বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঔপনিবেশিক নৃশংসতার দায়েও অভিযুক্ত রানি এলিজাবেথ

  •    
  • ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১৩:১৪

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর আগে টুইটবার্তায় যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ার কার্নেগি মেলন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক উজু আনিয়া বলেন, ‘আামি শুনেছি একটি লুণ্ঠক, ধর্ষকামী ও গণহত্যা চালানো সাম্রাজ্যের সম্রাজ্ঞী অবশেষে মারা যাচ্ছেন। তার মরণ যাতনা অসহনীয় হয়ে উঠুক।’

ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে শোকের পাশাপাশি ঘৃণা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। তাদের দাবি, ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ৭০ বছর সিংহাসনে থাকা রানির সময়ে সাম্রাজ্যের সহিংসতার শিকার হয় লাখো মানুষ।

রানির মৃত্যুর আগে যুক্তরাজ্যের ঔপনিবেশিক অতীতকে সামনে আনেন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ার কার্নেগি মেলন ইউনিভার্সিটির ভাষাতত্ত্বের অধ্যাপক উজু আনিয়া। তার বরাতে নিউজউইকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৫২-৬০ সময়কালে কেনিয়ায় ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড ও নৃশংসতা চালায় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী বাহিনী। হত্যা করা হয় কয়েক হাজার মানুষকে।

আনিয়াকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ১৯৬০ সালে নাইজেরিয়ায় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অবসানের শেষের দিকে বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর মধ্যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। সে সময় আফ্রিকার দেশটি থেকে জ্বালানি তেলের সরবরাহ অব্যাহত রাখতে যুক্তরাজ্য ক্ষমতাসীন দলকে অস্ত্র-বারুদ দিয়ে সহায়তা করে বলে অভিযোগ রয়েছে। এর দায় এড়াতে পারেন না রাজতন্ত্রের দায়িত্বে থাকা দ্বিতীয় এলিজাবেথও।

রানি এলিজাবেথের গুরুতর অসুস্থতার খবরে টুইটে উজু আনিয়া বলেন, ‘আামি শুনেছি একটি লুণ্ঠক, ধর্ষকামী ও গণহত্যা চালানো সাম্রাজ্যের সম্রাজ্ঞী অবশেষে মারা যাচ্ছেন। তার মরণ যাতনা অসহনীয় হয়ে উঠুক।’

স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় করা টুইটটি টুইটার কর্তৃপক্ষ মুছে দেয়ার আগ পর্যন্ত এটি রিটুইট করেন ১০ হাজারের বেশি মানুষ। এতে লাইক পড়ে ৩৮ হাজারের বেশি।

অন্যদিকে বিশ্বের অন্যতম বিলিয়নিয়ার জেফ বেজস এই টুইটের তীব্র সমালোচনা করেন।

বৃহস্পতিবার দেয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক উজু আনিয়া বলেন, ‘আমি উপনিবেশ ও সাম্রাজ্যবাদে বেড়ে ওঠা সন্তান। আমার মা ত্রিনিদাদে জন্ম নিয়েছিলেন; বাবা নাইজেরিয়ায়। ১৯৫০ সালে যুক্তরাজ্যে তাদের দেখা হয়েছিল। সেখানেই বিয়ে। ঔপনিবেশিকতার অংশ হিসেবে নাইজেরিয়ায় চলে যান তারা।’

‘নাইজেরিয়ায় যেমন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার প্রভাব ছিল, তেমনই ত্রিনিদাদে ছিল দাসত্বের শৃঙ্খল। আমাকে বলতে হচ্ছে, ব্রিটিশরা মানুষকে শুধু উপনিবেশের আওতায় আনেনি, করেছে দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ। এ থেকে মুক্তি পাননি বাবা-মা কিংবা আমি।’

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ইতিহাসের অধ্যাপক ম্যাথিউ স্মিথ বলেন, ‘রানির মৃত্যুর পর নানা মহলে যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে, তাতে ধরে নেয়া যেতে পারে যে, ব্রিটিশ রাজতন্ত্র ও সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে ঔপনিবেশিক বাসিন্দাদের নেতিবাচক সম্পর্ক ছিল।’

লন্ডন থেকে টেলিফোনে দেয়া সাক্ষাৎকারে নিউজউইককে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় সাম্রাজ্যবাদী ও ঔপনিবেশিক শক্তির সমালোচকরা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে নয়, ঘৃণা করেন ব্রিটিশ রাজতন্ত্রকে, যে ব্যবস্থার রন্ধ্রে রন্ধ্রে রয়েছে নিষ্পেষণ ও শোষণের ইতিহাস। এই ব্যবস্থার সঙ্গে ঔপনিবেশিক দেশগুলো থেকে প্রাকৃতিক সম্পদ লুট, নিপীড়ন, জোরপূর্বক দাসত্ব (বিশেষ করে আফ্রিকা থেকে) ও রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের সরাসরি যোগসাজশ রয়েছে।’

রানির মৃত্যুতে শোক জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে সাউথ আফ্রিকার বামপন্থি রাজনৈতিক দল ইকনোমিক ফ্রিডম ফাইটার্স (ইএফএফ)।

ইএফএফের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘১৯৫২ সালে ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের দায়িত্ব নেয়া দ্বিতীয় এলিজাবেথ তার সময়কালে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের নিপীড়ন, গণহত্যার দায় এড়াতে পারেন না। আমরা তার মৃত্যুতে শোক জানাতে পারি না, কারণ তার রাজত্বকালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তি গোটা আফ্রিকায় বর্বরতা ও নৃশংসতা চালিয়েছে।’

ক্যারিবীয় দেশ বারবাডোজ এক বছর আগে দেশটিতে এলিজাবেথের রানির পদমর্যাদা বাতিল করে। একই সঙ্গে বার্বাডোজকে প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এ অঞ্চলের অন্য দেশ জামাইকাও রানি এলিজাবেথকে দেয়া রাষ্ট্রীয় শীর্ষ পদ কেড়ে নিয়ে পূর্ণ স্বাধীনতা ঘোষণার পথে রয়েছে।

ব্রিটিশ ইতিহাসে দীর্ঘতম রাজত্বের অবসান ঘটিয়ে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মৃত্যু হয় রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের। স্কটল্যান্ডের বালমোরাল ক্যাসেলে তার মৃত্যুশয্যায় পাশে ছিলেন পরিবারের সদস্যরা।

বামমোরাল ক্যাসেল থেকে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে রানির কফিন আনার পরই শেষকৃত্যের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে।

এ বিভাগের আরো খবর