বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আত্মঘাতী ইরানি ড্রোন ‘কামিকাজে’

  •    
  • ১৭ অক্টোবর, ২০২২ ২৩:০৭

সাধাণরত ড্রোন মিসাইল উৎক্ষেপণ শেষে ঘাঁটিতে ফিরে আসে। কামিকাজে ড্রোন ফিরে আসে না। লক্ষ্যবস্তুতে আঘাতের পর সেখানেই এটি ধ্বংস হয়ে যায়। অর্থাৎ এটি আত্মঘাতী।

ইউক্রেনে ভয়াবহ বিমান হামলা শুরু করেছে রাশিয়া। কিয়েভ বলছে, ২৪ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এটা রাশিয়ার অন্যতম প্রাণঘাতী হামলা। বিমান হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত ২৫ জনের প্রাণ গেছে। আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ।

গত ১০ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া হামলাগুলো ইউক্রেনের ১০টি অঞ্চল লক্ষ্য করে চালানো হচ্ছে। ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ বলছে, রুশ মিসাইলের পাশাপাশি ইরানের তৈরি ড্রোন ব্যবহার হচ্ছে হামলায়।

বিস্ফোরক-বোঝাই চালকবিহীন এসব ড্রোনের নাম ‘কামিকাজে’। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে সোমবার এই ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়ে শহরের জ্বালানি স্থাপনাগুলো গুঁড়িয়ে দেয় পুতিন বাহিনী। হামলায় ৪ জন নিহত হয়েছেন বলেও জানায় কিয়েভ শাসকরা।

কিয়েভের মেয়র বলছেন, নিহতদের মধ্যে তরুণ দম্পতিও ছিলেন; স্ত্রী তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।

ইউক্রেনের বিমানবাহিনী দাবি করেছে, দিনভর তারা ৩৭টি ড্রোন ধ্বংস করেছে।

এদিকে রাশিয়ায় ড্রোন সরবরাহের বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছে তেহরান।

কেন এগুলোকে ‘কামিকাজে’ ড্রোন বলা হয়?

জাপানি শব্দ কামিকাজে শব্দটি আত্মঘাতী বোঝাতে ব্যবহার হয়। সাধাণরত ড্রোন মিসাইল উৎক্ষেপণ শেষে ঘাঁটিতে ফিরে আসে। কামিকাজে ড্রোন ফিরে আসে না। লক্ষ্যবস্তুতে আঘাতের পর সেখানেই এটি ধ্বংস হয়ে যায়। অর্থাৎ এটি আত্মঘাতী।

আল জাজিরার প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক অ্যালেক্স গ্যাটোপোলোস বলেন, ‘লক্ষ্য শনাক্ত করার আগে এই অস্ত্রগুলো নির্দিষ্ট অঞ্চলের ওপরে ঘোরাফেরা করতে পারে। এরপর লক্ষ্যে হামলে পড়ে।’

ক্রুজ মিসাইলের মত এগুলো শত শত কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। তবে ক্রুজ মিসাইল ব্যয়বহুল।

গ্যাটোপোলোস বলেন, ‘কামিকাজে ড্রোন একটি সস্তা কিন্তু চমৎকার বিকল্প।’

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলছেন, রাশিয়া ২৪০০টি কামিকাজে ড্রোন কিনেছে। এগুলো দ্রুতই ফুরিয়ে যাচ্ছে।

কোথা থেকে এগুলো আসে?

ইউক্রেন বলছে, ইরান থেকে ড্রোনগুলো আমদানি করেছে রাশিয়া। তেহরানে এগুলো শাহেদ-১৩৬ নামে পরিচিত। বাংলায় অনুবাদ করতে যার অর্থ দাঁড়ায় ‘বিশ্বাসের সাক্ষী’। তবে ‘শহীদ’ হিসেবেও এটিকে অনুবাদ করা যায়।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মাইখাইলো পোদোলিয়াক তেহরানকে ‘ইউক্রেনীয়দের হত্যার’ জন্য দায়ী বলে অভিযুক্ত করেছেন। এ বিষয়ে ক্রেমলিন অবশ্য কোনো মন্তব্য করেনি।

পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর উপস্থিতিকে যুদ্ধের মূল কারণ বলা ইরান রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহের বিষয়টি অস্বীকার করেছে।

প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক গ্যাটোপোলোস বলেন, ‘ড্রোনগুলো রাশিয়ার তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ এ ধরনের সশস্ত্র ড্রোন বিকাশে পিছিয়ে রয়েছে মস্কো।’

লন্ডনের কিংস কলেজের বিশ্লেষক সামির পুরি আল জাজিরাকে বলেন, ‘মস্কো এবং তেহরানের মধ্যে একটা বিক্রয় চুক্তির সম্ভাবনা আছে।

‘এই ড্রোনগুলো ইরান কেনা হয়েছিল এবং যুদ্ধক্ষেত্রে স্থানান্তরিত হয়েছে। আমার মনে হয় ড্রোনগুলোতে আরও কোনো প্রযুক্তি যুক্ত করেছে রাশিয়া। এতে ড্রোনগুলো ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষাকে বিভ্রান্ত করতে পারছে।’

ইউক্রেন যুদ্ধের গতিপথ পরিবর্তন করবে এই ড্রোন?

‘কামিকাজে’ ড্রোনগুলোর দাম ক্রুজ মিসাইলের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। তবে খুব যে সস্তা, তাও না।

বিশ্লেষক সামির পুরি বলেন, ‘এক একটির দাম পড়বে ২০ লাখ ৫৪ হাজার টাকা (প্রায়)। একটা অস্ত্র হিসেবে বিবেচনা করলে দাম নেহাত কম না।’

দি অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে ইউক্রেনীয় বিমান বাহিনীর এক মুখপাত্র জানান, ঝাঁকে ঝাঁকে এসব ড্রোনের ব্যবহার ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষার জন্য শক্ত চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

এই ড্রোনকে ভূপাতিত করতে পারে এমন ব্যবস্থা কিয়েভকে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে পশ্চিমারা। তবে সেসবের বেশিরভাগই এখনও ইউক্রেনে পৌঁছায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, ‘কামিকাজে’ প্রতিহত করার সরঞ্জাম পেতে কিয়েভকে আরও মাসখানেক অপেক্ষা করতে হবে।

পুরি বলেন, ‘যদিও চালকবিহীন বিমানের মোতায়েন ইউক্রেনকে শক্ত চ্যালেঞ্জে ফেলবে, তবে এতে ‘গেম চেঞ্জের’ সুযোগ খুব কম।’

এ বিভাগের আরো খবর