তোশখানা মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) পার্টির সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ৫ বছরের জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণে অযোগ্য ঘোষণা করেছে দেশটির নির্বাচন কমিশন (ইসিপি)।
এক বিবৃতিতে দেশটির নির্বাচন কমিশন জানায়, দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে তিন বছরের সাজা হওয়ায় পাকিস্তানের নির্বাচন আইন ২১৭-এর ১৬৭ ধারার অধীনে নির্বাচন করার যোগ্যতা হারিয়েছেন তিনি। ফলে নির্বাচন আইন ২০১৭-এর ২৩২ ধারার সঙ্গে পাকিস্তানের সংবিধানের ৬৩ (১) (এইচ) ধারার অধীনেও নির্বাচনে অংশগ্রহণে অযোগ্য হয়েছেন ইমরান।
সেইসঙ্গে দেশটির সংসদের-৪৫ কুররাম-১ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্যের পদ থেকেও তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
শনিবার (৫ আগস্ট) পাকিস্তানের বহুল আলোচিত তোশাখানা দুর্নীতি মামলায় পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে দোষী সাব্যস্ত করে তিন বছরের কারাদণ্ড দেন ইসলামাবাদের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারক হুমায়ুন দিলাওয়ার। সেইসঙ্গে তাকে করা হয়েছে ১ লাখ টাকা জরিমানাও।
প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে রাষ্ট্রীয় সফরে বিদেশ ভ্রমণের সময় তিনি বিভিন্ন রাষ্ট্র ও বিশিষ্টজনদের কাছ থেকে পাওয়া ১৪ কোটি পাকিস্তানি রুপি মূল্যের উপহার সামগ্রী বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ আনা হয়। প্রধানমন্ত্রী হয়েও রাষ্ট্রীয় কোষাগারের সম্পদ বিক্রি করে তিনি তার পদের অপব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগে বলা হয়।
আদালতের রায়ের পর তিনি বর্তমানে পাঞ্জাবের অটোক জেলে বন্দি রয়েছেন। ইমরানের আইনজীবী নাইম হায়দার পাঞ্জোথার দাবি, দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী কারাগারে তৃতীয় শ্রেণির সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। কারাগারে খুবই খারাপ পরিবেশের মধ্যে রাখা হয়েছে তাকে। ইমরানকে প্রথম শ্রেণির সুবিধা ও অটোক থেকে আদিয়ালা কারাগারে স্থানান্তেরের জন্য ইসলামাবাদ হাইকোর্টে একটি পিটিশনও দাখিল করেছেন তিনি।
এ ছাড়া দায়রা আদালতের রায়কে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে তা বাতিলের দাবিতে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছে পিটিআই। বুধবার দেশটির সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি আমির ফারুক ও বিচারপতি তারিক মেহমুদ জাহাঙ্গিরির সমন্বয়ে গঠিত দুই সদস্যের বেঞ্চে পিটিশনের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
তোশখানা মামলা কী
তোশখানা একটি ফারসি শব্দ যার অর্থ ‘গুপ্তধন ঘর’। গত শতকের সত্তরের দশকে পাকিস্তানের সরকারি সম্পত্তি সংরক্ষণের জন্য তোশখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। সরকারের এ বিভাগটি দেশটির রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, আইনপ্রণেতা ও সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধান ও অন্যান্য বিশিষ্টজনদের দেয়া উপহার জমা রাখে।
তোশখানার নিয়ম অনুযায়ী, উল্লেখ্য কর্মকর্তাদের পাওয়া সব উপহার অবশ্যই এ বিভাগে জমা দিতে হয়। তবে যারা এসব উপহার পান, পরে সেগুলো এখান থেকে স্বল্পমূল্যে কিনে নিতে পারেন। তোশখানা থেকে কিনে নেয়া উপহারগুলো পরে বিক্রি করা অবৈধ না হলেও অনেকেই একে অনৈতিক কাজ হিসেবে দেখেন।
ইমরান খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে প্রাপ্ত উপহার সামগ্রী তিনি খুবই কম মূল্যে তোশখানা থেকে কিনে তা চড়া দরে খোলা বাজারে বিক্রি করেছেন। বিক্রি করা উপহার সামগ্রীর মধ্যে ছিল যুক্তরাজ্যের রাজ পরিবার থেকে দেয়া ঘড়ি যা তিনি দুবাইয়ে বিক্রি করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে।
অভিযোগের ভিত্তিতে পাকিস্তানের জাতীয় সংসদের স্পিকার রাজা পারভেজ আশরাফ বিষয়টি তদন্ত করতে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেন।
২০২২ সালের অক্টোবরে নির্বাচন কমিশন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে ইসলামাবাদের একটি আদালতে মামলা করে। মামলার অভিযোগে তখন বলা হয়, রাষ্ট্রীয় তোশাখানা থেকে বিদেশি বিশিষ্টজনদের দেয়া উপহার কিনলেও নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া সম্পদ বিবরণীতে সেগুলোর উল্লেখ করেননি দেশটির সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী।