ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের পর একের পর এক পশ্চিমা অবরোধ আন্তর্জাতিক বাজারে রুশ মুদ্রা রুবলের দাম কমিয়ে দেয়। এমন পরিস্থিতিতে পশ্চিমা শক্তিকে শায়েস্তা করতে ও রুবলের মূল্য বৃদ্ধিতে ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া দেশগুলোকে রুবলে তেল ও গ্যাস কেনার জন্য বাধ্য করার উদ্যোগ নেয় রাশিয়া।
তবে বন্ধুরাষ্ট্রের জন্য এমন বাধ্যবাধকতা না থাকলেও এবার রাশিয়ার সবচেয়ে কাছের মিত্র বেলারুশ রুবলে রাশিয়ার তেল গ্যাস কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তাসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেলারুশের প্রধানমন্ত্রী রোমান গোলভচেঙ্কো শনিবার বেলারুশ-১ টিভি চ্যানেলকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, রাশিয়া থেকে তেল ও গ্যাস আমদানিতে রুবলে মূল্য পরিশোধ করবে বেলারুশ।
তিনি বলেন, ‘আমরা জ্বালানির মূল্য পরিশোধের জন্য রুবলে চলে যাব। আমরা এত দিন ধরে চাইছিলাম, ডলারে মূল্য পরিশোধ না করতে। এখন থেকে আমরা রাশিয়ার মুদ্রা রুবলেই কাজ করব। এটি এই জন্য নয় যে রাশিয়া এখন পশ্চিমের কাছ থেকে এমনটা (রুবলে তেল-গ্যাস বিক্রি) দাবি করছে, যা একেবারে ন্যায্য। তার জাতীয় মুদ্রায় বন্দোবস্ত করার।’
তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের জন্য অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক এবং আমরা সব সময় এর জন্য লড়াই করেছি। আর এটি কয়েক মিলিয়ন ডলার নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘বৈশ্বিক অর্থব্যবস্থা এরই মধ্যে রদবদল শুরু হয়ে গেছে। আমার দৃষ্টিতে, এটিকে ডলারের আত্মহত্যার সময়কাল হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসী ও অন্যায্য কাজের প্রতিফলন অনুমান করা কঠিন। তবে এটি বিশ্বের জন্য ডলারের আধিপত্য থেকে সরে যাওয়ার একটি সুযোগ।’
এদিকে ভারতও রাশিয়া থেকে রুপি-রুবল পদ্ধতিতে তেল কেনার বিষয়টি বিবেচনা করছে। এমনকি পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়া থেকে গ্যাস কিনতে যাতে বাধা সৃষ্টি না হয়, সে জন্য রাশিয়ার জ্বালানি প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রমের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়নি। জার্মানি চায়, গ্যাসের মূল্য ইউরোতে পরিশোধ করবে এবং রুশ ব্যাংকগুলো তা রুবলে পরিবর্তন করে রুশ কোম্পানিগুলোকে মূল্য পরিশোধ করবে। যতদূর জানা যায়, এতে ক্রেমলিনের আপত্তি নেই। ভারতের ক্ষেত্রে রুপি-রুবল পদ্ধতি অনেকটা এমনই।
বেলারুশের প্রধানমন্ত্রী রোমান গোলভচেঙ্কো
রুপি ও রুবল পদ্ধতি যেভাবে কাজ করবে
রুপি-রুবল পদ্ধতিতে ভারতীয় আমদানিকারকরা ভারতে থাকা রুশ ব্যাংকগুলোতে রুপিতে মূল্য পরিশোধ করবে এবং ব্যাংকগুলো রুশ রপ্তানিকারকদের রুবলে অর্থ প্রদান করবে।
যেহেতু ভারতে রাশিয়া থেকে রপ্তানি করা পণ্যের থেকে আমদানি করা পণ্যের পরিমাণ বেশি। তাই রুশ ব্যাংকগুলোতে জমা হওয়া রুপিগুলো ভাঙানোর পথ হলো ভারত থেকে রাশিয়াতে রপ্তানি বাড়ানো।
সে ক্ষেত্রে ভারতকে কৃষি যন্ত্রপাতি, ওষুধ, ফার্নিচার, বাথরুম ফিটিংস এবং অন্যান্য সামগ্রী রপ্তানি বাড়াতে হবে রাশিয়ায়। ভারতে যারা এ ধরনের পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে নতুন বাজার খুঁজছে, তাদের জন্য এটি নতুন সুযোগ।
গ্যাস পাইপলাইনে স্বাক্ষর করছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন
রাশিয়া যা বলছে
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ রুশ সম্পদ জব্দ করার অবৈধ সিদ্ধান্তের কারণে তাদের মুদ্রার ওপর আস্থা নষ্ট হয়েছে। তাই রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া দেশগুলোকে রুবলে গ্যাসের দাম পরিশোধ করতে হবে।
এ-সংক্রান্ত বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে এরই মধ্যে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন।
যদিও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কোনো পরিকল্পনা নেই রাশিয়ার। পুতিন জানিয়েছেন, চুক্তিতে নির্ধারিত মূল্যতেই গ্যাস সরবরাহ করবে রাশিয়া। শুধু অর্থ প্রদানে মুদ্রার পরিবর্তন হবে।
তবে শুধু গ্যাসের বিষয়েই নয়। পুতিন বলেন, ‘আমাদের পণ্য ইইউ কিংবা যুক্তরাষ্ট্রে ডলার বা ইউরোতে লেনদেনের কোনো মানে হয় না।’