আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় শহর মাজার-ই-শরিফে চারজন নারীকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে শাসকদল তালেবানের এক মুখপাত্র। নিহত চার নারীর মধ্যে কমপক্ষে একজন অধিকারকর্মী বলে নিশ্চিত করেছে স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র।
বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে ফ্রান্স টোয়েন্টিফোরের প্রতিবেদনে বলা হয়, শহরের একটি বাড়ি থেকে ওই চার নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে দুই সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তালেবানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কারি সৈয়দ খোস্তি বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা স্বীকারোক্তি দিয়েছেন যে তারাই ওই চার নারীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। এ ঘটনায় অনুসন্ধান চলছে এবং মামলাটি আদালতের কাছে হস্তান্তর করা হয়।’
নিহত ব্যক্তিদের পরিচয় জানাননি খোস্তি। কিন্তু স্থানীয় কয়েকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে যে নিহতদের মধ্যে একজন নারী অধিকারকর্মী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক ফ্রোজান সাফি।
তিনটি সূত্র এএফপিকে জানিয়েছে, ওই নারীরা একটি ফোনকল পেয়েছিলেন। ফোনে তাদের তালেবানের শাসন থেকে বাঁচতে আফগানিস্তান ছাড়তে সাহায্য করা হবে বলে জানানো হয়েছিল। বিমানে ওঠার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন তারা।
একটি গাড়িতে করে তাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং পরে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
একটি আন্তর্জাতিক সংস্থায় কর্মরত এক নারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এই নারীদের একজনকে আমি চিনতাম। তিনি ফ্রোজান সাফি। তিনি নারী অধিকারকর্মী ছিলেন, সারা শহর তাকে চেনে।’
ওই নারী কর্মী আরও জানান, তিনি নিজেও তিন সপ্তাহ আগে একটি ফোন পেয়েছিলেন। ফোনে তাকে দেশের বাইরে যেতে সহযোগিতার কথা বলা হয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘ফোন করা ব্যক্তি আমার বিষয়ে প্রতিটি তথ্য জানতেন। তিনি আমাকে আমার কাগজপত্র পাঠাতে বলেছিলেন। একটি প্রশ্নপত্র পূরণ করতেও বলেছিলেন। তিনি এমন ভান করেছিলেন যেন তিনি আমার তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।’
কিন্তু কথাবার্তা সন্দেহজনক মনে হওয়ায় তিনি ফোনদাতাকে ব্লক করে দেন। এখন নিজের জীবন নিয়েই শঙ্কিত এই নারী। চারজনকে হত্যার খবর জেনে তিনি বলেন, ‘আমি তো আগেই ভয় পেয়েছিলাম।
‘আমার মানসিক অবস্থা ইদানীং খুব খারাপ। আমার সারাক্ষণ মনে হয় যে কেউ আমার বাড়িতে এসে আমাকে জোর করে ধরে নিয়ে যাবে আর তারপর গুলি করে দেবে।’
২০ বছরের ব্যবধানে চলতি বছরের আগস্টে আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসে তালেবান; ক্ষমতাচ্যুত করে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত বেসামরিক সরকারকে। কঠোর রক্ষণশীল ইসলামপন্থি গোষ্ঠীটি নব্বইয়ের দশকে প্রথম দফায় দেশ শাসন করার সময় নারীদের ওপর কঠিন বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল। ফলে দ্বিতীয় দফায় গোষ্ঠীটি দেশের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পরই অনেক অধিকারকর্মী তালেবানের প্রতিহিংসার শিকার হওয়ার ভয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।
যারা থেকে গেছেন আফগানিস্তানে, তাদের অনেকেই অধিকার ফিরে পেতে এবং মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার অনুমতির দাবিতে রাজধানী কাবুলে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেছেন।
অনেক বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছেন তালেবান যোদ্ধারা। অননুমোদিত সমাবেশের খবর প্রকাশ করা সংবাদকর্মীদেরও গ্রেপ্তারের হুমকি দিয়েছে তালেবান।
তবে তাই বলে নারী অধিকারকর্মীদের হত্যায় যোদ্ধাদের অনুমতি দেয়া হয়নি বলে দাবি করেছে তালেবান। হত্যাকারীদের বিচার ও শাস্তির আশ্বাসও দিয়েছে গোষ্ঠীটি।