পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
মঙ্গলবার দুপুরে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে আল-কাদির ট্রাস্ট মামলাসহ একাধিক মামলায় জামিন চাইতে যাওয়ার সময় আদালত প্রাঙ্গণ থেকে গ্রেপ্তার হন তিনি। খবর আল জাজিরার।
দেশটির ন্যাশনাল অ্যাকাউন্ট্যাবিলিটি ব্যুরো (এনএবি) মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আল-কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতির অপরাধে’ সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ খান বলেন, ‘দুর্নীতি দমন সংস্থার একটি মামলায় পিটিআই নেতা ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এক টুইটে পাক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘অসংখ্যবার নোটিশ দেয়া স্বত্ত্বেও তিনি (ইমরান খান) মামলার শুনানিতে হাজির হননি। সরকারি কোষাগারের হিসেব গরমিলের অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করেছে এনএবি। তবে তার প্রতি কোনো অন্যায় আচরণ করা হয়নি।’
আল-কাদির ট্রাস্ট মামলা আসলে কী
গত বছরের জুনে আল-কাদির বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্ট মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে। সে সময় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণে পাকিস্তানের এক ধনকুবের (মালিক রিয়াজ) ইমরান খান ও তার স্ত্রীর ট্রাস্টে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের জমি দান করেন।
এনএবি’র অভিযোগ, ওই রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী ট্রাস্টের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন করে ২৩৯ মিলিয়ন ডলারের বেশি রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে রিয়াজ ‘কালো টাকা’ বিষয়ক একটি তদন্তের সময় যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সিকে ২৩৯ মিলিয়ন ডলারের সম্পত্তি হস্তান্তরে সম্মত হন।
তবে সে সময় ইমরান খান ও পিটিআই সরকার ওই মামলায় সরাসরি জড়িত ছিলেন না।
প্রক্রিয়া সঠিকভাবে অনুসরণ করা হয়নি
ইমরান খানকে গ্রেপ্তারে অবৈধ পন্থা অবলম্বন করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তার আইনজীবী আবুজার সালমান নিয়াজি। তিনি বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করতেই গত বছর আইনে সংশোধনী আনা হয়।’
‘নতুন সংশোধনী অনুসারে, অভিযুক্তকে একাধিকবার নোটিশ দিতে হবে। তারপরও সে যদি আইনি কাজে সহযোগিতা করতে ব্যর্থ হয় বা ইচ্ছাকৃতভাবে গ্রেপ্তার এড়ানোর চেষ্টা করে, তবেই তার নামে সমন জারি হবে।’
নিয়াজি বলেন, ‘এনএবি চেয়ারম্যান আগে কোনো আসামীকে ধরতে ইচ্ছামতো ক্ষমতার ব্যবহার করলেও আইনের নতুন সংশোধনীর পর তিনি আর তা করার ক্ষমতা রাখেন না।’
এনএবি’র সাবেক প্রসিকিউটর ইমরান শফিকও নিয়াজির সুরে সুর মিলিয়েছেন। তিনি বলেন, “একজন অভিযুক্তকে বারবার নোটিশের পরও অনুপস্থিত থাকলে গ্রেপ্তার করা যেতে পারে। কিন্তু সাবেক প্রধানমন্ত্রীর (ইমরান খান) বেলায় তার ‘স্পষ্ট ঘাটতি’ রয়েছে।
“ইমরান খান এনএবি’র নোটিশ বারবার প্রত্যাখান করলেও আইনের নতুন সংশোধনী অনুযায়ী তাকে গ্রেপ্তার করা যায় না। গ্রেপ্তারের আগে অবশ্যই এনএবি’কে সমন জারির বিষয়ে অভিযুক্তকে জানাতে হবে।”
তাছাড়া নতুন সংশোধনীতে অভিযুক্তর জামিন পাওয়াও সহজ করা হয়েছে বলে জানান প্রসিকিউটর শফিক।
লাহোরভিত্তিক আইনজীবী আসাদ রহিম খান বলেন, ‘ইমরান খানের গ্রেপ্তারের সাথে আইনের খুব একটা সম্পর্ক নেই। বরং ভয় ও নিপীড়নের সাথে রয়েছে গভীর সম্পর্ক।’
২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে পাকিস্তানের সংসদে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে অপসারণের পর দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও ধর্মবিরোধী মন্তব্যের দায়ে ইমরান খানের নামে শতাধিক মামলা হয়েছে।
তবে তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে অস্বীকার করে আসছেন ইমরান খান। তার পাল্টা অভিযোগ, তাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে পাকিস্তানের অন্য সব রাজনৈতিক দলগুলো দেশটির সেনাপ্রধানের সাথে জোট বেঁধেছে। তাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে যুক্তরাষ্ট্রের হাত রয়েছে বলেও দাবি সাবেক পাক প্রধানমন্ত্রীর।