মাঙ্কিপক্স ভাইরাস এই নামটি বৈষম্যমূলক ও অপমানজনক হওয়ায় এটি পরিবর্তন করে নতুন নাম দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার জেনেভায় বিশ্ব সংস্থাটির মহাসচিব টেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস জানান, ‘আগামী সপ্তাহের মধ্যে নতুন কোনো নাম দেয়া হবে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাস ও এর বিভিন্ন নতুন ধরনগুলোর।’ গত মাসে ভাইরাসটি অন্তত ২০টি দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
সংস্থাটি জানায়, গত সপ্তাহে আফ্রিকাসহ বিশ্বের ৩০ বিজ্ঞানী ভাইরাসটির নাম ‘বৈষম্যমূলক’ বলে উদ্বেগ প্রকাশ করে চিঠি দেন। এর পরই এমন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে সংস্থাটি।
ডব্লিউএইচওর এক মুখপাত্র সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গকে জানান, কোন অঞ্চল বা প্রাণীর নামের সঙ্গে রোগের নাম দেয়ার নিয়ম তাদের নীতিমালায় নেই।
সম্প্রতি ডব্লিউএইচও তাদের ওয়েবসাইটে মাঙ্কিপক্সের দুটি নতুন ধরন তালিকাভুক্ত করেছে। ‘সেন্ট্রাল আফ্রিকান (কঙ্গো বেসিন) ক্লেড’ এবং ‘ওয়েস্ট আফ্রিকান ক্লেড’।
চিঠিতে বিজ্ঞানীরা যুক্তি দেখিয়েছেন, ভাইরাসটির উৎস আফ্রিকায় এবং এটি ‘আফ্রিকান’ হিসেবে উল্লেখ করা শুধু ভুলই নয়, বৈষম্যমূলকও।
তারা বলেন, বিশ্ব গণমাধ্যমে ভাইরাসটির উৎস আফ্রিকা এমনভাবে ব্যাপক মাত্রায় ছড়িয়ে পড়ছে।
গত মে মাসের শুরু থেকে উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপে দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ে মাঙ্কিপক্স।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যখন অনেকটাই কমে এসেছে, তখন বিভিন্ন দেশে এই ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। সাধারণত শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে।
ডব্লিউএইচওর দফায় দফায় বৈঠকে মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ এবং এর ভ্যাকসিন নিয়ে আলোচনা হয়।
মে মাসে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য মিলেছে। এর মধ্যে ৬ মে থেকে ১৮ মে পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে শনাক্ত হয়েছেন ২০ জন। আর শুক্রবার ফ্রান্স, জার্মানি ও বেলজিয়ামে প্রথমবারের মতো ভাইরাস শনাক্ত হয়।
একসময় গুটি বসন্তে আক্রান্ত হয়ে অনেক মানুষ মারা যেত। এ ভাইরাসটি ১৯৮০ সালে পুরোপুরি নির্মূল ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে চিকেন পক্স, এটিকে সাধারণত শৈশবের রোগ হিসেবেই বিবেচনা করা হয়।
চিকেন পক্সে আক্রান্ত হলে জ্বর, মাথাব্যথা, পেশিব্যথা এবং শরীরে ফুসকুড়ি দেখা দেয়। চিকেন পক্স পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য। কয়েক দিনের মধ্যেই আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হয়ে যায়। বর্তমানে ছড়িয়ে পড়া মাঙ্কিপক্সের সঙ্গে গুটি বসন্ত ও চিকেন পক্স উভয়েরই মিল রয়েছে।
মাঙ্কিপক্সে প্রাণহানির সংখ্যা খুবই কম। এই ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণ ঘটলেও তা সীমিত। কাঠবিড়ালি, গাম্বিয়ান ইঁদুর, ডর্মিসের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির বানরসহ কিছু প্রাণীর মধ্যে মাঙ্কিপক্স পাওয়া গেছে।
এ বছরই যুক্তরাষ্ট্রে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত রোগী প্রথম দেখা গেছে। মাদ্রিদে এরই মধ্যে ২৩ জনের শরীরে এই ভাইরাস সংক্রমিত হলে সম্ভাব্য প্রাদুর্ভাবের বিষয়ে স্প্যানিশ কর্তৃপক্ষ সতর্কতা জারি করে। আক্রান্তদের মধ্যে আটজন সমকামী পুরুষ রয়েছে।