ভারতে কেন্দ্রীয় সরকারের নেতৃত্বে থাকা ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি ও নির্বাচনি ফলাফলে সুবিধা করতে পারছে না। তারই প্রভাবে দলে বাড়ছে বিরোধ। নেতৃত্ব ছাড়ছেন একের পর এক নেতা। নির্বাচনি ভরাডুবির জন্য তারা দোষারোপ করছেন একে অন্যকে।
বিজেপি নেতারা জানান, পশ্চিমবঙ্গের জেলায় জেলায় দলীয় পদ থেকে ইস্তফা দেয়ার হিড়িক পড়েছে। গৃহদাহের কারণ জানতে রাজ্য নেতাদের ডাকা হয়েছে দিল্লিতে।
তারা বলেন, ‘গত বছর বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সরকার গঠনের স্বপ্ন ব্যর্থ হয়। তখন থেকেই দলে ভাঙন শুরু হয়েছে। সম্প্রতি হওয়া উপনির্বাচন ও পৌর ভোটের ফলাফল আশাব্যঞ্জক নয়।
‘ভোটে জয়ের খাতা খুলতে না পারায় বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বাড়ছে। রাজ্য নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা বাড়ছে তৃণমূলের। তারই ফলে ইস্তফা দিচ্ছেন নেতারা।’
বিজেপির অন্দরে কোন্দল ও তার কারণ জানতে রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তীকে ডাকা হয়েছে দিল্লিতে। আসানসোলের আসন কেন হাতছাড়া হলো, দলে কেন গোষ্ঠী কোন্দল ও নেতাদের সমস্যা নিয়ে নানা প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে তাকে কেন্দ্রের কাছে।
বিজেপি নেতাদের মতে, আসানসোল ও বালিগঞ্জ কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বিজেপির শোচনীয় পরাজয় অনেক হিসাব পাল্টে দিয়েছে। রাজ্য কমিটির সম্পাদকের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক গৌরীশংকর ঘোষ। এ ছাড়া রাজ্য কমিটির সদস্য পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন বিধায়ক কাঞ্চন মৈত্র। বিজেপির কর্মসমিতির সদস্য পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন মুর্শিদাবাদের দুই নেতা দীপঙ্কর চৌধুরী ও বাণী গঙ্গোপাধ্যায়।
প্রভাবশালী নেতা গৌরীশংকর ঘোষ রোববার বহরমপুরের বিজেপি বিধায়ক সুব্রত মৈত্রের বাড়িতে সাংবাদিকদের ডেকে কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, ‘রাজ্য নেতৃত্ব আমার কথা শুনছে না। তাই পদে বসে থাকার কোনো যৌক্তিকতা পাচ্ছি না। দলীয় পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি। যোগ্য নেতা পেলে তাকে সামনে রেখে ফের কাজ শুরু করব।’
বিধায়ক সুব্রত মৈত্র একই সুরে বলেন, ‘জেলা সভাপতি নিজের মতো দল চালাচ্ছেন। এটা হতে পারে না।’
মুর্শিদাবাদ জেলার বিজেপি সভাপতি শাখারভ সরকার পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন পদত্যাগী নেতাদের ব্যাপারে। তিনি গৌরীশংকর ঘোষকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘উনি কতটা স্বচ্ছতা নিয়ে সংগঠন করেছেন, তা আগে ভেবে দেখুন।’
বিজেপি বিধায়ক অনুপম হাজরা রাজনৈতিক এ বিভাজনে উদ্বেগ জানিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘কেন একসঙ্গে এতগুলো ইস্তফা? রাজ্য বিজেপির বিচার-বিশ্লেষণ করা উচিত।’
মুর্শিদাবাদের পর রোববার নদীয়ায় ১০ জন বিজেপি নেতা পদত্যাগ করেছেন। তারা জেলা নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।
নদীয়া জেলা কমিটির সহসভাপতি বিপদভঞ্জন কাঞ্জিলাল বলেন, ‘আমরা ইস্তফার বিষয় রাজ্য নেতাদের জানিয়েছি।’
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘নেতাদের ইস্তফাপত্র নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, আমরা সবকিছু বিবেচনা করছি। গিগগিরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।’