বিক্ষোভের মুখে প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগ করার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেছে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
সোমবার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের কার্যালয় এক বিবৃতিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তারা আনুষ্ঠানিকভাবে জানাচ্ছে যে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে বুধবার পদত্যাগ করবেন।
তবে রাজাপাকসের কাছ থেকে সরাসরি এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য আসেনি।
শ্রীলঙ্কার সংবিধান অনুসারে, প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ শুধু আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হতে পারে যখন তিনি পার্লামেন্টের স্পিকারের কাছে চিঠি দিয়ে পদত্যাগ করবেন। তবে এটি এখনও হয়নি।
এর আগে স্পিকার ইয়াপা আবেবর্ধনে জানান, প্রেসিডেন্ট তাকে জানিয়েছেন যে বুধবার তিনি প্রেসিডেন্ট পদ থেকে পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন।
ডেইলি মিররের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট এক ব্যক্তিগত বিবৃতিতে স্পিকারের কাছে তার পদত্যাগের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন এবং দাপ্তরিক কিছু কাজ হস্তান্তরের জন্য বুধবার পর্যন্ত তিনি সময় চেয়েছেন।
কিন্তু পদত্যাগের বিষয়টি শতভাগ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভকারীরা ঘরে ফিরতে নারাজ।
এর আগে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে বিধ্বস্ত শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে বিক্ষোভের মুখে শনিবার কলম্বোয় তার সরকারি বাসভবন থেকে পালিয়েছেন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, তিনি সম্ভবত নৌবাহিনীর জাহাজে পালিয়েছেন।
এমন পরিস্থিতিতে কাজ চালিয়ে যেতে চাচ্ছেন না নতুন প্রধানমন্ত্রীও।
তীব্র অর্থনৈতিক মন্দা ও আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহও পদত্যাগ করতে চান বলে জানিয়েছে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর।
এক বিজ্ঞপ্তিতে রনিল বিক্রমাসিংহ জানিয়েছেন, জ্বালানিসংকট নিরসনে ব্যর্থতা এবং এই সপ্তাহে তা আবারও তীব্র হওয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
এখন বুধবারের মধ্যে যদি প্রধানমন্ত্রীও পদত্যাগ করেন, তাহলে স্পিকার ৩০ দিনের জন্য অস্থায়ী প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পাবেন।
এই ৩০ দিনের মধ্যেই পার্লামেন্ট নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবে।
কয়েক মাস ধরেই শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে চরম মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে, মুদ্রাস্ফীতিও আকাশছোঁয়া। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন মানুষ।
এ অবস্থায় ক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করে দেশটির সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে। একপর্যায়ে রাজাপাকসে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়।
বিক্ষোভ দমাতে এপ্রিলের শুরুতে রাষ্ট্রীয় জরুরি অবস্থা জারি করেন প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে। কিন্তু প্রেসিডেন্টের এমন পদক্ষেপ বিক্ষোভ দমাতে ব্যর্থ হয়। উল্টো মাত্রা আরও তীব্র হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় মে মাসে পদত্যাগ করেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন রনিল বিক্রমাসিংহে।
এই পর্যায়ে দেশজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। নিহত হন এক এমপি। অনেক সাবেক মন্ত্রী-এমপির বাড়ি ও গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী রাজাপাকসের পৈতৃক বাড়িও জ্বালিয়ে দেয়া হয়।