বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

তুর্কিদের হত্যা করতে হবে: জার্মান হামলাকারীর বাবা

  •    
  • ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৩:৩৩

হানাউ শহরের বর্ণবাদের বিষয়ে গুলতেকিন বলেন, ‘বর্ণবাদ জার্মান সমাজে গভীরভাবে প্রবেশ করেছে। সংখ্যালঘুদের স্মৃতিতে নির্মিত পাঁচটি সৌধ রয়েছে শহরজুড়ে। সেখানে আপনি নিহতদের ছবি দেখতে পাবেন। একটু খেয়াল করলেই দেখতে পাবেন, ছবিগুলো বিকৃত করা হয়েছে।’

জার্মানির হানাউয়ে সংখ্যালঘু তুর্কিদের ওপর হামলার দুই বছর হতে চলল। তদন্ত ইতোমধ্যে স্থগিত করা হয়েছে। যদিও এই স্থগিতাদেশ যৌক্তিক মনে করে না দেশটির সংখ্যালঘু ও তুর্কি সম্প্রদায়।

টিআরটি ওয়ার্ল্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবার হামলা চালানো সেই উগ্র ডানপন্থির বাবা প্রকাশ্যেই বলে বেড়াচ্ছেন, ন্যায়বিচারের জয়ের জন্য তুর্কি ও বিদেশিদের হত্যা করতে হবে।

সেদিন যা হয়েছিল

দুই বছর আগে ২০২০ সালে আজকের এই দিনে জার্মানির শহর হানাউতে ডানপন্থী উগ্রবাদীদের হামলায় তুর্কি বংশোদ্ভূত চার জার্মান নাগরিকসহ ৯ জনকে হত্যা করা হয়।

৪৩ বছর বয়সী টোবিয়াস রাথজেন শিশা বার, এরিনা বার ও ক্যাফেতে তার বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডারত অবস্থায় ৯ জনকে গুলি করে হত্যা করেন। পরে তিনি তার মাকে হত্যা করে নিজেও আত্মহত্যা করেন।

তুর্কি বংশোদ্ভূত জার্মান নাগরিক সেটিন গুলতেকিন বলেন, ‘সেদিন রাতে আমার ছেলে আমাকে ফোন করেছিল। সে দ্রুত আমাকে ক্যাফেতে যেতে বলে। কারণ চাচাকে গুলি করা হয়েছে।’

সেদিনের ঘটনায় গুলতেকিন তার ভাইকে হারান। এই শোক সামাল দিতে পারেননি গুলতেকিনের বাবা। ছেলে নিহত হওয়ার ৩৮ দিন পরই মারা যান। এই অপূরণীয় ক্ষতি গুলতেকিন এখনও বয়ে চলেছেন।

যখন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়, তখন পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নেয়, কিন্তু দুই বছরেও হানাউ হামলার মীমাংসা করতে পারেনি পুলিশ।

এ ঘটনার পর পুলিশ তৎপর হয়ে ওঠে। সে সময় দেশটির রাজনীতিবিদ, আশ্রয়প্রার্থী ও মুসলমানদের ওপর হামলার পরিকল্পনা করার অভিযোগ এনে উগ্র ডানপন্থী দলের সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়।

উগ্র-ডানপন্থা বাড়ছে জার্মানিতে

হানাউ ঘটনার ছয় মাস আগে পূর্ব জার্মানির শহর হ্যালের একটি প্রার্থনালয়ে সশস্ত্র ডানপন্থীদের হামলায় দুজন নিহত হয়েছিল। পরে হানাউয়ের হত্যাকাণ্ড পুরো জার্মানিতে ঝাঁকুনির সৃষ্টি করে।

গুলতেকিন বলেন, ‘হিটলার ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানরা কী বলেছিল? আর কখনোই নয়। কিন্তু এত বছর পরে এসে আমরা বিদেশিরা এখনো হত্যার শিকার হচ্ছি।’

‘এই হামলা এমন এক বার্তা দিয়েছে যে আমরা নিজের বাড়িতেও নিরাপদ নই’, এমনটাই বলেন তিনি।

২০১৯-এর তথ্যানুসারে হানাউয়ের বাসিন্দা ৯৬ হাজার ৫০০ জন। এর মধ্যে বিদেশি আছে ১৫ হাজার ৩৭৫ জন। বিদেশিদের মধ্যে ৪০-৪৫ শতাংশ মানুষ মুসলিম।

শহরের বর্ণবাদের বিষয়ে গুলতেকিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বর্ণবাদ জার্মান সমাজে গভীরভাবে প্রবেশ করেছে। সংখ্যালঘুদের স্মৃতিতে নির্মিত পাঁচটি সৌধ রয়েছে শহরজুড়ে। সেখানে আপনি নিহতদের ছবি দেখতে পাবেন। একটু খেয়াল করলেই দেখতে পাবেন, ছবিগুলো বিকৃত করা হয়েছে।’

গুলতেকিন জানান, ফ্যাসিস্ট জার্মান নেতা অ্যাডলফ হিটলারের ছবি নিহতদের ছবির ওপরে স্প্রে করা হয়। একবার তিনি দেখেন, তার ভাইয়ের ছবিতেও হিটলারের গোঁফ লাগানো হয়েছে।

তদন্তে আস্থা নেই সংখ্যালঘুদের

হামলার তদন্তে কর্তৃপক্ষের অবহেলারও অভিযোগ তোলেন তুর্কি বংশোদ্ভূত এই জার্মান নারী। তবে এও বলেন, ‘যদি আমরা হাল ছেড়ে দেই, তারা (উগ্রবাদীরা) জিতে যাবে।’

এমিস গুরবুজ হানাউ শহরের আরেকজন তুর্কি বংশোদ্ভূত বাসিন্দা। সেদিনের হামলায় তিনি তার ছেলে সেদাত গুরবুজকে হারিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এই পদ্ধতিগত বর্ণবাদের চর্চা করা হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ বছর ধরে, যা উগ্র-ডানপন্থিদের উৎসাহিত করছে।

গুরবুজ আরও বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ এই হামলাগুলোকে পাত্তা দেয় না। যদি কোনো বিদেশি কিংবা একজন তুর্কি এ হামলা চালাত, তাহলে রাষ্ট্র এটিকে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে বিবেচনা করত। কিন্তু হামলাকারী মানসিকভাবে অসুস্থ- এই কথা বলে হানাউয়ের হামলার তদন্ত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। হামলাকারীকে একজন সন্ত্রাসী হিসেবে দেখা হয়নি, তাকে একজন স্থানীয় জার্মান হিসেবে দেখা হয়েছিল।’

তিনি বলেন, ‘যখন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়, তখন পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নেয়, কিন্তু দুই বছরেও হানাউ হামলার মীমাংসা করতে পারেনি পুলিশ।

‘তারা স্রেফ ভান করছে, আসলে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এর উদ্দেশ্য হলো আমাদের ভয় দেখানো, যাতে আমরা দেশ ছেড়ে চলে যাই।’

তুর্কিদের ওপর হুমকি রয়েই গেছে

হানাউয়ে হামলাকারীর বাবা হ্যান্স-গার্ড রথজেন এখন নিহতদের পরিবারকেই প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছেন।

হ্যান্স-গার্ড তার ছেলের কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করে এবং সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে আরও সহিংসতা প্রচার করে পুলিশ স্টেশন এবং আদালতে বেশ কয়েকটি চিঠি ও আবেদন পাঠিয়েছেন, যেখানে তিনি দাবি করেন তার ছেলে হত্যাকারী নয়, প্রকৃতপক্ষে সে ভিকটিম।

গুলতেকিন জানান, রথজেনের চিঠি ও আবেদন পত্রে লেখা হয়েছে, ন্যায়বিচারের জয়ের জন্য তুর্কি ও বিদেশিদের হত্যা করতে হবে।

হ্যান্স-গার্ডের ছেলে এই হামলা চালানোর আগেই একই ধরনের চিঠি সরকারি অফিসগুলোতে পাঠিয়েছিল, যেখানে সে মুসলিম ও তুর্কি মুসলিমদের প্রতি চরম ঘৃণা ও বিদ্বেষ পোষণ করেছিল।

তার বাবা এখন তারই হিংসাত্মক এজেন্ডাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া তিনি হানাউ শহরের মেয়রের মৃত্যুও কামনা করেন, কারণ মেয়রই নিহতদের ছবি নিয়ে শহরে সৌধ তৈরি করেছেন।

এ ছাড়াও তিনি তার ছেলের জব্দ করা বন্দুক ও গোলাবারুদ ফেরত চেয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছেন।

ঠিক একই রকম চিঠি হত্যাকারীও লিখেছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সেই চিঠিগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে না নেয়ার ফলেই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল। এবার তারা হত্যাকারীর বাবার চিঠিগুলোকেও গুরুত্ব দিচ্ছে না। যার ফল হয়তো সংখ্যালঘুদেরই ভোগ করতে হবে।

টিআরটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জার্মান সংখ্যালঘুদের এখন মতামত হলো, উগ্র-ডানপন্থিরা যারা নাজিদের মতোই ঘৃণা পোষণ করে, তারা এখন পুলিশ ও প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় ঢুকে গেছে। তাই রাষ্ট্রের ভেতর থাকা ডানপন্থি ও সাধারণ ডানপন্থিদের মধ্যে সৃষ্ট যোগসাজশে সামনের দিনগুলোতে দেশটিতে সংখ্যালঘুদের জন্য পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।

এ বিভাগের আরো খবর