আশপাশের পরিবেশ কতটা আলোকিত তার ওপর আমাদের চোখের মণির আকৃতি পরিবর্তন হয়, তা হয়তো অনেকে জানেন। তবে একই সময়ে দেখা বস্তুর সংখ্যার ওপরও যে চোখের মণির আকৃতিতে পরিবর্তন আসে, তা কেউই জানেন না। কারণ এ বিষয়টি বিজ্ঞানীরা সম্প্রতিই জানতে পেরেছেন।
নতুন এক গবেষণা থেকে উঠে আসা তথ্য বলছে, একটি দৃশ্যে বস্তুর আধিক্য চোখের মণির আকার বড় করে, যেন সবকিছু দেখতে চায় মণি, কোনো কিছুই বাদ দিতে চায় না। এটি সহজ ও স্বয়ংক্রিয় এক প্রতিবর্ত ক্রিয়া।
সায়েন্স এলার্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, গবেষণার অংশ হিসেবে বিজ্ঞানীরা ১৬ অংশগ্রহণকারীর চোখের মণির আকৃতি পর্যবেক্ষণ করেন।
অংশগ্রহণকারীদের কয়েকটি সাদা বা কালো ডট বসানো ছবির দিকে তাকাতে বলা হয়। একটি ছবিতে ডটগুলো ছাড়া ছাড়াভাবে রয়েছে। আর অন্য ছবিতে ডটগুলো জোড়া লাগিয়ে ডাম্বেল আকৃতির করা হয়েছে।
গবেষকরা লক্ষ করেন, ছড়ানো ডটের ছবির দিকে তাকানোর সময় অংশগ্রহণকারীদের চোখের মণি বড় হয়ে যায়। আর ডাম্বেল আকৃতির ডটের ছবি এমন এক বিভ্রম তৈরি করে যাতে মনে হয় ডটের সংখ্যা কম, বেশি নয়। এ কারণে অংশগ্রহণকারীদের চোখের মণি ছোট হয়ে যায়।
ইতালির ইউনিভারসিটি অফ ফ্লোরেন্সের সাইকোলজিস্ট ও নিউরোসায়েন্টিস্ট এলিসা ক্যাসটালডি বলেন, ‘গবেষণার ফল জানাচ্ছে, উপলব্ধির সঙ্গে সংখ্যার তথ্যের অন্তর্নিহিত যোগাযোগ রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এ যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যবহারিক তাৎপর্য রয়েছে। যেমন গাণিতিক হিসাব করতে সমস্যায় ভোগা (ডিসক্যালকুলিয়া) শিশুদের ক্ষেত্রে আমাদের নতুন এই জানাবোঝা সহযোগিতা করতে পারে।’
গবেষকরা জানান, দুটি ছবিতে থাকা কালো বা সাদা ডটের সংখ্যার পরিবর্তন করা হয়নি, একই ছিল। তবে একটি ছবিতে এক ডটের সঙ্গে অন্য ডট সংযোগ করায় অংশগ্রহণকারীদের উপলব্ধি ভিন্ন হয়।
চোখের মণির ওই প্রতিবর্ত ক্রিয়ার উৎপত্তি কীভাবে, সে বিষয়ে বিজ্ঞানীদের ভাষ্য, প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার জায়গা থেকেই এমনটার সূচনা হতে পারে।
বেশির ভাগ জীবজন্তুকে বনজঙ্গলে শত্রুর উপস্থিতি টের পেতে, খাবার খুঁজতে বা ঘরে ফিরতে সতর্ক থাকতে হয়। তাদের সংখ্যার বোধ এসব ক্ষেত্রে সহায়তা করে বলে ধারণা করা হয়।
আর জন্ম নেয়ার কয়েক ঘণ্টা পর থেকে মানুষের মধ্যে সংখ্যার উপলব্ধি কাজ করতে শুরু করে। এমনকি অঙ্কে খারাপ হলেও সংখ্যা যাচাই করা ক্ষমতা মানুষের থাকে।
অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভারসিটি অফ সিডনির সাইকোলজিস্ট ডেভিড বার বলেন, ‘চারপাশে তাকানোর সময় স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমরা দৃশ্যের গঠন, আকার, চলাচল ও রং উপলব্ধি করতে পারি।
‘ঠিক একইভাবে, চোখের সামনে থাকা বস্তুর সংখ্যাও আমরা উপলব্ধি করি। এই ক্ষমতা যা অন্যান্য প্রাণীর মধ্যেও দেখা যায়, বিবর্তনের একটি মৌলিক দিক।
‘এর মাধ্যমে গাছে কয়টি আপেল ঝুলছে বা কতজন শত্রু আক্রমণ করছে, এমন আরও গুরুত্বপূর্ণ অসংখ্য বিষয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়।’