বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রাশিয়া কোথায় গিয়ে থামবে?

  •    
  • ৫ মার্চ, ২০২২ ২১:১১

যেকোনো মূল্যে কিয়েভ ঘিরে ফেলে শহরটির দখল নিতে চায় রাশিয়া। ইউক্রেনের বর্তমান সরকারকে উৎখাত করে ক্রেমলিনপন্থি শাসন ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনাও রয়েছে। এরই মাঝে রুশ অভিযান নিয়ে শংকিত ইউক্রেন সীমান্তবর্তী দেশগুলো।

ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান শুরুর পর এখন রুশ বাহিনীর প্রধান লক্ষ্য কিয়েভ দখল। তবে ইউক্রেনের রাজধানীর পতন ঘটিয়েই কি থেমে যাবে মস্কো?

পশ্চিমা বিশেষজ্ঞরা এমনটি মনে করছেন না। তারা বলছেন, কিয়েভ দখলের পর আরও অনেক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মনোযোগ দিতে পারেন ভ্লাদিমির পুতিন। মস্কোর প্রভাব বলয় বিস্তারের আকাঙ্ক্ষায় ঝুঁকি বাড়বে পোল্যান্ড, রোমানিয়া, স্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি, এস্তোনিয়া, লিথুয়ানিয়া এবং লাটভিয়ার মতো দেশগুলোর। এমনকি ন্যাটোর সঙ্গে সরাসরি সংঘাতের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য উইক অবলম্বনে লিখেছেন সঞ্জয় দে।

ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে আক্রমণের আদেশ দেয়ার সময় তার পরিকল্পনা ছিল, রুশ সেনারা কিয়েভে প্রবেশ করে দেশটির নির্বাচিত সরকারকে তড়িৎ অপসারণ করবে।

তবে এখনও সেটা ঘটেনি। দৃশ্যত পুতিনের সৈন্যরা প্রচণ্ড প্রতিরোধের মুখে পড়েছে। মাটি কামড়ে লড়াইয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী তাদের বিপুল ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি করেছে।

প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি রাজধানী কিয়েভ রক্ষায় মরিয়া। ইউক্রেন সরকারের প্রাণকেন্দ্র কিয়েভ এখন গোটা দেশের প্রতিরোধের প্রতীক। রুশ আক্রমণ শুরুর পর থেকেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বারবার রুশ বাহিনীকে পরাস্ত করার প্রত্যয় ঘোষণা করছেন।

জেলেনস্কি এখনও বলছেন, ‘আমরা তাদের (রুশ বাহিনী) রাজধানীর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভাঙতে দিইনি। তারা আমাদের ধ্বংস করতে চাইছে। শত্রুদের কাছে কিয়েভ দখলই মূল লক্ষ্য।’

এ সপ্তাহের শুরুতে কিয়েভমুখী ৪০ মাইল দীর্ঘ রুশ সামরিক কনভয় দেখা গেছে। তবে নতুন করে পাওয়া ছবিতে দেখা যাচ্ছে, কাদামাটি ও সাঁজোয়া যানের টায়ার রক্ষণাবেক্ষণে ঘাটতির কারণে বহরটি সম্ভবত থমকে গেছে।

যুক্তরাজ্যের দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘রুশ কনভয়ের স্যাটেলাইট ছবি দেখার পর রাজধানীবাসী ইউক্রেনিয়ানরা একটি বড় আক্রমণ ও একটি নৃশংস অবরোধের জন্য তৈরি হচ্ছে। তবে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে অগ্রসরমাণ রুশ সেনাদের সামান্য অগ্রগতি দেখা গেছে। তাদের এই ধীরগতির পেছনে যানবাহন রক্ষণাবেক্ষণে ঘাটতি, কাদা ও জ্বালানির অভাবকে দায়ী করা হচ্ছে।’

ব্রিটিশ ও আমেরিকান গোয়েন্দারা মনে করছেন, ‘মরণ কামড় দিতে তৈরি ইউক্রেনিয়ানদের তীব্র প্রতিরোধ এবং সরঞ্জামগত সমস্যা’- এই দুটি কারণ মিলিয়েই কনভয়টি জটিলতায় পড়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বসন্তকালিন কাদামাটি, যা রাশিয়ানদের কাছে ‘রাসপুতিৎসা’ নামে পরিচিত। এটি সেনাবহরটির চলার পথ আরও দুর্গম করে তুলেছে।

অনলাইনে প্রচারিত কিছু ছবিতে কাদায় আটকে যাওয়ার পর পরিত্যক্ত রুশ সাঁজোয়া যান দেখা গেছে। কিছু পত্রপত্রিকা লিখেছে, পরিবর্তিত আবহাওয়া বিশাল কনভয়টিকে রাস্তায় আটকে থাকতে বাধ্য করছে।

যুক্তরাজ্যের জয়েন্ট ফোর্সেস কমান্ডের সাবেক কমান্ডার জেনারেল স্যার রিচার্ড ব্যারনস বিবিসি রেডিও ফোরের টুডে অনুষ্ঠানে বলেন, প্রমাণগুলো থেকে বোঝা যায়, কনভয়টি কাদায় এমনভাবে আটকে গেছে যে, যানবাহনগুলোকে সরিয়ে নেয়াও কঠিন।

ব্যারনস আরও বলছেন, রাশিয়ানরা কিয়েভ যাওয়ার পথে জ্বালানি, খাদ্য, খুচরা যন্ত্রাংশ এবং টায়ারের জোগান নিশ্চিতের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ব্যর্থতার সম্মুখীন হচ্ছে।

তবে আমেরিকার প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের বরাতে বিবিসি বলছে, রাশিয়া এরপরেও যেকোনো মূল্যে কিয়েভ ঘিরে ফেলে শহরটির দখল নিতে চায়। প্রয়োজনে অবরোধের কৌশল প্রয়োগ করে তারা কিয়েভের পতন ঘটাতে মরিয়া, যেখানে প্রায় ৩০ লাখ মানুষের বসবাস।

কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিটসকো সতর্ক করে বলেছেন, রাশিয়া কিয়েভ অবরোধের পরিকল্পনা করছে। আক্রমণকারী সৈন্যরা ‘রাজধানীকে অবরোধের মধ্যে নিয়ে যেতে’ শহরটি ঘিরে ফেলতে চায়। তবে এরপরেও শত্রু বাহিনীকে ‘সমুচিত জবাব’ দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

ক্লিটসকো বলেন, ‘এমনকি (রুশ সেনাদের) যে দলগুলি কিয়েভের উপকণ্ঠে পৌঁছেছে তাদেরও কয়েক কিলোমিটার পিছু হটিয়ে দেয়া হয়েছে। রাজধানী রক্ষায় যে কোনো অবরোধ ভাঙতে যা যা করা দরকার তা করতে আমরা প্রস্তুত।

‘শহর রক্ষায় বিপুলসংখ্যক বেসামরিক মানুষ লড়াইয়ে যোগ দিয়েছেন। আমাদের আরও সহযোগী আছেন, নিজেদের প্রবল প্রতিজ্ঞা আছে। সব মিলিয়ে আমরা আমাদের প্রিয় ভূমি কখনও অন্যের হাতে ছেড়ে দেব না।’

রাজনৈতিক হত্যার ছক

আমেরিকান গোয়েন্দাদের একটি শংকা প্রকাশ করেছে ফরেন পলিসি। সেটি হলো, কিয়েভে অভিযান সফল হওয়ার পর রাশিয়া ‘গ্রেপ্তার এবং হত্যা মিশন’ পরিচালনার ছক কষেছে। আমেরিকান গোয়েন্দাদের সঙ্গে পরিচিত চারজন ব্যক্তি বলেছেন, ইউক্রেনে রুশ অভিযান পরিকল্পনার আওতায় রাশিয়া কিয়েভের ‘রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিদের একটি তালিকা’ করেছে, যাদেরকে গ্রেপ্তার বা হত্যার লক্ষ্যবস্তু করা হবে।

ফরেন পলিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্রেমলিনের লক্ষ্য সম্ভবত ‘ইউক্রেনের বিশিষ্ট রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, দুর্নীতিবিরোধী কর্মী এবং দেশটিতে বসবাসকারী বেলারুশিয়ান ও রুশ ভিন্নমতাবলম্বীরা’।

জাতিসংঘে আমেরিকান দূত এরই মধ্যে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারকে এক চিঠিতে সতর্ক করেছেন, ‘রাশিয়া ইউক্রেনের বিভিন্ন ব্যক্তির তালিকা তৈরি করতে শুরু করেছে। রুশ সেনাবাহিনী দেশটি দখল করার পর তাদের হত্যা বা গ্রেপ্তার করে সামরিক ক্যাম্পে পাঠানো হবে।’

চিঠিতে বলা হয়, ‘রুশ অভিযান শেষে ইউক্রেনে নির্বাসিত রুশ ও বেলারুশিয়ান ভিন্নমতাবলম্বী, সাংবাদিক, দুর্নীতিবিরোধী কর্মী, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু এবং এলজিবিটিকিউ ব্যক্তিদের মতো দুর্বল জনগোষ্ঠীসহ রাশিয়ার বিরোধিতাকারীরা গ্রেপ্তার বা মৃত্যুর ঝুঁকিতে আছেন।’

পুতুল সরকার

ইউক্রেনের অনলাইন সংবাদ মাধ্যম ইউক্রেইনস্কা প্রাভদার প্রতিবেদন অনুসারে, রাশিয়ার অভিযান সফল হলে প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কিকে উৎখাত করে তার জায়গায় ভিক্টর ইয়ানুকোভিচকে বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে মস্কোর।

ইয়ানুকোভিচ পালিয়ে বর্তমানে রাশিয়ার মিত্র প্রতিবেশী দেশ বেলারুশের মিনস্কে আছেন বলে দাবি করছে ইউক্রেইনস্কা প্রাভদা।

ইউক্রেনে ২০১৪ সালে প্রবল জনবিক্ষোভের মাঝে রুশপন্থি হিসেবে পরিচিত ইয়ানুকোভিচ ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন। ইইউর সঙ্গে ইউক্রেনের সম্পর্ক জোরদারের দাবি তুলে আয়োজিত ওই বিক্ষোভের সময় নিহত হন ২৮ জন। সে সময় ইয়ানুকোভিচের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং ভোটে কারচুপির মাধ্যমে বিজয়ী হওয়ার অভিযোগও ওঠে।

ইউক্রেনের গোয়েন্দা সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে ইউক্রেইনস্কা প্রাভদা জানিয়েছে, ক্রেমলিন ইয়ানুকোভিচকে একটি বিশেষ পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুত করছে, যার মধ্যে ইউক্রেনের নাগরিকদের উদ্দেশে তার একটি আহ্বান অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

তবে দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিরক্ষাবিষয়ক বিভাগের সম্পাদক শশাঙ্ক জোশি মনে করছেন, ইয়ানুকোভিচকে ফের ক্ষমতায় আনার পদক্ষেপটি ইউক্রেনিয়ানদের কাছে জনপ্রিয়তা পাবে না।

রাশিয়া কি ইউক্রেনে থামবে?

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, তার দেশে রুশ হামলা একটি ‘নতুন লৌহ বিভাজক’ তৈরির সূচনা করেছে, যা ইউরোপকে আবার বিভক্ত করতে পারে।

জাতির উদ্দেশে এক ভাষণে জেলেনস্কি বলেন, ‘আজকে আমরা যা শুনতে পাচ্ছি, তা কেবল ক্ষেপণাস্ত্রের বিস্ফোরণ, যুদ্ধ এবং বিমানের গর্জন নয়। এটি একটি নতুন লৌহ বিভাজকের শব্দ, যা নেমে আসছে এবং রাশিয়াকে সভ্য বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে।’

অন্য দেশগুলোকে সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘এখন যদি আমাদের সাহায্য না করেন, যদি ইউক্রেনকে জোরাল সহায়তা দিতে ব্যর্থ হন, তাহলে আগামীকাল যুদ্ধ আপনাদের দরজাতেও কড়া নাড়বে।’

রাশিয়ার সমর্থনে ইউক্রেনে সৈন্য মোতায়েন করেছেন বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো। তিনিও ইঙ্গিত দিয়েছেন, রুশ বাহিনী সফলভাবে ইউক্রেন দখলের পরে মলদোভা আক্রমণের পরিকল্পনা করছে।

লুকাশেঙ্কো গত মঙ্গলবার তার নিরাপত্তা পরিষদের সভায় এমন একটি মানচিত্রের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলেন, যেখানে ইউক্রেনের প্রতিবেশী দেশটিতে পরিকল্পিত অভিযানের পরিকল্পনা দেখা যাচ্ছিল।

দ্য টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, ওই মানচিত্রে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ লাইনের বিস্তারিত রয়েছে, যা অভিযান শুরুর প্রথম কয়েক দিনেই বাস্তবায়িত হয়েছে। সেখানে আগামী দিনের অভিযানের ছকও রয়েছে, যার একটির আওতায় আছে মলদোভার ওডেসা শহর।

দ্য টেলিগ্রাফ বলেছে, রাশিয়া যদি ইউক্রেনের বর্তমান সরকারকে উৎখাত করে ক্রেমলিনপন্থি শাসন ব্যবস্থা নিয়ে আসে, তাহলে পোল্যান্ড, রোমানিয়া, স্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি, এস্তোনিয়া, লিথুয়ানিয়া এবং লাটভিয়ার মতো ন্যাটো সদস্য দেশগুলো নিজেদের সীমান্তে বিপদের মুখোমুখি হবে।

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাসও সতর্ক করে বলেছেন, ইউক্রেনে পুতিনের অভিযান বন্ধ করা না গেলে আমরা বাল্টিক অঞ্চল, পোল্যান্ড, মলদোভার মতো দেশগুলোর জন্যও হুমকি দেখতে পাচ্ছি। এর শেষ পরিণতি হতে পারে ন্যাটোর সঙ্গে সরাসরি সংঘাত।

এ বিভাগের আরো খবর