রুশ বিমান হামলা ঠেকাতে রাজধানী কিয়েভসহ গুরুত্বপূর্ণ শহরে নো-ফ্লাই জোন কার্যকর করতে পশ্চিমা দেশ ও ন্যাটোর প্রতি আহ্বান জানান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি। তবে তার এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হয়। তাদের অস্বীকৃতিতে পশ্চিমা নেতাদের তিরস্কার করেছেন জেলেনস্কি। মঙ্গলবার কানাডার পার্লামেন্টে তিনি বলেছেন, ‘পশ্চিমারা ভণ্ড।’
ভিডিও কনফারেন্সে মঙ্গলবার কানাডার পার্লামেন্টে তিনি এ কথা বলেন বলে আরটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
ইউক্রেনে নো-ফ্লাই জোন ঘোষণা ও যুদ্ধবিমান পাঠানোর ব্যাপারে পশ্চিমাদের অস্বীকৃতির তিরস্কার করে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধ সব সময় প্রকৃত চিত্র দেখায়। এ সময় বোঝা যায় কে শক্তিশালী আর কে দুর্বল। কে বুদ্ধিমান আর কে বোকা তা পরিষ্কার হয়ে যায়। কে সৎ আর কে ভণ্ড তাও বোঝা যায়।’
রাশিয়াকে বোমা ফেলা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আর কত ক্ষেপণাস্ত্র আমার শহরগুলোর ওপর ফেলবে?’
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পশ্চিমা নেতাদের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ‘এই হামলা বন্ধ করতে অনেকেই চায় না। কিন্তু তারা আমাদের নিয়ে উদ্বিগ্ন বলে বোঝাতে চায়।’
ইউক্রেনে নো-ফ্লাই জোন কার্যকরে পশ্চিমা নেতাদের রাজি করাতে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে আহ্বান জানান জেলেনস্কি।
ইউক্রেনকে সদস্য করতে ন্যাটোর অস্বীকৃতিরও সমালোচনা করেন জেলেনস্কি। তিনি বলেন, ‘ন্যাটো সদস্য বাড়ানোর কথা বলে। কিন্তু সদস্য হতে গেলে এটা তাদের জন্য কীভাবে খারাপ হতে পারে? তারা বলছে, ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য নয়। আবার বলছে, ইউক্রেনের জন্য দরজা খোলা।’
জেলেনস্কি ন্যাটোর প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আমাদের বলা হচ্ছে সদস্য করা হবে না। তাহলে এই দরজা কার জন্য খোলা।‘
তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষের আশঙ্কায় ন্যাটো এখন পর্যন্ত নো-ফ্লাই জোন কার্যকর করতে অস্বীকার করেছে।’
এর আগে লন্ডনে ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে এক ভিডিও কলে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘ন্যাটোকে বশ করেছে রাশিয়া।’
তিনি বলেন, “ন্যাটো ‘বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী জোট’। তবে এই জোটের কিছু সদস্য রাশিয়ার প্রতি মুগ্ধ। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে আমরা অনেক কথা শুনছি। বলা হচ্ছে, রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও যুদ্ধবিমান ঠেকাতে ন্যাটো ইউক্রেনে নো-ফ্লাই জোন চালু করলে এই যুদ্ধ শুরু হবে। আমরা বার বার আহ্বান জানানোর পরও এটি চালু হয়নি। ন্যাটোর এই সিদ্ধান্ত রুশ সেনাবাহিনীকে ইউক্রেনের শান্তিপূর্ণ শহরগুলোতে বোমাবর্ষণ করতে এবং হাসপাতাল ও স্কুল উড়িয়ে দেয়ার অনুমতি দিয়েছে।”
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার পর ইউক্রেনের জন্ম। রাশিয়া ইউক্রেনকে সব সময় পশ্চিমাবলয় থেকে মুক্ত রাখতে মরিয়া।
সামরিক সক্ষমতা দেখাতে সম্প্রতি সামরিক মহড়া বড় পরিসরে শুরু করে ন্যাটো। ইউক্রেনকে জোটে ভেড়াতে চেষ্টা চালায় তারা। আর এখানেই আপত্তি রাশিয়ার। রাশিয়া জানায়, ন্যাটো জোটে ইউক্রেনের যোগ দেয়া রাশিয়ার সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি।
এমন পরিস্থিতিতে পাল্টা ব্যবস্থা নেয় রাশিয়া। সীমান্তে সেনা মোতায়েন শুরু করে তারা।
এর কয়েক দিন পরেই গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর পর থেকেই পশ্চিমাদের বাধা উপেক্ষা করে পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে চলছে রুশ অভিযান।
ইউক্রেনকে ‘অসামরিকায়ন’ ও ‘নাৎসিমুক্তকরণ’ এবং দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে রক্ষা করার জন্যই এমন সামরিক পদক্ষেপ বলে দাবি করে আসছে রাশিয়া।