করোনা পরিস্থিতির উন্নয়নের পর দেশে দেশে পণ্যমূল্য নিয়ে যে অস্থিরতা, তার বাইরে নয় যুক্তরাজ্যও। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় সেখানেও সাধারণের জীবনযাপনের ব্যয় গেছে বেড়ে।
রমজান মাসে যখন এমনিতে দোকানে থাকে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়, সে সময় যুদ্ধের ডামাডোল আর দাম বৃদ্ধির কারণে অনেকটাই ভাঙা হাটের রূপ নিয়েছে।
লন্ডনের বাঙালি কমিউনিটির বেশির ভাগ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা গেছে, সব জায়গার চিত্র মোটামুটি একই ।
বাংলা টাউন ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারি নামে খ্যাত প্রতিষ্ঠানটির মালিক এবং ব্রিটিশ-বাংলাদেশি ইম্পোরটারস অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান রফিক হায়দার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রমজান মাসে পণ্যের চাহিদা বেশি থাকে। তাই ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ বেশি পণ্য মজুত করা হয়। কিন্তু দাম বেশি থাকার কারণে সাধারণ ক্রেতারা সেভাবে কিনতে পারছেন না।’
তার মতে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় বেড়ে যাওয়া জ্বালানির দাম সহনীয় মাত্রায় স্থির হলে পণ্যের দাম কমবে এবং ব্যবসায় স্থিতিশীলতা আসবে। আর এটা দ্রুত না হলে অনেক ব্যবসায়ী মারাত্মক ক্ষতির মধ্যে পড়বেন বলে আশঙ্কা তার।
জামান ব্রাদার্স নামে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের এক বিক্রেতা জানান, তাদের এখানে একটি ছোট মুরগি বিক্রি হতো দুই পাউন্ডে (বাংলাদেশি মুদ্রায় ২২০ টাকা), এখন তা ২.৮০ পাউন্ডে উঠেছে (আনুমানিক ৩১০ টাকা)।
মাঝারি আকারের চারটি মুরগি বিক্রি হতো ১০.৯৯ পাউন্ডে (বাংলাদেশি টাকায় ১ হাজার ২১০ টাকা), এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২.৯৯ পাউন্ড (বাংলাদেশি টাকায় ১ হাজার ৪৩০ টাকা)।
ভেড়ার মাংসের কেজি ছিল ৫.৯৯ পাউন্ড (বাংলাদেশি টাকায় ৬৬০ টাকা) এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭.৯৯ পাউন্ড (বাংলাদেশি টাকায় ৮৮০ টাকা)।
বিক্রেতা আবদুর রহমান জানান, দেড় মাস ধরে পণ্যের দাম ধারাবাহিকভাবেই বাড়তির দিকে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ভোজ্যতেলের।
আগে সূর্যমুখী তেলের ৫ লিটারের ক্যান বিক্রি হতো ৪.৫০ থেকে ৬ পাউন্ডে (বাংলাদেশি টাকায় ৫০০ থেকে ৬৬০ টাকা) এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮.৫০ থেকে ৯ পাউন্ডে (বাংলাদেশি টাকায় ৯৩৫ থেকে ৯৯০ টাকা)।
সবজি বিক্রেতা সোহেল মিয়া জানান, বেশির ভাগ সালাদ আইটেমের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে ধনেপাতা, লেটুস, টম্যাটো, শসার দাম দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে।
আগে দুই আঁটি ধনেপাতা বিক্রি হতো এক পাউন্ডে, এখন এক আটিই ০.৮০ থেকে ১.২৫ পাউন্ডে বিক্রি হচ্ছে ।
সোহেলের দোকানে কিছু ক্রেতাকে দেখা গেছে দাম দেখে পণ্য না কিনেই চলে যেতে, কেউ কাঙ্ক্ষিত দামে না পেয়ে অন্য কোনো পণ্য কিনে নিচ্ছেন।
দুই সন্তানসহ চারজনের সংসারের জন্য বাজার করতে আসা এক নারী ক্রেতা জানালেন, পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে তার জীবনযাপনে কিছুটা পরিবর্তন করতে হয়েছে। বাজার করার ক্ষেত্রে হিসাব কষে আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য রক্ষা করতে হচ্ছে।
চেইন ফুডশপে কাজ করেন মনিরা খান। তিনি বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য যেটা না কিনলেই নয় সেটাকে প্রাধান্য দিচ্ছি। অতিরিক্ত ব্যয় সামাল দিতে গিয়ে এভাবে খরচ বেশ খানিকটা কমিয়ে ফেলেছি।’
বন্যা আহমেদ নামে আরেকজন বলেন, ‘ভোজ্যতেলের ব্যবহার কমিয়েছি। আগে যেখানে মাসে ১০ কেজি তেল রান্নার কাজে ব্যবহার করতাম, এখন সেটা অর্ধেকে নামিয়ে এনেছি।’
বাড়ি ভাড়াসংক্রান্ত সেবা দিয়ে থাকেন শফিক আহমেদ। সদ্য বিয়ে করেছেন। তিনি বলেন, ‘আগে একসঙ্গে বিভিন্ন ধরনের সবজি কিনতাম। এখন অল্প করে কিনি। যে জিনিসপত্রের দাম হাতের নাগালে, সেটা পরিমাণে বেশি কিনে সংরক্ষণ করে রাখি।
‘আগে মার্কেটে গেলেই চোখে যেটা ভালো লাগত কিনে ফেলতাম, এখন সেটা না করে যেটা ঠিক প্রয়োজন সেটাই কিনছি।’