ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের কারণে রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞার পাল্টা জবাব হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাস ও জ্বালানি তেলকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার শুরু করে রাশিয়া। ফিনল্যান্ড, পোল্যান্ড, বুলগেরিয়ার মতো ইউরোপের অনেক দেশেই এরই মধ্যে গ্যাস রপ্তানি বন্ধ করেছে রাশিয়া। নড স্ট্রিম-১ গ্যাস পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দেয়ায় চাপে পড়েছে ইউরোপের বাকি দেশগুলো।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এমন পরিস্থিতিতে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ বিদ্যুৎ ব্যবহার কমাতে ও জ্বালানি সঞ্চয়ের উদ্দেশে এই গরমে সরকারি ও বেসরকারি অফিসের কর্মীদের টাই পরা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
সানচেজ জানিয়েছেন, স্পেন সরকার সোমবার থেকে ‘জরুরি’ জ্বালানি সাশ্রয়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে কারণ ইউরোপীয় দেশগুলো ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রুশ গ্যাসের ওপর নির্ভরতা কমানোর চেষ্টা করছে।
মাদ্রিদের এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন যে তিনিও টাই পরেননি এবং তিনি চান তার মন্ত্রীরা, সরকারি কর্মকর্তারা ও বেসরকারি খাতের কর্মীরাও এমনটা করুক।
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ নিজেও টাই পরেননি
তিনি বলেন, ‘এর মানে হলো আমরা জ্বালানি সঞ্চয় করতে পারব। কর্মীরা শীতল থাকবে (টাই না পরলে), বিদ্যুতের খরচ কমবে, কারণ এয়ারকন্ডিশনগুলো কম ব্যবহার হবে।’
সানচেজের প্রশাসন একটি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ী ডিক্রি জারি করতে যাচ্ছে, যা সোমবার অনুমোদিত হবে বলে আশা প্রকাশ করা হচ্ছে।
গত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ইউরোপে রেকর্ড উচ্চ তাপমাত্রার মধ্যেই শুক্রবার স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদের তাপমাত্রা ছিল ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও গুরুত্বপূর্ণ শহর সেভিলের তাপমাত্রা ছিল ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তবে স্পেনই বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে পোশাকে পরিবর্তন আনার পদক্ষেপ নেয়া প্রথম কোনো দেশ নয়। এর আগে ২০২১ সালে জাপানে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে গরমে অফিস কর্মীরা যাতে হালকা পোশাক পরে এই জন্য ‘সুপার কুল ব্রিজ’ প্রচারাভিযান শুরু করেছিল।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যেও দাবদাহের কারণে রাজনীতিবিদদের বলা হয়েছিল, যে তারা চাইলে হাউস অফ কমন্সে থাকাকালীন তাদের স্যুট জ্যাকেট বাদ দিতে পারে।
আসন্ন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় জার্মানির হ্যানোভার শহরের নগর কর্তৃপক্ষ আবাসিক ভবনগুলোতে গরম পানি বন্ধ করে দিয়েছে এবং ঘর গরম রাখার সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও কমিয়ে আনা হয়েছে।
এর আগে হ্যানোভারের নগর কর্তৃপক্ষ গত সপ্তাহে জানিয়েছিল স্পোর্টস হল, জিম ও পুলসহ আবাসিক ভবনে গরম পানি সরবরাহ বন্ধ করা হবে।
জার্মানির হ্যানোভার শহরে বন্ধ গরম পানি সরবরাহ
এমনকি নতুন নিয়মের অধীনে সরকারি কর্মকর্তাদেরও কাজের সময় ঠান্ডা পানিতে হাত ধুতে হবে।
শহরের বাসিন্দাদের বাড়ির ভেতরে থাকাকালীন ঠান্ডা তাপমাত্রার জন্যও প্রস্তুত হতে হবে। নতুন নিয়মে, ডে-কেয়ার সেন্টারসহ আবাসিক ভবনগুলোতে সর্বাধিক কক্ষ তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে হবে। স্পোর্টস হল ও জিমে ১৫ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রা রাখতে পারবে না।
এর মানে হলো আমরা জ্বালানি সঞ্চয় করতে পারব। কর্মীরা শীতল থাকবে (টাই না পরলে), বিদ্যুতের খরচ কমবে, কারণ এয়ারকন্ডিশনগুলো কম ব্যবহার হবে।
ফোয়ারা, টাউন হল, শহরের জাদুঘর ও অন্যান্য আবাসিক ভবনগুলোর জন্যও যেকোনো বাহ্যিক আলোকসজ্জা বন্ধ থাকবে।
শুধু হ্যানোভার শহরই নয়, জার্মানির ডুসেলডর্ফ শহরেও জ্বালানি সাশ্রয় করার জন্য শরৎ ও শীতেও ঘর গরম রাখার তাপমাত্রা কমানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
রাশিয়া থেকে গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় এরই মধ্যে ইউরোপে গ্যাসের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বার্লিন চাচ্ছে, গ্যাসের চাহিদা কমিয়ে আনতে।