ক্রিকেট খেলায় পাকিস্তানি দলের জয়ে উল্লাস করায় তিন কাশ্মিরি মুসলিম শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতীয় পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর প্রদেশ রাজ্যের আগ্রা শহরে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে রোববারের ম্যাচে ভারতের বিপরীতে পাকিস্তানের বিজয় উদযাপন করছিলেন ওই শিক্ষার্থীরা। ম্যাচটিতে পাকিস্তানের কাছে ১০ উইকেটে হারে ভারত।
পুলিশের উদ্ধৃতি দিয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়, গ্রেপ্তারকৃত শিক্ষার্থীরা ‘ভারতবিরোধী ও পাকিস্তানের পক্ষে’ স্লোগান দিচ্ছিল। তাদের বিরুদ্ধে ‘উসকানিমূলক আচরণ ও সাইবার সন্ত্রাস’-এর অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
যে কলেজে ওই তিন কাশ্মির শিক্ষার্থী ভর্তি আছেন, সেই কলেজ থেকেও সোমবার তাদের বহিষ্কার করা হয়। কারণ হিসেবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপের স্ট্যাটাসে তারা পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের প্রশংসা করেছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়।
পুলিশ জানায়, ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের কয়েকজন নেতাকর্মীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে বুধবার তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
পাকিস্তানকে সমর্থনের অভিযোগ তুলে আগ্রায় ভারতীয় মুসলিমদের বিরুদ্ধে গত দুইদিনে বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন।
দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশি দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক বরাবরই শীতল। ক্রিকেট খেলা নিয়ে দুই দেশের মানুষের মধ্যে উত্তাপও নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
সমালোচকদের মতে, ভারত কোনো ম্যাচে হেরে গেলে অনেক ভারতীয়ই নিজেদের ক্ষোভকে খেলার মধ্যে সীমিত রাখতে পারে না। রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও ধর্মীয় বৈপরীত্যসহ নানা ইস্যু মাঝখানে চলে আসে এবং খেলোয়াড়দের ওপর বিষোদ্গার উগড়ে দেয়ার ঘটনাও ঘটে।
চলতি সপ্তাহের ভারত-পাকিস্তান শেষ হওয়ার পরই ভারতীয় দলের একমাত্র মুসলিম ক্রিকেটার মোহাম্মদ শামি আক্রমণের লক্ষ্য হয়ে ওঠেন। অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে তাকে লক্ষ্য করে বিদ্রুপ চরমে ওঠে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা অভিযোগ তোলে, মুসলিম বলেই শামি ইচ্ছে করে ইসলামিক রাষ্ট্র পাকিস্তানের ক্রিকেট দলের বিপরীতে খারাপ খেলেছেন এবং রান দিয়েছেন। শামিকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ আখ্যাও দিয়েছে অনেকে।
পাকিস্তানের জয়ে আনন্দিত হয়ে হোয়াটসঅ্যাপ পোস্ট দেয়ায় মরুরাজ্য রাজস্থানে চাকরিচ্যুত হয়েছেন এক শিক্ষক। বুধবার তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরেও একই কারণে দুটি মেডিক্যাল কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী ও কর্মীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। কারণ তারাও পাকিস্তানি ক্রিকেট দলকে সমর্থন করছিলেন।
উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য পাঞ্জাবে কাশ্মিরি শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম।
খেলা শেষে হাজারো কাশ্মিরি পাকিস্তানের বিজয় উদযাপনে সড়কে নেমে আসে এবং ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ বলে স্লোগান দেয়।