ইউক্রেনে চলমান রুশ সামরিক অভিযানের ১০০তম দিন আজ। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দেশটিতে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর পরই পশ্চিমাদের বাধা উপেক্ষা করে পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে চলছে রুশ সেনাদের সামরিক অভিযান।
ইউক্রেনকে ‘অসামরিকায়ন’ ও ‘নাৎসিমুক্তকরণ’ এবং দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের রুশ ভাষাভাষী বাসিন্দাদের রক্ষা করার জন্যই এমন সামরিক পদক্ষেপ বলে দাবি করে আসছে রাশিয়া। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে রাশিয়া হামলা চালিয়েছে। দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আবেদনের প্রেক্ষিতে ন্যাটো ও পশ্চিমা শক্তি দেশটির পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।
ডুবে যাওয়ার ৬ দিন আগে মাক্সারের ছবিতে মস্কভা
যুদ্ধক্ষেত্রে মস্কভা ডুবির ভূমিকা
রাশিয়ার নৌবাহিনীর কৃষ্ণ সাগর ফ্লিটের প্রধান যুদ্ধজাহাজ মস্কোভা ডুবে যায় এই যুদ্ধে। রুশ নৌবাহিনীর জন্য মস্কোভা ডুবি ছিল একটি বড় আঘাত। ইউক্রেনের দাবি, তাদের নির্মিত নেপচুন ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতেই মস্কভা ডুবে যায়। তবে রাশিয়ার পক্ষ থেকে ইউক্রেনের হামলায় মস্কভা ডুবির বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।
১২ হাজার ৫০০ টনের আটলান্ট-ক্লাস মিসাইল এই ক্রুজারকে একসময় স্লাভা বলে ডাকা হত। যার অর্থ গৌরব। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউক্রেনে সাম্প্রতিক হামলায় এ জাহাজের খুব একটা ভূমিকা নেই। তাই জাহাজ ডুবির ঘটনায় যুদ্ধক্ষেত্রে খুব একটা প্রভাব এর ছিল না। কিন্তু রাশিয়ার গৌরবে আঘাত ও আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরায় এই ঘটনা।
ম্যাক্সারের স্যাটেলাইট ইমেজে রুশ সামরিক বহর
কিয়েভ দখল করতে না পারা রাশিয়ার সফলতা নাকি ব্যর্থতা
লড়াইয়ের প্রথম দিকেই রুশ সেনারা ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের কাছাকাছি চলে আসে। অনেকেই আশঙ্কা করছিল, কিয়েভের পতন হতে পারে। কিন্তু ইউক্রেনীয় সেনারা রুশ সেনাদের ঠেকিয়ে রাখে। একসময় রাজধানীর আশপাশ থেকে সেনা সরিয়ে নিয়ে রাশিয়া ইউক্রেনের বন্দর নগরী মারিওপোল, দোনেৎস্ক ও লুহানস্কে প্রভাব বিস্তারে জোর দেয়।
কিয়েভ থেকে সেনা সরিয়ে নেয়ার ঘটনায় ইউক্রেন বিজয় হিসেবে দেখলেও রাশিয়া বলছে অভিযান পরিকল্পনামাফিকই ঘটছে।
ইউক্রেনের বন্দরনগরী মারিওপোলের অ্যাজোভস্টাল স্টিল কারখানা
রুশ সেনাদের হাতে মারিওপোলের পতন
ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর নগরী মারিওপোল রুশ সেনাদের নিয়ন্ত্রণে। সর্বশেষ দেশটির একটি স্টিল কারখানায় ইউক্রেনীয় সেনারা অবস্থান করলেও তারাও আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। রাশিয়ার মারিওপোল দখলে কৃষ্ণসাগরে আধিপত্য বজায় রাখতে সুবিধা হবে। এ ছাড়া ক্রিমিয়ার সঙ্গে স্থলযোগাযোগের ক্ষেত্রেও মারিওপোল দখলে রাখা রাশিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
পোল্যান্ড, বুলগেরিয়া ও ফিনল্যান্ডে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করেছে রাশিয়া
রাশিয়ার ওপর অবরোধ এবং এর প্রভাব
ইউক্রেনে রাশিয়া সামরিক অভিযান শুরু করলে একের পর এক পশ্চিমা অবরোধ দেশটির অর্থনীতিকে গ্রাস করে। দর কমতে থাকে রুশ মুদ্রা রুবলের।
এমন পরিস্থিতিতে পাল্টা পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। রাশিয়ার অর্থনীতি ও রুবলের পতন ঠেকাতে তিনি তেল ও গ্যাসকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেন।
পুতিন স্পষ্ট জানিয়ে দেন, রাশিয়ার তেল ও গ্যাস পেতে হলে রুশ মুদ্রা রুবলেও মূল্য পরিশোধ করতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে অস্ট্রিয়া ও জার্মানি রুশ মুদ্রায় মূল্য পরিশোধে রাজি হয়েছে।
আর রুবল ব্যবহারে রাজি না হওয়ায় এরই মধ্যে পোল্যান্ড, বুলগেরিয়া ও ফিনল্যান্ডে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে রাশিয়া।
রাশিয়ার পরমাণু বাহিনীর ১ হাজার সেনা মহড়া চালিয়েছে
যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সংঘাতের আশঙ্কা
ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সরাসরি সংঘাতের ঝুঁকিও সৃষ্টি হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে মাঝারি পাল্লার রকেট লঞ্চার হিমারস সরবরাহের সিদ্ধান্ত নেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি লড়াইয়ের আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন রুশ উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ। এই অস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার ভেতরেও হামলা চালাতে পারবে ইউক্রেনীয় সেনারা।
যদিও ওয়াশিংটন জোর দিয়ে বলেছে, এই রকেট লঞ্চার দিয়ে রাশিয়ার ভুখণ্ডে আঘাত করার অনুমতি কিয়েভকে দেয়া হবে না। যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি কোনো সংঘাতে জড়াতে চায় না।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ইউক্রেনের অভ্যন্তরে অগ্রসরমান রুশ সেনাদের বিরুদ্ধে এসব দীর্ঘপাল্লার অস্ত্র ব্যবহার করা যাবে। রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলা চালাতে এই অস্ত্র ব্যবহার করা যাবে না।
তবে রিয়াবকভ এই যুক্তির সঙ্গে একমত নন। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র সংঘাতকে আরও বিপজ্জনক করে তুলেছে।
এ ছাড়া এই যুদ্ধে আবার ঘুরে ফিরে পারমাণবিক যুদ্ধের বিষয়টি আসছে। রাশিয়ার পরমাণু বাহিনীও মহড়া চালাচ্ছে। ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের শুরুতেই দেশটির কৌশলগত পারমাণবিক বাহিনীকে উচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকার নির্দেশ দেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।