করাচিমুখী একটি এক্সপ্রেস ট্রেনে এক নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় তিন আসামিকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এদের মধ্যে দুইজন রেলওয়ের কর্মী। অন্যজন সেই ট্রেন পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী।
শুক্রবার রাতে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয় সোমবার ও মঙ্গলবার। আসামিদের গ্রেপ্তারের পর ধর্ষণের বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রকাশ পায়।
দেশটির রেলওয়ে পুলিশপ্রধান ফয়সাল শাহকার মঙ্গলবার জানিয়েছেন, মুলতান শহর থেকে করাচিগামী ‘বাহাউদ্দীন জাকারিয়া এক্সপ্রেস’ ট্রেনটির ইকোনমি ক্লাস বার্থের যাত্রী ছিলেন ওই নারী। টিকিট পরীক্ষা করার সময় ওই নারীকে তাপানুকুল বগিতে সিটের ব্যবস্থা করে দেয়ার কথা বলেন চেকার।’
মামলার এজাহারে বলা হয়, এর কিছুক্ষণ পর ওই নারীকে পরিকল্পনা অনুযায়ী একটি নির্জন বগিতে নিয়ে যান টিকিট চেকার। সেখানে চেকারসহ তিনজন ওই নারীকে পালা করে ধর্ষণ করেন।
ধর্ষণের কথা গোপন রাখার জন্য তাকে ভয়াবহ হুমকি দেন ওই তিন ব্যক্তি।
করাচি স্টেশনে নামার পর ওই নারী ঘটনার কথা জানান রেলওয়ে পুলিশকে। সেখানেই ধর্ষণের মামলা করেন ওই নারী।
জিন্নাহ পোস্টগ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল সেন্টারের অতিরিক্ত পুলিশ সার্জন সুমাইয়া সাঈদ বলেন, ‘ভুক্তভোগীর শারীরিক পরীক্ষায় সংঘবদ্ধ ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভুক্তভোগীর পোশাকে লেগে থাকা নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সিমেন সেরোলজি, ডিএনএ প্রোফাইলিং ও ক্রস-ম্যাচিং পরীক্ষার জন্য ব্যবহার হবে এসব নমুনা।’
এই ঘটনায় অধিকারকর্মীসহ জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। অপরাধীদের কঠোর শাস্তি দাবি করেন তারা।
সংবাদমাধ্যম জিও-টিভিকে দেয়া বক্তব্যে এক প্রতিবাদকারী বলেন, ‘এই ঘৃণ্য ঘটনায় জড়িতদের ফাঁসির মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হোক। আমি সেই দণ্ড সচক্ষে দেখতে চাই।’
দেশটির অন্যতম সংবাদমাধ্যম ডন-এ বুধবার প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে এই ঘটনাকে ঘৃণ্য অপরাধ বলে উল্লেখ করা হয়। এবং ট্রেনে যাত্রীর পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যর্থ হওয়ায় গভীর উদ্বেগ জানানো হয়।
সেখানে আরও বলা হয়, নারীর নিরাপত্তার বিষয়টি একটি জাতির মূল্যবোধের মানদণ্ড হিসেবে ধরা হয়।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানে গত চার বছরে ১৪ হাজারের বেশি নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। সে হিসাবে প্রতিদিন কমপক্ষে ১১ জন ধর্ষিত হয়েছেন দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে।
ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত ও অভিযুক্তদের মাত্র তিন শতাংশকে শাস্তির আওতায় আনা গেছে।
এমন বিপুলসংখ্যক অভিযুক্তের সাজা না হওয়ার পেছনে ত্রুটিপূর্ণ তদন্ত ও বিচারব্যবস্থাকে দায়ী করা হচ্ছে।