উত্তর-পূর্ব ইউরোপের দেশ লিথুনিয়াকে এবার সরাসরি হুমকি দিলো রাশিয়া। কালিনিনগ্রাদ অঞ্চলে রেলে পণ্য পাঠানো বন্ধ ঘোষণার জেরে দেশটিকে ‘গুরুতর পরিণতি’ ভোগার জন্য সতর্ক করেছে মস্কো।
রুশ নিরাপত্তা কর্মকর্তা নিকোলাই পাত্রুশেভ বলেন, ‘অবশ্যই এই ধরনের বৈরী পদক্ষেপের জবাব দেবে রাশিয়া।’
জবাবে লিথুনিয়া বলছে, তারা কেবল ইউক্রেন ইস্যুতে ইইউর পথ অনুসরণ করছে।
কালিনিনগ্রাদ কৌশলগত এমন একটি অঞ্চল, যেখানে রাশিয়ার বাল্টিক ফ্লিটের সদর দপ্তর অবস্থিত। রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে এই অঞ্চলের কোনো সীমান্ত নেই।
রাশিয়ার পশ্চিমের এই অঞ্চলটি ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানির কাছ থেকে সংযুক্ত করা হয়েছিল। এটির সীমান্ত আছে ইইউ এবং ন্যাটো সদস্য লিথুনিয়া ও পোল্যান্ডের সঙ্গে।
এই অঞ্চলে আনুমানিক ১০ লাখ মানুষের বাস। রাশিয়া ও ইইউ থেকে কাঁচামাল ও খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানির ওপর অনেক বেশি নির্ভর করে তারা। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে কয়লা, ধাতু, নির্মাণসামগ্রী এবং উন্নত প্রযুক্তি।
আঞ্চলিক গভর্নর আন্তন আলিখানভ বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞাটি কালিনিনগ্রাদে আমদানি করা প্রায় ৫০ শতাংশ পণ্যের ওপর প্রভাব ফেলবে।’
কালিনিনগ্রাদে সফরে মঙ্গলবার পাত্রুশেভ বলেছিলেন, পশ্চিমাদের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে ‘আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে’ এ অবরোধ দিয়েছে লিথুনিয়া।
রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের সেক্রেটারি সতর্ক করে বলেছেন, ‘এই আচরণের জবাব অদূর ভবিষ্যতে দেয়া হবে। লিথুনিয়ার জনগণকে এর পরিণতি ভোগ করতে হবে।’
এর আগে মঙ্গলবার এই ইস্যুতে ইইউ রাষ্ট্রদূতকে তলব করে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
লিথুনিয়ান কর্তৃপক্ষ গত সপ্তাহে এক ঘোষণায় জানায়, তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা অনুসরণ করে তাদের ভূখণ্ড দিয়ে কালিনিনগ্রাদে পণ্য সরবরাহ নিষিদ্ধ করবে।
লিথুনিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী গ্যাব্রিলিয়াস ল্যান্ডসবার্গিস বলেন, ‘লিথুয়ানিয়া কিছু করছে না, এটি ইউরোপীয় নিষেধাজ্ঞা। এটি কার্যকর হয়েছে ১৭ জুন থেকে।’
লিথুনিয়া সরকারের সঙ্গে একমত ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ন্যাটো সামরিক জোটের সদস্য হিসেবে লিথুনিয়া সম্মিলিত প্রতিরক্ষা চুক্তিতে দায়বদ্ধ।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেছেন, লিথুনিয়ার পাশে আছে যুক্তরাষ্ট্র। ন্যাটোর অনুচ্ছেদ ৫-এর প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ন্যাটোর সদস্য কোনো রাষ্ট্র আক্রান্ত হলে, সরাসরি সামরিক সহায়তা দিতে পারবে বাকি সদস্য দেশগুলো।
ন্যাটোর এই সদস্যপদ পেতে গিয়েই বিপাকে পড়েছে ইউক্রেন। ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হলে দেশটিতে সামরিক ঘাঁটি গাড়বে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা। ঘরের কাছে শত্রুদের ভিড়তে না দেয়ার লক্ষ্যে ইউক্রেনে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ‘বিশেষ অভিযান’ চালাচ্ছে রাশিয়া।
ন্যাটোভুক্ত না হওয়ায় ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দিয়েই শান্ত থাকতে হচ্ছে পশ্চিমাদের। পাশাপাশি অর্থনৈতিক নানা নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রুশ অর্থনীতি ধসের চেষ্টা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা।