তোশাখানা দুর্নীতি মামলায় পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খানের কারাদণ্ডাদেশ স্থগিত করেছে দেশটির আদালত। তবে এখনই মুক্তি মিলছে না। এক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে আছে সরকারি গোপন তারবার্তা ফাঁস মামলা (সাইফার মামলা)।
মঙ্গলবার ইমরান খানের সাজা স্থগিত করে নতুন আদেশ দেয় ইসলামাবাদ হাইকোর্ট। সাজা স্থগিতের এ রায় পাকিস্তানের রাজনৈতিক অঙ্গনে ইমরানের জন্য একটি বড় রাজনৈতিক বিজয় হিসেবে দেখছেন দেশটির রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
তবে তোশাখানা মামলার সাজা স্থগিত হলেও এখনই মুক্তি মিলছে না পাকিস্তানের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর। সরকারি গোপন তারবার্তা ফাঁস মামলায় ৩০ আগস্ট তাকে আদালতে উপস্থাপনের কথা রয়েছে। ফলে ইমরানকে কারাবন্দি রাখতে অ্যাটক কারাগারে একটি চিঠি দিয়েছে দেশটির সম্প্রতি প্রতিষ্ঠিত সরকারি গোপন নথি আইন-সংক্রান্ত বিশেষ আদালত।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন-এ প্রকাশিত চিঠিতে ওই আদালতের বিচারক হাসনাত মুহাম্মদ জুলকারনাইন বলেছেন, অভিযুক্ত ইমরান খান নিয়াজিকে, যিনি ইতোমধ্যে বিভাগীয় জেলে বন্দি, বিচারিক রিমান্ডে রাখার নির্দেশ দেয়া হলো।
এর আগে সরকারি কোষাগার তোশাখানার মালামাল নিয়মবহির্ভূতভাবে কেনাবেচার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে ৫ আগস্ট ইমরানকে তিন বছরের কারাদণ্ড ও এক লাখ পাকিস্তানি রুপি জরিমানা করে ইসলামাবাদের একটি জেলা ও দায়রা আদালত। আগামী পাঁচ বছর কোনো নির্বাচনে তিনি অংশ নিতে পারবেন না বলেও রায়ে বলা হয়।
দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় তাকে আসন্ন নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করে দেশটির নির্বাচন কমিশন।
রায় ঘোষণার পরপরই লাহোরের জামান পার্কের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার হন ইমরান খান। তারপর থেকে তিনি পাঞ্জাবের অ্যাটক কারাগারে বন্দি রয়েছেন।
পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন ইমরান খান ও তার রাজনৈতিক দল পিটিআই। ২৫ আগস্ট ইমরান খানের আইনজীবী লতিফ খোসা আদালতে ইমরান খানের বিচারিক প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ওইদিন তিনি বলেন, তোশাখানা নিয়ে পিটিআই প্রধানের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন যে মামলা করেছে, এর কোনো বৈধতা নেই। তাছাড়া বিচার চলাকালে বিচারিক প্রক্রিয়াও যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়নি। ইমরান খানকে আত্মপক্ষ সমর্থনেরও সুযোগ দেয়া হয়নি। এমনকি তার পক্ষে কোনো সাক্ষীর জবানবন্দি পর্যন্ত নেয়া হয়নি।
সোমবার (২৮ আগস্ট) এ ব্যাপারে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে শুনানি হয়। শুনানিতে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী আমজাদ পারভেজ ইমরানের কারাদণ্ড বহাল রাখতে যুক্তি উপস্থাপন করেন।
শুনানি শেষে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি আমির ফারুক এবং বিচারক তারিক মেহমুদ জাহাঙ্গিরিকে নিয়ে গঠিত দুই সদস্যের বেঞ্চ ঘোষণা দেয়, মঙ্গলবার সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
মঙ্গলবার ওই রায়ে আদালত বলেন, ইমরান খানের আবেদন অনুমোদন করা হয়েছে। তোশাখানা মামলায় তার বিরুদ্ধে দেয়া কারাদণ্ডাদেশ স্থগিত করা হলো।
অপরদিকে ২৫ আগস্ট পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট এক পর্যবেক্ষণে জানায়, ইমরানের বিরুদ্ধে যে রায় দেয়া হয়েছে তাতে গুরুতর ত্রুটি ছিল। সে সময় দেশটির সুপ্রিম কোর্ট জানায়, ইসলামাবাদ হাইকোর্ট এই রায়ের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেটি দেখে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
২০২২ সালের এপ্রিলে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতাচ্যুত হন ইমরান খান। অনাস্থা ভোটের আগে পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে চেয়েছিলেন তিনি। তারপর পিটিআই প্রধানের বিরুদ্ধে বেশকিছু মামলাও হয়। এরই ধারাবাহিকতায় তোশাখানা দুর্নীতি মামলায় তাকে কারাদণ্ড দেয় পাকিস্তানের একটি আদালত।
এ বছরের নভেম্বরে পাকিস্তানে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। তবে নভেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার ব্যাপারে অনিশ্চয়তার কথাও জানিয়েছে দেশটির বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নতুন জনশুমারির ভিত্তিতে সংসদীয় সীমানা পুনর্নির্ধারণ ও কাজটি সময়সাপেক্ষ হওয়ার অজুহাত দিয়েছে আনোয়ারুল হক কাকারের তত্ত্বাবধায়ক সরকার।