উত্তর কাচিন রাজ্যে মিয়ানমারের সামরিক বিমান হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৮০ হয়েছে। এ ঘটনায় দেশটির ক্ষমতাসীন জেনারেলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। মিয়ানমারে অস্ত্র ও বিমানের জ্বালানি বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছে তারা।
কাচিন ইনডিপেনডেন্টস অর্গানাইজেশনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ছিল রোববার। দিবসটি উদযাপনে রাতে সংগঠনটি কনসার্টের আয়োজন করে। এই আয়োজনেই বিমান হামলা চালায় মিয়ানমারের জান্তা সরকার। বলা হচ্ছে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের পর সবচেয়ে নৃশংস বিমান হামলা এটি।
কাচিন আর্টিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের এক মুখপাত্র সোমবার ফোনে দ্য অ্যাসোসিয়েটডকে জানান, ৮০ জনের মতো নিহত হয়েছেন; আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ।
তিনি বলেন, ‘শুরুতে ৬০ জন নিহত হয়েছেন বলে খবর পেয়েছিলাম। পরে কাচিন ইনডিপেনডেন্টস আর্মির কর্মকর্তাদের ঘনিষ্ঠ সূত্র নিশ্চিত করেছে নিহতের সংখ্যা ৮০।
‘সামরিক বিমান রোববার সন্ধ্যায় চারটি বোমা ফেলে। আয়োজনে সঙ্গীত ও অভিনয়শিল্পীসহ ৩০০ থেকে ৫০০ জনের মতো উপস্থিত ছিলেন। নিহতদের মধ্যে কাচিন সামরিক কর্মকর্তা, সেনা সদস্য, সঙ্গীতশিল্পী, খনির মালিক ও বেসামরিক নাগরিকরা আছেন।’
উত্তরে বিমান হামলার বিশদ বিবরণ স্বাধীনভাবে নিশ্চিত করা না গেলেও কিছু মিডিয়া হামলার পরের ঘটনার ভিডিও পোস্ট করেছে। এতে দেখা যায়, বিধ্বংসী হামলার ধ্বংসপ্রাপ্ত কাঠের কাঠামোগুলো থেকে ধোঁয়া উঠছে।
Some prominent singers/artists said to have been killed/injured in #Myanmar #military air attacks aimed at #Hpakant, Kachin. #Kachin Independence Army has upped its clashes with military since Feb 2021 #coup. #KIA had rejected army's offer of peace talks #WhatsHappeningInMyanmar pic.twitter.com/5ZVKeciA1P
— May Wong (@MayWongCNA) October 24, 2022কাচিন নিউজ গ্রুপ আরও জানিয়েছে, সরকারি নিরাপত্তা বাহিনী আহতদের হাসপাতালে নিতে বাধা দিয়েছে।
বিমান হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা এবং ঘটনাস্থলে মানবিক সংস্থাগুলোকে প্রবেশাধিকার দিতে সামরিক বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
অ্যামনেস্টির ডেপুটি আঞ্চলিক পরিচালক হানা ইয়াং এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা আশঙ্কা করছি, হামলাটি সামরিক বাহিনী বেআইনিভাবে চালিয়েছে। এই হামলায় সশস্ত্র গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বেসামরিক নাগরিকরা হতাহত হয়েছে।
‘সেনাবাহিনী বিরোধীদের বিরুদ্ধে তার চলমান অভিযানে বেসামরিক জীবনের প্রতি নির্মম অবহেলা দেখিয়েছে। এটা বিশ্বাস করা কঠিন যে সামরিক বাহিনী হামলাস্থলে উল্লেখযোগ্য বেসামরিক উপস্থিতি সম্পর্কে জানত না।’
‘অভিযান দরকার ছিল’
মিয়ানমারের সামরিক সরকারের তথ্য অফিস সোমবার বিবৃতিতে নিশ্চিত অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তারা জানিয়েছে, কাচিন ইনডিপেনডেন্টস আর্মির ৯ম ব্রিগেডের সদর দপ্তরে হামলা হয়েছে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এটি ‘প্রয়োজনীয় অপারেশন’ ছিল।
সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে মৃত্যুর সংখ্যাটিকে ‘গুজব’ বলা হয়েছে। কনসার্টে বোমা হামলা এবং এতে গায়ক, শ্রোতার নিহতের বিষয়টিও অস্বীকার করেছে সেনাবাহিনী।
মিয়ানমারে জাতিসংঘের কার্যালয় সোমবার বিবৃতিতে বিমান হামলার ঘটনায় উদ্বিগ্ন জানায়। যুক্তরাষ্ট্রসহ মিয়ানমারের পশ্চিমা দূতাবাসগুলো যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই হামলা বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের নীতি ও বিধিকে সম্মান করার বাধ্যবাধকতাকে অবহেলা করছে।
মিয়ানমারে সহিংসতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনার জন্য অ্যাসোসিয়েশন অফ সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনস (আসিয়ান) এর পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের বিশেষ বৈঠকের ঠিক কয়েকদিন আগে এই ভয়াবহ হামলার খবর এল।