মারা গেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ পররাষ্ট্রমন্ত্রী কলিন লুথার পাওয়েল। করোনাভাইরাস-পরবর্তী জটিলতায় সোমবার মৃত্যু হয় তার। তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কলিন পাওয়েলের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে তার পরিবার।
বিবৃতিতে বলা হয়, করোনা প্রতিরোধী টিকার ডোজ সম্পন্ন করা ছিল পাওয়েলের। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের সামরিক হাসপাতাল ওয়াল্টার রিড ন্যাশনাল মিলিটারি মেডিক্যাল সেন্টারে চিকিৎসা নিয়ে সেরেও উঠেছিলেন তিনি।
সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে জীবনের চারটি দশক ব্যয় করেছেন কলিন পাওয়েল। শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা, কূটনীতিক, প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
বিংশ শতাব্দীর শেষ ও একবিংশ শতাব্দীর শুরুর কয়েক বছরে রিপাবলিকান সরকারের আমেরিকান পররাষ্ট্রীয় নীতির কাঠামো সংস্কারের কৃতিত্ব দেয়া হয় তাকে।
তবে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপে ভূমিকার জন্যও বিতর্কিতও পাওয়েল। ২০০৩ সালে জাতিসংঘে তার ভাষণের মধ্য দিয়েই ইরাকযুদ্ধের পথ উন্মুক্ত হয়েছিল।
সেনাবাহিনীতে থাকাকালীন ৩৫ বছরে অনেক নতুন ধারণার উদ্ভব ঘটিয়েছিলেন পাওয়েল। পেশাজীবনের শুরুতেই যোগ দেন ভিয়েতনামযুদ্ধে।
সাধারণ সেনা থেকে আশির দশকে তৎকালীন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের শাসনামলে হন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নিরাপত্তা উপদেষ্টা। এরপর নব্বইয়ের দশকের শুরুতে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ হার্বার্ট ওয়াকার বুশের শাসনামলে দেশের সর্বকনিষ্ঠ ও প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান হিসেবে দায়িত্ব নেন জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফের চেয়ারম্যান হিসেবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের শীর্ষ সামরিক পদ এটি।
পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন জোটের অভিযান সফল হওয়ার মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ে বীরোচিত ভূমিকায় অবতীর্ণ হন পাওয়েল। নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়ে দেশের সম্ভাব্য প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়েও অন্যতম প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় ছিলেন তিনি।
পাওয়েলের ভাবমূর্তিতে প্রথম কলঙ্কের দাগ লাগে বিংশ শতাব্দীতে। সে সময় প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন তিনি। তার ইশারাতেই জাতিসংঘে ভুল গোয়েন্দা তথ্য উপস্থাপনের ভিত্তিতে শুরু হয় ইরাকযুদ্ধ।
প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে শেষ পর্যন্ত আর নাম লেখাননি পাওয়েল। তবে তার সময় পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পদধারী কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান ছিলেন তিনি; প্রেসিডেন্টের উত্তরসূরি হিসেবে ছিলেন চতুর্থ অবস্থানে।