মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে ‘সাহসী লড়াইয়ে’ অবদান রাখার জন্য যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন, সেই পুরস্কারের পদক বিক্রি করে দিয়েছেন রাশিয়ার সাংবাদিক দিমিত্রি মুরাতভ।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে নিলামে ১০৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলারে এই পদক বিক্রি করে যা আয় হয়েছে তার পুরোটাই তিনি ইউক্রেন যুদ্ধে শরণার্থী হওয়া শিশুদের পেছনে ব্যয় করবেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
গত বছর ১০২তম নোবেল শান্তি পুরস্কার পান ফিলিপিন্স আর রাশিয়ায় কর্তৃত্ববাদী শাসনকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে শাসকের রোষের মুখে পড়া দুই সাংবাদিক ফিলিপিন্সের মারিয়া রেসা এবং রাশিয়ার দিমিত্রি মুরাতভ।
সম্মানজনক এই পুরস্কারের অর্থমূল্য এক কোটি সুইডিশ ক্রোনার বা ১১ লাখ মার্কিন ডলার। তাদের বিজয়ী নির্বাচন করা হয় বাছাই করা ৩২৯ জনের তালিকা থেকে।
মুরাতভের পদক কারা কিনে নিয়েছেন তা অবশ্য জানায়নি এই মেডেল নিলামে তোলা প্রতিষ্ঠান হেরিটেজ অকশন।
৬০ বছর বয়সী মুরাতভ রাশিয়ার অনুসন্ধানী সংবাদপত্র নোভায়া গেজেটার প্রধান সম্পাদক। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর এই পত্রিকার কার্যক্রম স্থগিত করে দেন তিনি।
সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্ভাচেভের পর সাংবাদিক দিমিত্রি মুরাতভ হলেন প্রথম রুশ নাগরিক, যিনি শান্তিতে নোবেল পান।
গর্ভাচেভ ১৯৯০ সালে তার নোবেল পুরস্কারের অর্থ দিয়ে নোভায়া গেজেটার পত্রিকাটি প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেছিলেন। সেই টাকায় কেনা একটি কম্পিউটার এখনও পত্রিকাটির অফিসে প্রদর্শনী হিসেবে রাখা আছে।
সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের পর ১৯৯৩ সালে একদল সাংবাদিক নোভায়া গেজেটা প্রতিষ্ঠা করেন, যার মধ্যে একজন মুরাতভ। ২০০০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত তার পত্রিকার ছয়জন সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে হত্যার শিকার হয়েছেন।
হেরিটেজ অকশন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, স্বর্ণের মেডেল বিক্রি করে পাওয়া অর্থ ইউক্রেন থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়া শিশুদের জন্য ব্যয় করা হবে।
সোভিয়েতের পতনের পর নতুন রাশিয়ায় যে আশাবাদ নিয়ে নোভায়া গেজেটা যাত্রা শুরু করেছিল, তা উবে যেতে সময় লাগেনি। ১৯৯৯ সালে ভ্লাদিমির পুতিন রাশিয়ার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সমালোচক আর বিরোধী মতকে ক্রমাগত কোনঠাসা করে ফেলা হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতেও মুরাতভ এবং নোভায়া গেজেটা মুক্তমতের পক্ষে লড়াই করে গেছেন। ক্রেমলিনের দুর্নীতি এবং অনিয়মের খবর তারা প্রকাশ করে গেছেন।
১৯০১ সাল থেকে নোবেল পুরস্কার দেয়া শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত আটজন এই পুরস্কারের পদক বিক্রি করে দেন।
ফ্রান্স ও জার্মানির মধ্যে স্বল্পস্থায়ী এক চুক্তি রূপায়ন করায় ১৯২৬ সালে এই পুরস্কার পান ফ্রান্সেরই আরিস্তিদ ব্রাঁয়া৷ ২০০৮ সালের এক নিলামে তার পদকের দর ওঠে মাত্র ১৩ হাজার ৬৫০ ডলার৷ এখনও পর্যন্ত এটিই সব থেকে স্বল্পমূল্যে বিক্রিত নোবেল পুরস্কারের পদক।
মার্কিন বিজ্ঞানী জেমস ওয়াটসন ১৯৬২ সালে ফ্রান্সিস ক্রিক ও মরিস উইলকিন্সের সঙ্গে চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার পান৷ ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে জীবিত অবস্থাতেই তিনি প্রায় ৪৮ লাখ ডলারে তার পদকটি বেচে দেন৷
১৯৪৯ সালে সাহিত্যে নোবেল জয়ী উইলিয়ম ফকনারের পরিবার ২০১৩ সালে সেই পদক নিলামে চড়িয়েও প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়৷ কারণ তাদের প্রত্যাশিত মূল্য, ৫ লাখ ডলারের ধারেকাছেও ওঠেনি নিলামের দর৷