আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে দেশের সর্ববৃহৎ সামরিক হাসপাতালে হামলার ঘটনায় দায় স্বীকার করেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট-খোরাসান (আইএস-কে)। চার হামলাকারীকে গুলি করে হত্যা ও একজনকে জীবিত আটকের খবর জানিয়েছে শাসকদল তালেবান।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ৪০০ শয্যার সরদার মোহাম্মদ দাউদ খান হাসপাতালে মঙ্গলবারের এ হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৫ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক মানুষ।
হাসপাতালে জোড়া বিস্ফোরণের মধ্যে অন্তত একটি আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা ছিল। দুটি শক্তিশালী বিস্ফোরণের পাশাপাশি হাসপাতালের ভেতরে ঢুকেও আক্রমণ করে বন্দুকধারীরা।
তালেবানের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ জানিয়েছেন, হেলিকপ্টারে করে তালেবানের বিশেষ বাহিনীর সদস্যদের হাসপাতালে নামিয়ে দেয়া হয়। তারাই হামলাকারীদের হাসপাতালে প্রবেশ ঠেকিয়ে দেন।
১৫ মিনিটের মধ্যে হামলাকারীদের হাসপাতালের প্রবেশপথ আর প্রাঙ্গণে হত্যা করা হয় বলেও জানান তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরাও জানান, হামলার সময় এলাকাটিতে দুটি হেলিকপ্টার নামতে দেখেছেন তারা।
অর্থাৎ পশ্চিমা সেনারা আফগানিস্তান থেকে বিদায় নেয়ার পর তাদের ফেলে যাওয়া সামরিক হেলিকপ্টারের প্রথম কোনো কাজে লাগালো তালেবান।
আফগানিস্তানের শাসকদল তালেবানের উপ-মুখপাত্র বিলাল কারিমি হামলায় আইএস-কের সংশ্লিষ্টতা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, প্রবেশপথে প্রথম বিস্ফোরণের পর সশস্ত্র আইএস-কে জঙ্গিরা হাসপাতালে প্রবেশ করে। পরে পাল্টা অভিযানে তাদের চারজনকে হত্যা ও একজনকে জীবিত আটক করে তালেবান যোদ্ধারা।
ছবি ও ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, হাসপাতাল প্রাঙ্গণের আকাশে কালো ধোঁয়া কুণ্ডুলি পাকিয়ে উঠছে। গোলাগুলির শব্দের অডিও রেকর্ডও প্রকাশ হয়েছে।
হামলার সময় হাসপাতালের ভেতরে অবস্থানরত এক চিকিৎসক বার্তা সংস্থা এএফপিকে ফোনে জানান, তাকে লুকিয়ে থাকতে বলা হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য বিশেষ কক্ষে আশ্রয় নিয়েও গোলাগুলির আওয়াজ পেয়েছেন তিনি।
সৈয়দ আহাদ নামের ওই চিকিৎসক আরেকটি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘একজন আফগান নাগরিক হিসেবে দিনের পর দিন এসব যুদ্ধ, আত্মঘাতী হামলা আর বিস্ফোরণে আমি ক্লান্ত। আর কত সময় গেলে এই দুর্ভোগ শেষ হবে?’
চলতি বছরের আগস্টে পশ্চিমা বিশ্ব সমর্থিত আফগান সরকারকে উৎখাত করে তালেবান। এরপর থেকেই দেশটিতে মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনায় ধারাবাহিক হামলা চালিয়েছে আইএস-কে।
আগস্টে কাবুলের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গোষ্ঠীটির হামলায় ১৫০ জনের বেশি বেসামরিক আফগান ও যুক্তরাষ্ট্রের ১৩ জন সেনা নিহত হয়।
এ ছাড়া ২০১৭ সালে সরদার মোহাম্মদ দাউদ খান হাসপাতালেই হামলা চালিয়েছিল আইএস। সে সময় চিকিৎসকের ছদ্মবেশধারী আইএস সদস্যদের হামলায় নিহত হয় কমপক্ষে ৩৮ জন।