েল ১ হাজার ৯৬৮ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে, যার মধ্যে ২৫০ জন যাবজ্জীবন বা দীর্ঘ কারাদণ্ড ভোগ করছেন।
যুদ্ধবিরতি চুক্তি উপলক্ষে সোমবার মিশরের শার্ম আল-শেখে একটি শান্তি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। মিসরের রাষ্ট্রপতি আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি, কাতারি আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান ফিলিস্তিনি ছিটমহল গাজায় একটি চূড়ান্ত যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
মিশরের রাষ্ট্রপতি আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির কার্যালয় থেকে প্রকাশিত একটি নথি অনুসারে, সম্মেলনে ট্রাম্পের পরিকল্পনার পরবর্তী পর্যায়গুলি বাস্তবায়নের জন্য, বিশেষ করে গাজা উপত্যকার প্রশাসনের অবকাঠামো পুনরুদ্ধার এবং ছিটমহলের রাজনৈতিক পরিস্থিতির মতো বিষয়গুলি বাস্তবায়নের জন্য ব্যবস্থা সম্পর্কে পরামর্শ আয়োজনের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০০৫ সালে ইসরায়েল গাজা উপত্যকা থেকে তার সৈন্য প্রত্যাহার করে এবং ইহুদি বসতিগুলি খালি করে। গাজার নিয়ন্ত্রণ পিএনএ-এর কাছে হস্তান্তর করা হয়, যা পশ্চিম তীরও পরিচালনা করে।
এরপর প্রথম ফিলিস্তিনি সংসদীয় নির্বাচনে, হামাস বিজয়ী হয়ে সেখানে মধ্যপন্থি ফাতাহ আন্দোলনের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, যার ফলে উপদলগুলির মধ্যে বিভক্তি দেখা দেয়।
পরে হামাস উপত্যকার ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে, যখন তাদের বিরোধীরা পশ্চিম তীরে ক্ষমতা ধরে রাখে। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট এবং তার সমর্থকরা নিয়মিতভাবে গাজার ওপর ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের শাসন পুনরুদ্ধারের ইচ্ছা পোষণ করতেন।