যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ জনেরও বেশি আইনপ্রণেতা গত শুক্রবার এফবিআইকে পশ্চিম তীরে আল জাজিরা প্রতিবেদক শিরিন আবু আকলেহ হত্যাকান্ডের তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের পক্ষ থেকে তদন্তের প্রতিশ্রুতির পরেও যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতারা এফবিআইকে এই আহ্বান জানিয়েছেন।
আন্দ্রে কার্সনের নেতৃত্বে ৫৭ জন আইনপ্রণেতা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টনি ব্লিঙ্কেন ও এফবিআইয়ের ডিরেক্টরকে দেয়া এক চিঠিতে লিখেছেন, এই অঞ্চলের (ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল) দুর্বল পরিস্থিতি এবং আবু আকলেহকে ঘিরে বিরোধপূর্ণ প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে আমরা স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)কে আবু আকলেহের মৃত্যুর তদন্ত শুরু করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
শিরিন আবু আকলেহকে আমেরিকান উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘একজন আমেরিকান নাগরিক হিসেবে আবু আকলেহ বিদেসে বসবাসকারী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে সম্পূর্ণ সুরক্ষা পাওয়ার অধিকারী ছিলেন।’
ইসরায়েল দাবি করে আসছে পশ্চিম তীরে গোলাগুলির সময় ফিলিস্তিনিদের গুলিতে নয়তো ইসরায়েলের বিপদগামী কোনো সেনার গুলিতে মারা গেছেন শিরিন আবু আকলেহ। ঘটনার পূর্নাঙ্গ তদন্তের আশ্বাস দিয়েছে ইসরায়েল।
তবে আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে পশ্চিম তীরে আল জাজিরার সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহ যখন খুন হন, সে সময় ওই এলাকায় কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। আকলেহ খুন নিয়ে প্রকাশিত নতুন একটি ভিডিওতে এলাকাটির পরিস্থিতি তখন শান্ত ও নীরব দেখা গেছে।
গত ১১ মে পশ্চিম তীরের জেনিন শহরের কাছে ইসরায়েলি বাহিনীর তল্লাশির খবর সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন ৫১ বছর বয়সী শিরিন আকলেহ। ওই সময় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। পরে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে নেয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
জেনিনের এক বাসিন্দা ভিডিও ধারণ করেছেন; যারা সত্যতা যাচাই করেছে আল জাজিরা। এতে দেখা গেছে, এলাকাটি খুবই শান্ত অবস্থায় রয়েছে। ফিলিস্তিন এবং ইসরায়েলিদের মধ্যে কোনো সংঘর্ষের ঘটনাও নেই সেখানে।
ভিডিওতে কিছু লোককে কথা বলতে এবং হাসতে দেখা যায়। এ সময় আকলেহ এবং তার সহকর্মীরা প্রেস লেখা জ্যাকেট পরা অবস্থায় ছিলেন।
গুলি শুরুর পর লোকজন দিকবিদিক দৌড়াতে শুরু করে। এরই এক পর্যায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিয়ে লুটিয়ে পড়েন সাংবাদিক আকলেহ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০০ সালে ফিলিস্তিনে দ্বিতীয় ইন্তিফাদা শুরুর সময় থেকে আল জাজিরার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন শিরিন আলেহ। খুন হওয়ার সময় তার মাথায় ছিল হেলমেট, গায়ে ছিল ভেস্ট।
গুলি হেলমেট ও ভেস্টের ঠিক মাঝখান দিয়ে শিরিনের ঘাড়ে বিদ্ধ হয়। এ সময় শিরিনের সহকর্মীরা এবং পথচারীরা তাকে সাহায্য করার চেষ্টা করলে গুলি চলতে থাকে। তাই তারা এগিয়ে আসতে পারেননি। নিথর পড়ে ছিল শিরিনের দেহ।
শুরুতে ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা এই মৃত্যুর জন্য দায়ী। বিষয়টি প্রমাণে একটি ভিডিও প্রকাশ করে তেল আবিব। যেখানে দেখা যায়, একদল ফিলিস্তিনি গুলি ছুড়তে ছুড়তে একটি সরু গলি পার হচ্ছে।
ইসরায়েলের প্রভাবশালী মানবাধিকার সংস্থা- বিটস্লেম ওই ভিডিও ধারণের স্থানটি খুঁজে পেয়েছেন। তারা বলছে, ওই ভিডিওটি শিরিন হত্যাকাণ্ডের স্থান থেকে ৩০০ মিটার (৯৮৫ ফুট) দূরের একটি স্থান।
শিরিনের কর্মস্থল আল জাজিরার সানাদ নিউজ ভেরিফিকেশন অ্যান্ড মনিটরিং ইউনিটও বিষয়টি খতিয়ে দেখেছে। তারাও দাবি করেছেন ভিডিওটি ভুয়া।
প্রপাগান্ডায় কাজ না হওয়ায় আগের অবস্থান থেকে সরে আসে ইসরায়েল সরকার। তারা এই হত্যার তদন্ত করার আশ্বাস দেয়। তবে শেষমেশ আগের রূপেই ফিরেছে ইসরায়েল সরকার। তদন্ত না করার ইঙ্গিত দিয়েছে তেল আবিব। অতীতে ইসরায়েলি সেনাদের হাতে ফিলিস্তিনি নিহতের ঘটনায় তদন্ত করে নিজ দেশে সমালোচিত হয়েছিল দেশটির সরকার।
শিরিনের শরীর থেকে বের করা বুলেটের টুকরা প্রমাণ হিসেবে রেখেছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। তদন্তের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস।