২০২১ সাল ছিল ক্রিপ্টোকারেন্সি ও এনএফটির জন্য চমকের একটি বছর। বিটকয়েনের সর্বোচ্চ দাম, ইলন মাস্কের মতো ইনফ্লুয়েন্সিয়ালদের ক্রিপ্টো মার্কেটে প্রভাব, চীনের নিষেধাজ্ঞা ও মেলানিয়া ট্রাম্পের এনএফটিতে প্রবেশের মতো ব্যাপারগুলো বছরব্যাপী আলোচনায় ছিল।
বেশ উত্থান-পতনের পর ২০২১ সালে বিটকয়েন তার সর্বোচ্চ দামে ওঠে। কয়েন মার্কেট ক্যাপের তথ্য মতে, বিগত বছরের নভেম্বরে প্রতি বিটকয়েনের দাম ৬৮ হাজার ইউএস ডলার (৫৮ লাখ টাকা) ছাড়িয়ে যায়।
এ বছরই প্রথমবারের মতো মুদ্রাটি তার মার্কেট ক্যাপিং ১ ট্রিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে।
এ ছাড়া পৃথিবীর প্রথম দেশ হিসেবে এল সালভাদর বিটকয়েনকে সরকারি মুদ্রা হিসেবে গ্রহণ করে। যদিও তাদের সেন্ট্রালাইজ চিভো সার্ভিসের প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে দেশটির জনগণই অভিযোগ করছে।
এ ছাড়া ক্রিপ্টো জগতের গডফাদার হিসেবে খ্যাত ভিটালিক বুটেরিনের কয়েন ইথারিয়ামও দেখিয়েছে চমক। তাদের প্রযুক্তিতে তারা বেশ কিছু ইউটিলিটিও যুক্ত করেছে। ফলে এ বছর ইথারিয়ামের দাম ৪ হাজার ৬০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। ৪৪৬ বিলিয়ন ডলার মার্কেট ক্যাপিং নিয়ে তারা বছর শেষ করেছে।
নতুন কারেন্সি সোলানার মূল্য ২০০ ডলার পার করে এ বছরই। তারাও ইথারিয়ামের মতো ইউটিলিটি নিয়ে এসেছে। এনএফটিতে নিলামের ফিচারও তাদের রয়েছে।
বছরব্যাপী ক্রিপ্টোকারেন্সিতে রাজত্ব করেছে ডোজকয়েন। মিম কয়েন হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও যখন প্রকাশ্যে আসে যে ইনফ্লুয়েন্সিয়াল বিলিয়নেয়ার ইলন মাস্ক ডোজকয়েনকে সমর্থন করছেন তখন এর দাম বাড়তে থাকে। ইনভেস্টিং.কমের তথ্য মতে, একপর্যায়ে বিটকয়েন ও ইথারিয়ামের পর ডোজকয়েন ক্রিপ্টোকারেন্সির তালিকায় ৩-এ স্থান করে নেয়।
তবে এর দামে কিছুটা ভাটা পড়ে যখন স্যাটারডে নাইট লাইভ (এসএনএল) প্রোগ্রামে ইলন মাস্ক ক্রিপ্টোকে ঝামেলা বলে অভিহিত করেন।
নতুন মুদ্রা হিসেবে চমক দেখিয়েছে শিবা ইনু। কয়েন মার্কেট ক্যাপের তালিকায় সেরা ১০ কয়েনেও উঠে আসে শিবা। ১৮.৫ বিলিয়ন মার্কেট ক্যাপিং নিয়ে ১৩ নম্বরে থেকে বছর শেষ করেছে সে।
বছরব্যাপী মিম কয়েনের রাজত্বের ধারাবাহিকতায় চমক দেখিয়েছে ফ্লোকিও। টুইটারে ইলন মাস্কেরও সমর্থন ছিল কয়েনটিতে। তবে বছরের শেষদিকে এসে তার মূল্যের পতন ঘটে।
বিশ্বব্যাপী ক্রিপ্টোকারেন্সির দরদামে প্রভাব ফেলেছে চীনের বিধিনিষেধ। তবে প্রভাবগুলো ছিল সাময়িক। ক্রিপ্টোকারেন্সির জন্য বছরটি ছিল অসাধারণ।
এনএফটি জগতে এ বছর সবচেয়ে বড় চমক ছিল বিপলের এনএফটি। ক্রিস্টির নিলামে তার ডিজিটাল আর্ট ‘দ্য ফার্স্ট ফাইভ থাউজেন্ড ডেজ’ ৬৯ মিলিয়ন ডলারে ভারতীয় বিটকয়েন বিলিয়নিয়ার ভিনেস সুন্দরসেন কিনে নেন। এরপর থেকে প্রযুক্তির জগতে বছরব্যাপী আলোচনায় থাকে এনএফটি। হলিউড-বলিউডের অনেক সেলিব্রেটিও এ সময় নিজেদের এনএফটি প্রকল্প শুরু করার ঘোষণা দেয়।
অক্টোবরে সালমান খানও তার এনএফটি প্রকল্প চালুর ঘোষণা দেন। ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, নভেম্বরে অমিতাভ বচ্চনের এনএফটি ১ মিলিয়ন ডলার চলে যায়। ভারতে যে কোনো এনএফটি নিলামে এটিই সর্বোচ্চ।
এনএফটি জগতের সর্বশেষ চমকটি ছিল, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের এনএফটি প্রকল্প শুরুর ঘোষণা।
১৬ ডিসেম্বর ‘মেলানিয়াস ভিশন’ নামে তার প্রথম এনএফটির নিলাম শুরু হয় ১৫০ ইউএস ডলারে। তবে মেলানিয়া ব্যবহার করেছিলেন সোলানা ব্লকচেইন। একমাত্র সোলানাতেই তার এনএফটি কেনা সম্ভব। এত দিন ধরে প্রভাব বিস্তার করা ইথারিয়াম চেইন নতুন বছরে প্রতিপক্ষ হিসেবে সোলানাকে পাচ্ছে।
২০২২-এ ক্রিপ্টোকারেন্সি ও এনএফটির বেশকিছু ইভেন্ট রয়েছে। নতুন নতুন চমক যে বছরব্যাপী থাকবেই, নিশ্চিত করেই বলা যায়।