ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয় মেয়াদে ইমানুয়েল মাখোঁর জয়ে স্বস্তি নেমে এসেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নে। নির্বাচনে কট্টর ডানপন্থি মেরি লা পেনের বড় ধরনের পরাজয়ের ফলে ইইউ থেকে ফ্রান্সের বের হয়ে যাওয়ার দাবি মুখ থুবড়ে পড়েছে।
সেই সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ভক্ত ও মিত্র মেরি লা পেন অষ্টমবারের মতো হেরে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি আঘাত পেয়েছে ১২০০ মাইল দূরের মস্কো।
নেপোলিয়নের পর সবচেয়ে কম বয়সী ফরাসি নেতা মাখোঁ দেশটির সাম্প্রতিক ইতিহাসে দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত তৃতীয় প্রেসিডেন্ট।
অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নবিরোধী কট্টরপন্থি মেরি লা পেন প্রথম নারী হিসেবে তৃতীয়বারের মতো দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়েন।
স্থানীয় সময় রোববারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী মেরি লা পেনকে উল্লেখযোগ্য ব্যবধানে হারান মাখোঁ।
৫৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হন মাখোঁ। কট্টর ডানপন্থি মেরি লা পেন পান ৪১ দশমিক ৪৫ শতাংশ ভোট।
মাখোঁকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের সরকারপ্রধান ও শীর্ষ নেতারা।
ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মাইকেল, বেলজিয়াম ও লুক্সেমবার্গের প্রধানমন্ত্রী সবার আগে মাখোঁকে অভিনন্দন জানান।
টুইট বার্তায় চার্লস মাইকেল বলেন, ‘এই সংকটময় সময়ে আমরা আরও বেশি সুসংহত ইউরোপ ও ফ্রান্স চাই। যারা কৌশলগত ইউরোপীয় ইউনিয়নের সংহতিকে শক্তিশালী ও জোরালো করার বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে।’
তিনি মত দিয়েছেন, ইইউবিদ্বেষী ও পুতিনের ভক্ত লা পেন নির্বাচিত হলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়ত।
নির্বাচনি ইশতেহারে মাখোঁ গুরুত্ব দিয়েছিলেন বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও অভিবাসী নিয়ে ঐক্যবদ্ধ ফ্রান্স। তবে মেরি লা পেনের প্রচারণাজুড়ে ছিল অভিবাসী ও ইউরোপীয় ইউনিয়নবিদ্বেষী মনোভাব।
মাখোঁর উদারপন্থি অর্থনীতি ও পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে সহমত রয়েছে ইইউ নেতাদের। একই সঙ্গে মুক্তবাজার অর্থনীতি ও ন্যাটো জোটের সঙ্গে তার দলের আদর্শিক মেলবন্ধন রয়েছে।
অন্যদিকে রাশিয়ার সঙ্গে কট্টরপন্থি লা পেনের গভীর যোগাযোগ ও ভালো বোঝাপড়া রয়েছে। মুক্তবাজার বিমুখী মনোভাব ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ফ্রান্সকে সরিয়ে নেয়ার পক্ষে সরব লা পেন।
ইশতেহারে ফ্রান্সের সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে অভিবাসী নিয়ন্ত্রণের দাবি তোলেন লা পেন। নারীদের হিজাব পরার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে গণভোট আয়োজনের উদ্যোগ নেন তিনি।
দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ইইউ নেতা হিসেবে ৬ মাসের জন্য মনোনীত মাখোঁর হাতে এখনও দুই মাস সময় বাকি আছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, এই সময় পুতিনের বিরুদ্ধে ইউরোপকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা মাখোঁর মাধ্যমে আরও সুসংহত হবে।
ফের নির্বাচিত হওয়ায় কট্টর ডানপন্থির বিরুদ্ধে মাখোঁর জয়কে অনেকে ইউরোপীয় নেতারা ইইউর জয় বলে উল্লেখ করেন।
এদিকে মাখোঁ নির্বাচিত হওয়ায় তাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন বার্তা জানিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।