বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার দিকেই ভারত

  •    
  • ২ এপ্রিল, ২০২২ ১৪:৪৯

যদিও সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ভারত সফরে এলেও তাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেখা করেননি। অথচ রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি ঠিকই দেখা করেছেন, যা রাশিয়ার প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতাকেই প্রকাশ করে।

ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযান শুরুর পর যখন পশ্চিমা বিশ্ব একের পর এক অবরোধ আরোপ করছে রাশিয়ার ওপর, ঠিক সে সময় ইউক্রেন আক্রমণের জন্য রাশিয়ার নিন্দা করতে অস্বীকৃতি জানানোয় ভারতের প্রশংসা করেছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ।

রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভ বর্তমানে ভারত সফর করছেন। তিনি এই সফরে আশা প্রকাশ করেছেন, মস্কো ও দিল্লি পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে দুই দেশের বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার উপায় বের করবে।

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদিও সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ভারত সফরে এলেও তাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেখা করেননি। অথচ রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি ঠিকই দেখা করেছেন, যা রাশিয়ার প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতাকেই প্রকাশ করে।

পশ্চিমা চাপ সত্ত্বেও রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অবরোধে শামিল হয়নি ভারত। এমনকি জাতিসংঘে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ায় বিরত ছিল দেশটি। যখন পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়ার ওপর অবরোধ আরোপ করছে তখন দেশটি থেকে জ্বালানি তেল কেনার পরিমাণ বাড়িয়েছে ভারত।

ভারত সফরে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস রাশিয়া ও ইউক্রেন সংঘাতকে গণতন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্রের মধ্যে যুদ্ধ হিসেবে দেখাতে চাইলেও বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারত সম্ভবত এমনটা মানতে ইচ্ছুক নয়।

রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ ভারতের অবস্থানের প্রশংসা করে বলেছেন, হুমকি উপেক্ষা করে ভারতের ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান আমাদের সম্মানকেও অনুপ্রাণিত করে।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর সহিংসতা বন্ধ করার ও শত্রুতা শেষ করার গুরুত্ব পুনর্ব্যাক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘বিরোধগুলো আলোচনা ও কূটনীতির মাধ্যমে সমাধান করা উচিত।’

ল্যাভরভ অভিযোগ করে বলেন, ‘কয়েকটি দেশের সঙ্গে রাশিয়ার দ্বন্দ্বকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা গণতন্ত্রের সঙ্গে স্বৈরাচারের সংঘাত হিসেবে চিত্রিত করতে চায়। যদিও পশ্চিমারা নিজেরাই যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে একটি বড় স্বৈরাচারে পরিণত হয়েছে।’

তবে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলো ভারত ও রাশিয়ার বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করেছে। রাশিয়া থেকে অস্ত্র, জ্বালানি তেল, হীরা ও সার আমদানির জন্য মূল্য পরিশোধের ক্ষেত্রে বাধার মুখে পড়ছে ভারত। যদিও ভারত রুপি-রুবল পদ্ধতিতে আর্থিক লেনদেনে সমস্যা সমাধানের বিষয়টি বিবেচনা করছে।

ভারত ব্যবহৃত জ্বালানি তেলের ৮০ শতাংশ আমদানি করে থাকে। এর মধ্যে প্রায় ৩-৪ শতাংশ আমদানি করে রাশিয়া থেকে। এ ছাড়া দেশটি রাশিয়ার সমরাস্ত্রের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। যুদ্ধবিমান, সামরিক যান ক্রয় থেকে শুরু করে পারমাণবিক প্রযুক্তির সাবমেরিনও রাশিয়া থেকে ভাড়া নিয়েছে ভারত। এরই মধ্যে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে ১.৩ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের অর্থছাড়ের বিষয়ে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছে রাশিয়া।

যেভাবে কাজ করবে রুপি-রুবল পদ্ধতি

রুপি-রুবল পদ্ধতিতে ভারতীয় আমদানিকারকরা ভারতে থাকা রুশ ব্যাংকগুলোতে রুপিতে মূল্য পরিশোধ করবে এবং ব্যাংকগুলো রুশ রপ্তানিকারকদের রুবলে অর্থ প্রদান করবে। যেহেতু ভারতে রাশিয়া থেকে রপ্তানি করা পণ্যের থেকে আমদানি করা পণ্যের পরিমাণ বেশি। তাই রুশ ব্যাংকগুলোতে জমা হওয়া রুপিগুলো ভাঙানোর পথ হলো ভারত থেকে রাশিয়াতে রপ্তানি বাড়ানো।

কয়েকটি দেশের সঙ্গে রাশিয়ার দ্বন্দ্ব যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা গণতন্ত্রের সঙ্গে স্বৈরাচারের সংঘাত হিসেবে চিত্রিত করতে চায়। যদিও পশ্চিমারা নিজেরাই যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে একটি বড় স্বৈরাচারে পরিণত হয়েছে।

সে ক্ষেত্রে ভারতকে কৃষি যন্ত্রপাতি, ওষুধ, ফার্নিচার, বাথরুম ফিটিংস এবং অন্যান্য সামগ্রী রপ্তানি বাড়াতে হবে রাশিয়ায়। ভারতে যারা এ ধরনের পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে নতুন বাজার খুঁজছে, তাদের জন্য এটি নতুন সুযোগ।

ইউক্রেন ইস্যুতে ভারতের অবস্থান, যা বলছে বিশেষজ্ঞরা

বিভিন্ন ইস্যুতে রাশিয়ার সঙ্গে কয়েক দশকের কূটনৈতিক সহযোগিতা এড়িয়ে যাওয়াটা ভারতের জন্য বেশ কঠিন। কাশ্মীর প্রশ্নে জাতিসংঘে ভেটো দিয়ে ভারতের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল মস্কো। তাই আলোচনায় সংকট সমাধানের পক্ষেই জোর দিচ্ছে দিল্লি।

ভারতের সাবেক কূটনীতিক জে এন মিশ্রের বলেন, ‘এই ইস্যুতে ভারতের সামনে যেসব বিকল্প আছে, তার কোনোটিই ভালো নয়।

‘একই সময়ে কেউ দুই পাশে কাত হতে পারে না। বিবৃতিতে ভারত কোনো দেশের নাম নেয়নি। এর অর্থ মস্কোর বিরুদ্ধে যাবে না দিল্লি।’

ইউক্রেন প্রশ্নে কূটনীতিক সমাধানে ভারতের জোর দেয়ার কিছু কারণ আছে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মস্কোর সঙ্গে ভারতের প্রতিরক্ষা ও কূটনীতিক সম্পর্ক।

থিঙ্কট্যাংক উইলসন সেন্টারের উপপরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘ইউক্রেন-রাশিয়া সংকটে ভারতের অবস্থানে অবাক হওয়ার কিছু নেই। অতীত কৌশলই বেছে নিয়েছে দিল্লি। ইউক্রেনে যা ঘটছে, তাতে দিল্লির খুশি হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু তাই বলে অবস্থান বদলের কোনো সম্ভাবনাও নেই।’

এ বিভাগের আরো খবর