পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে প্রবল বর্ষণ ও আকস্মিক বন্যায় ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন নোবেলজয়ী মালালা ইউসুফজাই। রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক বার্তায় তিনি নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং বাস্তুচ্যুত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর প্রতি সংহতি জানান।
তিনি লিখেছেন, ‘পাকিস্তানের গিলগিত-বালতিস্তান থেকে আজাদ জম্মু ও কাশ্মির, বিশেষ করে খাইবার পাখতুনখোয়ার বুনের, সোয়াত, বাজাউর ও শাংলায় যে ভয়াবহ বন্যা আঘাত হেনেছে, তাতে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবারের জন্য আমার হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে।’
মালাকান্দ ডিভিশনের নয়নাভিরাম শাংলা জেলাই মালালার জন্মভূমি। খাইবার পাখতুনখোয়া প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের (পিডিএমএ) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুধু শাংলায়ই ৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া মানসেহরায় ২৩, সোয়াতে ২২, বাজাউরে ২১, বাত্তাগ্রামে ১৫, লোয়ার দিরে ৫ এবং আবোটাবাদে ১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বন্যায় ১১টি বাড়িঘর সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬৩টি। সোয়াতের দুটি ও শাংলার একটি বিদ্যালয়ও ক্ষতির শিকার হয়েছে।
মালালা আরও লিখেছেন, ‘যারা প্রিয়জন, ঘরবাড়ি ও জীবিকা হারিয়েছেন, তাদের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা।’
পাকিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের (এনডিএমএ) তথ্য অনুযায়ী, গত ৪৮ ঘণ্টায় পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে প্রবল মৌসুমি বর্ষণ ও আকস্মিক বন্যায় কমপক্ষে ৩৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৩২৪ জনই খাইবার পাখতুনখোয়ায় মারা গেছেন। বেশিরভাগই আকস্মিক বন্যা ও ঘরবাড়ি ধসে প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন অন্তত ১৩৭ জন।
প্রাদেশিক উদ্ধার সংস্থা জানিয়েছে, নয়টি জেলায় প্রায় দুই হাজার উদ্ধারকর্মী লাশ উদ্ধারের পাশাপাশি ত্রাণ কার্যক্রম চালাচ্ছেন। তবে অব্যাহত বৃষ্টিপাত কাজ ব্যাহত করছে।
উল্লেখ্য, শিক্ষা অধিকার নিয়ে সোচ্চার মালালা চলতি বছরের মার্চে নিজের গ্রাম শাংলার বারকানায় ফিরে যান। ২০১২ সালে সন্ত্রাসী হামলায় গুরুতর আহত হওয়ার পর এটাই ছিল তার জন্মভূমিতে প্রথম প্রত্যাবর্তন। যদিও ২০১৮ সালে পাকিস্তান সফরে এসে তিনি শাংলায় যেতে পারেননি।
স্মরণযোগ্য, ২০১২ সালে সোয়াত উপত্যকায় তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের সন্ত্রাসীরা স্কুল বাসে হামলা চালিয়ে তাকে গুলিবিদ্ধ করে। পরে তাকে যুক্তরাজ্যে নিয়ে যাওয়া হয় চিকিৎসার জন্য। এরপর থেকে তিনি বিশ্বব্যাপী নারী শিক্ষার পক্ষে সোচ্চার হন এবং মাত্র ১৭ বছর বয়সে সর্বকনিষ্ঠ নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী হিসেবে স্বীকৃতি পান।