মিয়ানমারের সংঘাতকবলিত শান প্রদেশ থেকে ভারতের মিজোরাম রাজ্যে ঢুকছে হাজারো শরণার্থী। মিজোরামের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্ত জেলাগুলোতে আশ্রয় নিচ্ছে তারা।
হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে সহিংস সংঘাত অব্যাহত থাকায় ভারতে আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
এক পুলিশ কর্মকর্তার রোববার দেয়া তথ্যের বরাত দিয়ে বলা হয়, মিজোরামের কয়েকটি অঞ্চলে বর্তমানে আশ্রয় নিয়ে আছে নারী ও শিশুসহ মিয়ানমারের কমপক্ষে ১৩ হাজার নাগরিক। এদের মধ্যে দেড় হাজারের বেশি মানুষের বিস্তারিত তথ্য এখনও নথিভুক্ত হওয়া বাকি।
প্রতিদিনই নতুন করে শরণার্থীদের প্রবেশ ঘটছে বলে এ সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। তার ওপর আন্তর্জাতিক সীমান্তে প্রবেশপথ ও বহির্গমন পথের কাছে ঠাঁই নেয়া কিছু মানুষ নিয়মিত ভারতে ঢুকছে, বের হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা, কমিউনিটি নেতা, বেসরকারি সাহায্য সংস্থা ও গির্জা কর্তৃপক্ষ মিয়ানমারের নাগরিকদের আশ্রয় ও খাবারের ব্যবস্থা করছে।
মিজোরাম পুলিশের তথ্য বিশ্লেষণ করে ভারতের সর্ববৃহৎ বার্তা সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, রাজ্যের ছয়টি সীমান্ত জেলা চাম্পাই, লওঙত্লাই, সিয়াহা, সেরছিপ, নাহথিয়াল ও সাইতুয়ালে ৯ হাজার ৪১১ শরণার্থীর থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মিজোরামের মোট ১১টি জেলায় মিয়ানমারের নাগরিকরা আশ্রয় নিয়েছেন। শুধু চাম্পাই জেলাতেই আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ৬ হাজার মানুষ, যা ১১টি জেলার মধ্যে সর্বোচ্চ। প্রাদেশিক রাজধানী আইজাওলে আশ্রয় নিয়েছেন এক হাজার ৬২২ জন।
ইয়াং মিজো অ্যাসোসিয়েশনের তুইপুইরাল শাখার সভাপতি এম সি লালরামেঙ্গা জানান, চাম্পাই জেলার ২১টি গ্রাম নিয়ে গঠিত তুইপুইরালে বর্তমানে মিয়ানমারের প্রায় ২ হাজার ৭০০ নাগরিক থাকছেন।
তিনি জানান, মিয়ানমারের শান প্রদেশ থেকে বিরামহীনভাবে মিজোরামে প্রবেশ করছেন শরণার্থীরা। ফসল কাটার মৌসুমে আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
লালরামেঙ্গা বলেন, অঞ্চলটির ১৪টি গ্রামে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র ও ত্রাণ শিবির তৈরি করেছেন বাসিন্দারা। শরণার্থীদের খাদ্য ও পোশাক সরবরাহের পাশাপাশি আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে কয়েকটি বেসরকারি সাহায্য সংস্থা এবং প্রেসবাইটারিয়ান, ব্যাপটিস্ট ও রোমান ক্যাথলিক চার্চ কর্তৃপক্ষ।
সেন্ট্রাল ইয়াং মিজো অ্যাসোসিয়েশনের উপ-সভাপতি লালমাছুয়ানা জানান, শরণার্থীদের সহায়তা দিতে সংস্থাটি সম্প্রতি ভারতীয় মুদ্রায় ১৫ লাখ রুপি খরচ করেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে এ অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছিল।
মিয়ানমারের সঙ্গে মিজোরামের আন্তর্জাতিক সীমানার দৈর্ঘ্য ৫১০ কিলোমিটার। ছয়টি সীমান্ত জেলায় গত ৭ সেপ্টেম্বর থেকে শরণার্থীরা প্রবেশ করতে শুরু করে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান হয়। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার ভেঙে দিয়ে ক্ষমতা দখল করে সেনাবাহিনী। এরপর থেকেই দেশটি থেকে প্রতিবেশী ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় মিজোরামে প্রতিদিন কমবেশি শরণার্থীর প্রবেশ অব্যাহত আছে।
তবে শান প্রদেশে সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহীদের সংঘাতের মধ্যে সম্প্রতি মিজোরামে বানের পানির মতো আশ্রয়প্রার্থীদের ঢল শুরু হয়।
মিজোরামে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের বেশির ভাগ নাগরিকই সংখ্যালঘু শান সম্প্রদায়ের সদস্য। মিজোরামের মিজো আদিবাসীদের সঙ্গে জাতিগতভাবে সম্পর্কিত শানরা।