করোনা মহামারি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর থেকেই চাহিদার তুলনায় পণ্যের সরবরাহ ঘাটতি থাকায় বিশ্বের নানা দেশে দ্রবমূল্য লাফিয়ে বাড়ছিল। যার প্রভাবে মূল্যস্ফীতির পারদও চড়ছিল।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ মূল্যস্ফীতিকে আরও বাড়িয়ে দেবে বলে উদ্বেগ জানিয়েছে বিশ্ব আর্থিক খাতের মোড়ল দুই সংস্থা বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফ।
বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস এবং আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিভা বুধবার এক যৌথ বিবৃতিতে এ আশঙ্কার কথা জানান।
বিবৃতিতে বলা হয়, ইউক্রেনে রুশ হামলার ফলে যে মানবিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে তাতে আমরা গভীরভাবে মর্মাহত ও দুঃখিত। মানুষ মারা পড়ছে, আহত হচ্ছে; পালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে। দেশটির অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। আমরা এই ভয়ঙ্কর ও মর্মান্তিক ঘটনায় ইউক্রেনের জনগণের পাশে আছি।
যুদ্ধের প্রভাব বিশ্বের অন্যান্য দেশেও পড়ছে; আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। দ্রব্যমূল্য বাড়ছে। মূল্যস্ফীতিকে আরও উসকে দিয়ে মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে। যুদ্ধ না থামলে আর্থিক বাজারের সংকট আরও খারাপ হতে থাকবে। গত কয়েকদিন ধরে রাশিয়ায় দেয়া নিষেধাজ্ঞাগুলোও বিশ্ব অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলছে।
আমরা পরিস্থিতি মূল্যায়ন করছি এবং আমাদের আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে নীতিগত প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করছি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো ইউক্রেনকে অর্থায়ন এবং নীতিগত ফ্রন্টে সমর্থনের জন্য একসঙ্গে কাজ করছে। সংকট নিরসনে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। র্যাপিড ফাইন্যান্সিং ইনস্ট্রুমেন্টের মাধ্যমে জরুরি অর্থায়নের জন্য ইউক্রেনের অনুরোধে সাড়া দিচ্ছি, যা আমাদের বোর্ড আগামী সপ্তাহের প্রথম দিকে বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে।
এ ছাড়া ইউক্রেনের স্ট্যান্ড-বাই অ্যারেঞ্জমেন্ট প্রোগ্রামে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। এর অধীনে এখন থেকে জুনের শেষের মধ্যে অতিরিক্ত ২ দশমিক ২ বিলিয়ন পাওয়া যাবে। বিশ্বব্যাংক গ্রুপে আমরা আগামী মাসে ৩ বিলিয়ন সহায়তার প্যাকেজ প্রস্তুত করছি। বাজেট সহায়তা হিসেবে এই অর্থ ইউক্রেনকে দেয়া হবে। এর মধ্যে ৩৫ কোটি ডলার এই সপ্তাহে অনুমোদনের জন্য বোর্ডে জমা দেয়া হবে। স্বাস্থ্য ও শিক্ষার জন্য দ্রুত ২০ কোটি ডলার সহায়তা প্রদান করা হবে।
বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফ যুদ্ধ বিধ্বস্ত এই অঞ্চল এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের ওপর সংঘাত এবং উদ্বাস্তুদের অর্থনৈতিক ও আর্থিক প্রভাব মূল্যায়ন করতে একসঙ্গে কাজ করছে। প্রয়োজনে আমরা প্রতিবেশী দেশগুলোতে উন্নত নীতি, প্রযুক্তিগত এবং আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য প্রস্তুত। সমন্বিত আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ ঝুঁকি কমাতে এবং সামনের কঠিন সময় পার করতে অসামান্য অবদান রাখবে। এই সংকট সারা বিশ্বের মানুষের জীবন ও জীবিকাকে প্রভাবিত করছে।
সাড়ে তিন মাসের উত্তেজনার পর ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযানে নামে রাশিয়া। জবাবে রাশিয়ার ব্যক্তি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে চলেছে যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্র দেশগুলো। এরই মধ্যে বিশ্ববাজারে প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেলের দর ১১০ ডলার ছাড়িয়েছে।
রয়টার্স বলছে, বুধবার ব্রেন্ট অপরিশোধিত তেলের দর প্রায় ৬ শতাংশ বেড়ে ১১১ ডলার ৩৭ সেন্টে উঠেছে। আর ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট অপরিশোধিত তেল প্রতি ব্যারেল একই পরিমাণ বেড়ে ১০৯ ডলার ৭৪ সেন্টে বিক্রি হচ্ছে।
এই দুই ধরনের তেলের দামই গত আট বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ হয়েছে। ২০১৪ সালের পর এত উচ্চতায় তেলের দাম আর ওঠেনি।