ইউক্রেনে চলছে রুশ সামরিক অভিযান। দেশটিতে রাশিয়া হামলা শুরু করলেও পশ্চিমা কোনো দেশ ইউক্রেনে সেনা পাঠায়নি। তবে সেনা না পাঠালেও ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো ইউক্রেনে ব্যাপক সমরাস্ত্র সরবরাহ করেছে। পশ্চিমাদের দাবি, এর প্রভাব পড়েছে লড়াইয়ের ময়দানে। রাশিয়াও পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর জন্য পশ্চিমা অস্ত্র সরবরাহকেই দায়ী করেছেন।
এমন পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের জয়ের ব্যাপারে আশাবাদি হয়ে উঠছে পশ্চিমারা। যুদ্ধক্ষেত্রের গতি-প্রকৃতি মস্কোর পরিকল্পনা মাফিক হচ্ছে না এবং রুশ সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়ী হতে পারে ইউক্রেন, এমনটাই মনে করেন ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ।
রাশিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোববার প্রতিবেদকদের সঙ্গে হওয়া এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে ইউক্রেন-রাশিয়ার সংঘাতের সবশেষ পরিস্থিতির আলোকে এই মন্তব্য করেন স্টলটেনবার্গ। ‘ইউক্রেনের প্রতি দৃঢ় সমর্থন, ন্যাটোর প্রতিরোধ ও প্রতিরক্ষাকে আরও শক্তিশালী করা এবং যুদ্ধের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব’ ছিল বৈঠকের আলোচনার বিষয়বস্তু।
এ ছাড়া রাশিয়ার বিরুদ্ধে জোটের ভবিষ্যৎ অবস্থান কী হবে, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে বৈঠকে।
ন্যাটোর মহাসচিব জেনারেল জেনস স্টলটেনবার্গ
ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ বলেন, ‘রাশিয়ার পরিকল্পনামাফিক যুদ্ধ চলছে না। তারা কিয়েভ দখল করতে ব্যর্থ হয়েছে। খারকিভ থেকেও পিছু হটেছে। দোনবাসেও তারা হামলা স্থগিত করেছে। রাশিয়া তাদের কৌশলগত উদ্দেশ্য অর্জন করতে পারছে না।’
তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন লড়াই চালিয়ে যাবে। সাহসিকতার সঙ্গে তাদের জন্মভূমি রক্ষার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। ন্যাটো আগের চেয়ে শক্তিশালী এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ দৃঢ়ভাবে একত্রিত।’
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ইউক্রেন ত্যাগ না করে রাজধানী কিয়েভে অবস্থান করেন এবং লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান সেনা অভিযানের মধ্যেই ন্যাটোভুক্ত অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান রাজধানী কিয়েভ সফর করেন।
যদিও চলতি মাসের শুরুর দিকে ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ দাবি করেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান পরিকল্পনামাফিকই চলছে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর পর থেকেই পশ্চিমাদের বাধা উপেক্ষা করে পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে চলছে রুশ অভিযান।
ইউক্রেন লড়াই চালিয়ে যাবে। সাহসিকতার সঙ্গে তাদের জন্মভূমি রক্ষার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। ন্যাটো আগের চেয়ে শক্তিশালী এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ দৃঢ়ভাবে একত্রিত।
ইউক্রেনকে ‘অসামরিকায়ন’ ও ‘নাৎসিমুক্তকরণ’ এবং দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে রক্ষা করার জন্যই এমন সামরিক পদক্ষেপ বলে দাবি করে আসছে রাশিয়া। এছাড়া ক্রেমলিনের দাবি, ইউক্রেনকে অবশ্যই নিরপেক্ষ রাষ্ট্রের ভূমিকায় থাকতে হবে, অর্থ্যাৎ দেশটি কখনোই পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য হতে পারবে না। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে রাশিয়া হামলা চালিয়েছে। দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে আসছে।
এদিকে শুধু ইউক্রেনই নয়। রাশিয়ার আরেক প্রতিবেশী ফিনল্যান্ডও ন্যাটোতে যোগদানের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। রাশিয়ার সঙ্গে ফিনল্যান্ডের ১ হাজার ৩০০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে।
এদিকে ন্যাটোতে যোগদানের পরিনতির বিষয়ে এরই মধ্যে ফিনল্যান্ডকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে ক্রেমলিন।
রুশ নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভ এর আগে সুইডেন ও ফিনল্যান্ডকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, দুই দেশ যাতে বাস্তবতা মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নেয়। অন্যথায় বাড়ির পাশে পরমাণু অস্ত্র ও হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে বসবাস করতে হবে তাদের।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এর আগে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘ন্যাটোর সম্প্রসারণ কীভাবে কার্যকর হয় এবং তা রুশ সীমান্তের কতটা কাছে চলে আসে তার ওপর সবকিছু নির্ভর করছে।’
দীর্ঘদিন ধরে নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে নিজের অবস্থান বজায় রাখলেও ইউক্রেনে রুশ হামলার প্রেক্ষাপটে ন্যাটোতে যোগদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি।
ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সানা মারিন ন্যাটোতে যোগদানের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমাদের সিদ্ধান্ত ঐতিহাসিক। ফিনল্যান্ড ও আমাদের নাগরিকদের জন্য নিরাপত্তার জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সিদ্ধান্ত আমাদের নিরাপত্তার সক্ষমতা এবং নরডিক দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বৃদ্ধি করবে।’