ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা শহর থেকে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক উচ্ছেদ শুরু করেছে। গতকাল রোববার বিবিসি এ তথ্য জানিয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শনিবার ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় তাঁবুতে থাকা একটি শিশু এবং ত্রাণ প্রত্যাশী লোকজনসহ কমপক্ষে ৪০ জন নিহত হয়েছেন।
বিবিসি জানিয়েছে, গাজা শহরের দক্ষিণ জেইতুন এলাকা থেকে হাজার হাজার বাসিন্দা পালিয়ে গেছে। সেখানে কয়েকদিন ধরে ইসরায়েলি বোমাবর্ষণ ‘বিপর্যয়কর’ পরিস্থিতি তৈরি করেছে বলে শহরের হামাস-নিয়ন্ত্রিত পৌরসভা বিবিসিকে জানিয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ইসরায়েল গাজা শহর থেকে দশ লাখ মানুষকে জোরপূর্বক দক্ষিণে শিবিরে স্থানান্তরিত করার পরিকল্পনা করছে। গাজার বাসিন্দাদের ‘নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য’ যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ছিটমহলের দক্ষিণে স্থানান্তরিত করার আগে রবিবার থেকে তাদের তাঁবু এবং অন্যান্য আশ্রয় সরঞ্জাম সরবরাহ করা হবে।
গত সপ্তাহে ইসরায়েলের যুদ্ধ মন্ত্রিসভা গাজা শহর দখল এবং সেখানকার জনগণকে স্থানচ্যুত করার পক্ষে ভোট দিয়েছিল। এরপর থেকেই মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন শুরু করে ইসরায়েলি সেনারা।
গাজা সিটি পৌরসভার একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, ছয় দিনের টানা ইসরায়েলি বিমান হামলা, গোলাবর্ষণ এবং ধ্বংসযজ্ঞের পর জেইতুনে ইতিমধ্যেই ব্যাপক বাস্তুচ্যুতি ঘটছে।
গাজায় দুর্ভিক্ষে একদিনে ৭ জনের মৃত্যু
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল-সৃষ্ট দুর্ভিক্ষে গত ২৪ ঘণ্টায় অপুষ্টি ও অনাহারে আরও সাত ফিলিস্তিনি মারা গেছেন। রোববার (১৭ আগস্ট) স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মৃত ৭ জনের মধ্যে দুই শিশুও রয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মুনির আল-বুরশ এক বিবৃতিতে বলেন, নতুন এই প্রাণহানির ফলে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে দুর্ভিক্ষজনিত মৃত্যুর সংখ্যা ২৫৮ জনে দাঁড়িয়েছে। এদের মধ্যে ১১০ জন শিশু রয়েছে।
যুদ্ধবিরতির আন্তর্জাতিক আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে ইসরায়েল ২০২৩ সাল থেকে গাজায় নৃশংস গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। অবিরাম বোমাবর্ষণে অঞ্চলটি ধ্বংস হয়ে গেছে এবং খাদ্য সংকটে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। গত ২ মার্চ থেকে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ গাজার সমস্ত সীমান্ত ক্রসিং সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয়। এর ফলে এই অঞ্চলের ২৪ লাখ মানুষের জীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে পড়ে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, অঞ্চলজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা প্রায় ৬২ হাজারে পৌঁছেছে। একই সময়ে দেড় লাখের বেশি বেশি মানুষ আহত হয়েছে। অনেকেই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পরে আছেন।
চলতি বছরের শুরুতে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের পর ২৭ মে থেকে ইসরায়েল জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থাগুলোকে এড়িয়ে গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন-এর মাধ্যমে একটি পৃথক সাহায্য বিতরণ উদ্যোগ শুরু করেছে। এতে সমর্থন দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এই পদক্ষেপ বিশ্বব্যাপী ত্রাণ সম্প্রদায় ব্যাপকভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।
ইসরায়েলি বাহিনী খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রের কাছে জড়ো হওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে শত শত মানুষ নিহত হচ্ছে।
গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য নেতানিয়াহু ও তার প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। উপত্যকাজুড়ে যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলার মুখোমুখি।
গাজার ফিলিস্তিনিদের ভিসা স্থগিত করল যুক্তরাষ্ট্র
ইসরায়েলি আগ্রাসনে ধ্বংসপ্রায় গাজা উপত্যকায় বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের জন্য সব ধরনের ভিসা স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এক্সবার্তায় মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘যে পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বর্তমানে চিকিৎসা ও মানবিক বিবেচনায় অল্পসংখ্যক অস্থায়ী মার্কিন ভিসা প্রদান করা হচ্ছে, তা আমরা পূর্ণ পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পর্যালোচনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত গাজার ফিলিস্তিনিদের ভিসা প্রদান করা স্থগিত থাকবে।’
কয়েক দিন আগে মার্কিন অলাভজনক সংস্থা ‘হিল’-এর সহায়তায় চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসা হয় গাজায় ইসরাইলি অভিযানে গুরুতর আহত ৩ ফিলিস্তিনি শিশু এবং তার পরিবারের সদস্যদের। ১৬ আগস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই তথ্য উল্লেখ করে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন মার্কিন কট্টর ডানপন্থি রাজনৈতিক কর্মী লরা লুমের।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত লরা লুমের এক্সে পোস্ট করা সেই বার্তায় বলেন, ‘কীভাবে ইসলামিক অভিবাসনপ্রত্যাশীদের প্রবেশ করতে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতিতে অগ্রাধিকার পাচ্ছে?’
পোস্টটি দেওয়ার পর সেটির কমেন্ট সেকশনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান পার্টির অনেক নেতা-কর্মী-সমর্থক লরা লুমেরকে সমর্থন এবং ট্রাম্প প্রশাসনের সমালোচনা করে মন্তব্য করা শুরু করেন। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই গাজার ফিলিস্তিনিদের ভিসা প্রদান স্থগিতের বিষয়টি নিশ্চিত করে এক্সবার্তা দেয় মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।