ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের প্রত্যাশায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়ছে ইউক্রেন। ইউক্রেনের জনগণ রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইকে দেখছিল, তাদের ইউরোপীয় ভবিষ্যতের জন্য বর্তমানকে উৎসর্গ করা হিসেবে। এরই মধ্যে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন পুনর্গঠনের জন্য ইইউর সদস্য হওয়া জরুরি। এরই মধ্যে দেশটি সদস্য হতে আবেদন করেছে। প্রতিবেশী পোল্যান্ডও ইউক্রেনের ইইউতে যোগদানের বিষয়টিকে সমর্থন করেছে।
কিন্তু ইউক্রেনের ইউরোপীয় ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকে নিছক উড়িয়েই দিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল মাখোঁ।
ইউক্রেনের ইইউতে যোগদানের সম্ভাবনা দেখছেন না মাখোঁ
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টে দেয়া এক ভাষণে মাখোঁ বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নে গ্রহণযোগ্যতা পেতে ইউক্রেনের কয়েক বছর, প্রকৃত অর্থে দশক লাগতে পারে।
মাখোঁ জোর দিয়ে বলেছেন, ‘এটিই সত্য। অন্যথায় আমাদের মান কমাতে হবে এবং ইউরোপের ঐক্য নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।’
প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল মাখোঁর আগে ফ্রান্সের ইউরোপীয় সম্পর্কবিষয়ক সেক্রেটারি অব স্টেট ক্লিমেন্ট বোনও ইউক্রেনের ইইউতে যোগদানের বিষয়ে বলেছিলেন, ‘চাইলেই কালকে ইউক্রেনকে ইইউয়ের সদস্য করা সম্ভব নয়। এর জন্য সময় লাগবে।’
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর ৪ দিন পরই ইউরোপীয় ইউনিয়নে সদস্য হতে আবেদন করে ইউক্রেন।
ইইউতে যোগদানের আবেদনে স্বাক্ষরের পর ভলদিমির জেলেনস্কি, প্রধানমন্ত্রী ডেনিস শ্যামিগাল (ডানে) ও পার্লামেন্ট স্পিকার রুসলান স্টেফানচুক
বিশেষ পদ্ধতিতে ইউক্রেনকে সদস্যপদ লাভের অনুমতি দিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি আবেদন করেছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট নিজেই বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন। তার পরিপ্রেক্ষিতেই ইম্যানুয়েল মাখোঁর এই মন্তব্য এলো।
ইইউর পরিবর্তে আপাতত ইউক্রেনকে ইউরোপের অন্যান্য সংস্থায় যোগ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মাখোঁ।
ইউক্রেনের সঙ্গে পশ্চিমাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণেই দেশটি ক্রেমলিনের রোষানলে পড়েছে। ইউক্রেনের ইইউ ও ন্যাটোতে যুক্ত হওয়া কোনোভাবেই মেনে নেয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে রাশিয়া। গত ৯ মে ইউক্রেন পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে পশ্চিমাদের ওপর দায় চাপিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
যেখানে নিকট ভবিষ্যতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই ইউক্রেনের, এমনকি ন্যাটোতে যোগদানের ক্ষেত্রেও অনেক ন্যাটো সদস্যভুক্ত দেশের আপত্তি রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ইউক্রেন আসলে কী অর্জন করল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন নেটিজেনরা।
এদিকে কিছুদিন আগে যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে শাটল কূটনীতির (বিরোধে উভয় পক্ষে যোগাযোগ রাখা মধ্যস্থতাকারী) অংশ হিসেবে রাশিয়া ও ইউক্রেন সফর করেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। সে সময় তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তার কিয়েভ সফরের সময় পূর্ব ইউক্রেনে সর্বাত্মক যুদ্ধ চলছিল। এমনকি তার হোটেলের পাশেও রুশ ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছিল।
ইউক্রেন যুদ্ধে শুধু বৈশ্বিক খাদ্য সরবরাহেই সংকট সৃষ্টি করবে না, বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকটও সৃষ্টি করতে পারে। এরই মধ্যে পোল্যান্ড ও বুলগেরিয়ায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে রাশিয়া। পুরো ইউরোপেই গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করার একটি প্রচ্ছন্ন হুমকিও দিয়ে রেখেছে দেশটি।
যদিও রাশিয়া ও ইউক্রেনের কেউই আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণা করেনি।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন পুতিন। এর পর থেকেই পশ্চিমাদের বাধা উপেক্ষা করে পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে চলছে রুশ সেনাদের সামরিক অভিযান।
ইউক্রেনকে ‘অসামরিকায়ন’ ও ‘নাৎসিমুক্তকরণ’ এবং দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের রুশ ভাষাভাষী বাসিন্দাদের রক্ষা করার জন্যই এমন সামরিক পদক্ষেপ বলে দাবি করে আসছে রাশিয়া। ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সম্পূর্ণ বিনা উসকানিতে রাশিয়া হামলা চালিয়েছে। দেশটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে আসছে।