দীর্ঘদিন সামরিক শাসনের অধীনে থাকা মিয়ানমারে অং সান সু চির নেতৃত্বে কিছুদিন গণতন্ত্রের ছোঁয়া থাকলেও সামরিক শাসনের অধীনে আবার এসেছে দেশটি। দেশটির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। নানামুখী আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও বিধি-নিষেধের পরও নিজেদের সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে মিয়ানমার।
বিভিন্ন ফ্রন্টে দেশটির সামরিক বাহিনী লড়ছে। সম্প্রতি আরাকান আর্মির সঙ্গে লড়াইয়ে বেশ কয়েকটি গোলা এসে পড়েছে বাংলাদেশের সীমানার মধ্যেও। তাই আলোচনায় থাকা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সক্ষমতা কতটুকু তা গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারে থাকা তথ্যের আলোকে পাঠকদের জন্য তুলে ধরেছে নিউজবাংলা।
সামরিক সক্ষমতার বিচারে গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের তালিকায় স্থান পাওয়া বিশ্বের ১৪২টি দেশের মধ্যে মিয়ানমারের অবস্থান ৩৯তম। সশস্ত্র বাহিনীতে সদস্য রয়েছে ৪ লাখ।
দেশটির বিমান বাহিনীর বহরে আছে ২৮০টি বিমান। এর মধ্যে কমব্যাট মিশনে সক্ষম যুদ্ধবিমান রয়েছে ৫৫টি। ডেডিকেটেড অ্যাটাক যুদ্ধবিমান রয়েছে ২১টি। দেশটির বিমানবাহিনীতে রয়েছে সুখোই, মিগ-টুয়েন্টিনাইনের মতো রাশিয়ার নির্মিত বিমানের পাশাপাশি রয়েছে পাকিস্তানের তৈরি জেএফ-সেভেন্টিন যুদ্ধবিমান। প্রশিক্ষণ বিমান রয়েছে ৯৩টি, পরিবহন বিমান ২৬টি, হেলিকপ্টার রয়েছে ৮০টি, এর মধ্যে এটাক হেলিকপ্টার ৯টি।
সেনাবাহিনীতে ট্যাংক রয়েছে ৬৬৪টি, সাঁজোয়া যান রয়েছে ১ হাজার ৫৮৭টি, সেলফ প্রপেলড আর্টিলারি ১৯০টি, টাওয়েড আর্টিলারি ১ হাজার ৮৬৯টি ও রকেট প্রজেক্টর ৪৮৬টি।
মিয়ানমারের নৌবাহিনীর মোট ভেসেল রয়েছে ১৫৫টি। এর মধ্যে এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার, হেলিকপ্টার ক্যারিয়ার, ডেস্ট্রয়ার না থাকলেও ফ্রিগেট রয়েছে ৫টি, কর্ভেট রয়েছে ৩টি, সাবমেরিন ১টি, মাইন ওয়ারফেয়ার ২টি, পেট্রল ভেসেল রয়েছে ১৩৩টি। এর মধ্যে রুশ নির্মিত কিলোক্লাসের সাবমেরিনটি ভারত থেকে পেয়েছে মিয়ানমার।
দেশটির বিরুদ্ধে সামরিক প্রকল্প নিয়ে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গেও কাজ করার অভিযোগ রয়েছে। তবে সামরিকভাবে বেশ সক্ষম হলেও মিয়ানমারকে অনেক ফ্রন্টে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে যেতে হচ্ছে।
এদিকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে অর্থ ও অস্ত্র পৌঁছানো ঠেকাতে সদস্য দেশগুলোর আরও বেশি কিছু করা উচিত বলে মনে করছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
শুক্রবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় অভিযোগ করেছে, মিয়ানমারের সেনারা তাদের জনগণকে দমন ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে শাসন করছে।
গত বছরের শুরুর দিকে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে সামরিক অভ্যুত্থান করে সে দেশের সশস্ত্র বাহিনী।
অভ্যুত্থানের পর থেকেই মিয়ানমারের পরিস্থিতি অশান্ত রয়েছে, সেখানে সামরিক বাহিনী ও গণতন্ত্রপন্থিদের মধ্যে সংঘাত চলছে। এরই মধ্যে হাজার হাজার বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে মিয়ানমারের সেনারা।
একের পর এক রায়ে দেশটির গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চিকে কারাদণ্ড দিচ্ছে জান্তা সমর্থিত আদালত।
জাতিসংঘ মিয়ানমারের জান্তা সরকারকে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য অভিযুক্ত করেছে।
জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় প্রতিবেদনে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে আরও বিচ্ছিন্ন করার আহ্বান জানিয়েছে এবং বলেছে যে এটি একটি অর্থবহ ও টেকসই উপায়ে দেশ পরিচালনা করতে ও আর্থিক খাতে গভীর সংকট সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছে।