নারীর পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে ইরানে চলা বিক্ষোভে জড়িত থাকার অভিযোগে আরও এক যুবকের প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে।
দেশটির বিচার বিভাগ সম্পর্কিত সংবাদমাধ্যম মিজান নিউজে সোমবার প্রকাশিত খবরে বলা হয়, বিক্ষোভ চলাকালে নিরাপত্তা বাহিনীর দুই সদস্যকে হত্যার দায়ে ২৩ বছর বয়সী মাজেদরেজা রেহনাভার্ডকে ভোরে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করা হয়। রাজধানী তেহরানের মাসহাদে কোনো একটি অজ্ঞাত স্থানে জনসমক্ষে তার ফাঁসি কার্যকর হয়।
গ্রেপ্তারের ২৩ দিনের মধ্যে রেহনাভার্ডের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। ফাঁসির পর রেহনাভার্ডের মাকে কারা কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানিয়েছে। পরে ছেলের কবরের নম্বর জানানো হয় মা-বাবাকে। তাকে দাফন করা হয় বেহেস্ত-এ রেজা কবরস্থানে।
গত ১৭ নভেম্বর আধাসামরিক বাহিনী বাসিজের দুই সদস্যকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগে দুই দিন পর গ্রেপ্তার হন রেহনাভার্ড।
এর আগে বৃহস্পতিবার ২৩ বছর বয়সী আরেক যুবক মোহসেন শেকারির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। আধাসামরিক বাহিনী বাসিজের এক সদস্যকে ছুরি দিয়ে জখম করার অপরাধে তাকে প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।
মোহসেনের পর সোমবার মাজেদরেজার দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফাঁসি কার্যকর করে ইরান সরকার বিক্ষোভকারীদের একটি কড়া বার্তা দিতে চাইছে।
সরকার ও বিচার বিভাগের এমন আচরণে উদ্বেগ জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। তারা সতর্ক করে বলছে, তড়িঘড়ি করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করছে কর্তৃপক্ষ।
দেশটিতে চলা বিক্ষোভে অংশ নেয়ার দায়ে গ্রেপ্তার এক ব্যক্তিকে গত ১৪ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ড দেয় দেশটির একটি আদালত।
দণ্ডপ্রাপ্তের বিরুদ্ধে সরকারি সম্পত্তিতে আগুন দেয়া এবং ‘ঈশ্বরের বিরুদ্ধে শত্রুতার’ অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে তেহরানের রেভল্যুশনারি কোর্টে।
এ ছাড়া জাতীয় নিরাপত্তা এবং জনশৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে পাঁচজনকে ৫-১০ বছর করে কারাদণ্ড দেয় আরেকটি আদালত।
ইরানে পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলনরত এক নারী। ছবি: টুইটার
নরওয়েভিত্তিক ইরান হিউম্যান রাইটস সরকারি প্রতিবেদনের বরাতে বলছে, কমপক্ষে ২০ জন বর্তমানে মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য অভিযোগের মুখোমুখি হচ্ছেন।
হিজাব পরার কঠোর নিয়ম ভঙ্গ করার অভিযোগে গ্রেপ্তার এক তরুণী গত ১৬ সেপ্টেম্বর মারা যান।
মাহসা আমিনি নামে ওই কুর্দি তরুণীর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সেদিনই ইরানের কট্টর শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করে জনগণ।
দ্রুত প্রতিবাদ-বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে গোটা ইরানে, যা এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে ইসলামিক প্রজাতন্ত্রটির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে।
ইরানের মানবাধিকার সংস্থার মতে, নিরাপত্তা বাহিনীর সহিংস দমন অভিযানে ৪৩ শিশু ও ২৫ নারীসহ অন্তত ৩২৬ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন।
হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্ট নিউজ এজেন্সি (এইচআরএএনএ) অবশ্য বলছে, মৃতের প্রকৃত সংখ্যা ৩৩৯। আটক আছেন ১৫ হাজার ৩০০ বিক্ষোভকারী। বিভিন্ন সহিংস ঘটনায় ৩৯ জন নিরাপত্তাকর্মীর মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে।
ইরানের বিচার বিভাগ বলছে, সাম্প্রতিক দাঙ্গায় অংশ নেয়ার জন্য ইতোমধ্যে ২ হাজারের বেশি মানুষকে অভিযুক্ত করা হয়।