চীনের মূল ভূখণ্ড থেকে দেশটির বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হংকংয়ে আশ্রয় নেয়া শীর্ষ ধনী জিয়াও জিয়ানহুয়াকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে বেইজিং।
সাংহাই ফার্স্ট ইন্টারমিডিয়েট কোর্ট এক বিবৃতিতে বলেছে, জিয়াও এবং তার প্রতিষ্ঠান টুমোরো হোল্ডিংসকে প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলার আত্মসাতের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
২০১৭ সালে চীনের অনেক ধনকুবেরের মধ্যে জিয়াও হংকংয়ে চলে যান। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীদের ওপর দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং প্রশাসনের কঠোর অভিযানের সময় হংকংয়ে পালিয়ে সেখানে পাঁচ তারকা হোটেল ফোর সিজনসে ব্যক্তিগত অ্যাপার্টমেন্টে বসবাস শুরু করেন তিনি।
বেইজিংয়ের আদালত জানায়, জনসাধারণের আমানত বেআইনিভাবে আত্মসাৎ করা, অর্পিত সম্পত্তি ব্যবহারে বিশ্বাসঘাতকতা করা, তহবিলের অবৈধ ব্যবহার এবং ঘুষ দেয়ার অভিযোগে এই সাজা দেয়া হয়।
জিয়াওকে ৬.৫ মিলিয়ন ইউয়ান (সাড়ে ৯ লাখ ডলার) এবং টুমোরো হোল্ডিংসকে ৫৫ বিলিয়ন ইউয়ান (৮.১ বিলিয়ন ডলার) জরিমানা করা হয়েছে।
আদালত আরও জানায়, ‘টুমোরো হোল্ডিংস এবং জিয়াও জিয়ানহুয়ার অপরাধমূলক কাজগুলো আর্থিক ব্যবস্থাপনা আদেশকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার পাশাপাশি দেশের আর্থিক নিরাপত্তাকে মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত ও রাষ্ট্রীয়কর্মীদের ঐক্যকে গুরুতরভাবে লঙ্ঘন করেছে। আইন অনুযায়ী তাদের এমন শাস্তি দেয়া হয়েছে।’
এদিকে জিয়াও এবং টুমোরো হোল্ডিংস কর্তৃপক্ষ তাদের অপরাধ স্বীকার করেছে এবং বেইজিংকে তাদের সম্পদ পুনরুদ্ধারে সহায়তার পাশাপাশি নমনীয় শাস্তির আবেদন জানিয়েছে।
জিয়াও চীনের অন্যতম ধনী ব্যক্তি এবং টুমোরো গ্রুপকে নিয়ন্ত্রণ করতেন। এটি একটি বিশাল হোল্ডিং কোম্পানি যার ব্যাংক, বীমাকারী এবং নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশীদারত্ব রয়েছে।
চীনের সম্পদ বিশ্লেষণকারী হুরুনের তথ্য অনুযায়ী, জিয়াও-এর মোট সম্পদ ৬ বিলিয়ন এবং ২০১৬ সালে ফোর্বসের তালিকার দেশটির ধনী তালিকায় ৩২তম স্থানে রয়েছে।
চীনের কিছু প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল জিয়াওর। তা সত্ত্বেও ২০১৭ সালে চীনা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা হংকংয়ের ফোর সিজনস হোটেলে তার কক্ষ থেকে তাকে আটক করে চীনের মূল ভূখণ্ডে নিয়ে যান।
অপহরণের বিষয়ে জানা এক ব্যক্তি সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বলেন, ‘হোটেলে দুই ডজন চীনা নিরাপত্তা কর্মকর্তা এবং জিয়াও-এর নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষীদের ধস্তাধস্তি হয়েছিল। সাধারণত প্রতি শিফটে আটজন দেহরক্ষী ছিল জিয়াওর। রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল হওয়ায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক থাকেন তিনি।
ঘটনার পর থেকে চীনে আটক ছিলেন এই ধনকুবের।
চীনের ব্যবসায়ী জিয়াওয়ের কানাডার যৌথ নাগরিকত্ব রয়েছে। তার আটক ও বিচার ইস্যুতে প্রতিবাদ জানিয়েছে কানাডার হাইকমিশন। তবে চীন এতে কোনো জুতসই জবাব দেয়নি।
হংকং থেকে আটক করে নিয়ে কারাদণ্ড দেয়ার এই ঘটনায় অসন্তোষ দেখা গেছে বিভিন্ন মহলে। বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলের ওপর বেইজিংয়ের এমন প্রভাববলয় ও কর্তৃত্ব ভাবিয়েছে অনেককে।