আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ ফের তালেবানের হাতে যাওয়ার পর মঙ্গলবার দেশটির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হয়েছে।
কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসরুমের মাঝখানে পর্দা বা বোর্ড রেখে নারী শিক্ষার্থীদের পুরুষদের থেকে আলাদা করে ক্লাস নেয়ার খবর পাওয়া গেছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানী কাবুলের পাশাপাশি কান্দাহার ও হেরাত শহরের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরুর দিন নারী শিক্ষার্থীদের পুরুষদের থেকে আলাদা বসানো হয়।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের নির্দিষ্ট জায়গায় নারী শিক্ষার্থীদের চলাচল সীমাবদ্ধ রাখা হয়।
কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ বছর বয়সী শিক্ষার্থী অ্যাঞ্জিলা বলেন, ‘ক্লাসরুমে পর্দা টানানো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
‘ক্লাসে ঢুকে আমার খুব খারাপ লেগেছে। আমরা ধীরে ধীরে ২০ বছর আগের সময়ে ফিরে যাচ্ছি।’
অ্যাঞ্জিলা জানান, তালেবান ক্ষমতা নেয়ার আগে ক্লাসে নারীরা পুরুষদের পাশে বসতেন না। তবে ক্লাসরুম কখনো পর্দা দিয়ে ভাগ করা হয়নি।
এ বিষয়ে তালেবান মুখপাত্রের তাৎক্ষণিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
তালেবানের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, ‘পর্দা দিয়ে ক্লাসরুম পৃথক করা পুরোপুরি গ্রহণযোগ্য।
‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সম্পদ ও জনবল কম। এ অবস্থায় একজন শিক্ষকের ক্লাসের দুই পাশে একই সময়ে পড়ানো সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত।’
গত সপ্তাহে তালেবানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্রুতই খুলবে। তবে নারী ও পুরুষদের আলাদা বসানো হবে।
দীর্ঘ দুই দশক পর আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ তালেবানের হাতে যাওয়ার পর দেশটির স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের অবস্থা কী হয়, তার দিকে নজর রাখছে বিদেশি শক্তি।
আফগান নারীদের অধিকারের প্রতি সম্মান জানানোর বিনিময়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থসহায়তা ও কূটনৈতিক তৎপরতা শুরুর পক্ষে পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা।
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালেবানের প্রথম পাঁচ বছরের শাসনামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নারীদের শিক্ষা গ্রহণ নিষিদ্ধ ছিল। পাশাপাশি চাকরি করারও অনুমতি ছিল না তাদের।
১৫ আগস্ট কাবুল পতনের মাধ্যমে আফগানিস্তানের ক্ষমতা তালেবান কুক্ষিগত করার পর ইসলামি আইন অনুযায়ী নারী অধিকারের প্রতি সম্মান জানানোর আশ্বাস বিভিন্ন সময়ে দিয়ে আসছিল তালেবান।
তবে ইসলামি আইন মেনে নারী অধিকারের প্রতি বাস্তবে কীভাবে সম্মান জানানো হবে, তা কখনো সংগঠনটির পক্ষ থেকে পরিষ্কার করা হয়নি।
এর আগে শনিবার রাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নারীদের উপস্থিতি সংক্রান্ত একগুচ্ছ নির্দেশ জারি করে তালেবানের উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এতে বলা হয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত নারী শিক্ষার্থীদের ক্লাসে নেকাব পরে আসতে হবে।
এ ছাড়া পুরুষ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নারীরা একসঙ্গে ক্লাস করতে পারবেন না। আর যদি করতে হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে ক্লাসরুম পর্দা দিয়ে ভাগ করে নারী ও পুরুষকে আলাদা বসাতে হবে।
নির্দেশে বলা হয়, নারী শিক্ষার্থীদের ক্লাস অবশ্যই নারী শিক্ষকরা নেবেন। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে সচ্চরিত্রের বয়স্ক পুরুষরা কেবল তাদের পড়াতে পারবেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বলা হয়, ‘সুযোগ-সুবিধার ওপর ভিত্তি করে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নারী শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে।
‘নারী ও পুরুষ শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার ও বের হওয়ার পথ আলাদা হতে হবে।
‘নারী শিক্ষক না পাওয়া গেলে কলেজগুলোকে বয়স্ক পুরুষ শিক্ষক নিয়োগের চেষ্টা করতে হবে। এসব শিক্ষককে অবশ্যই সচ্চরিত্রের পরিচিতি থাকতে হবে।’
মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আরও বলা হয়, ‘ক্লাসে নারীরা আলাদা পড়াশোনা করবেন। পুরুষদের ক্লাস শেষ হওয়ার পাঁচ মিনিট আগে তাদের পড়াশোনা শেষ করতে হবে যাতে ক্লাসের বাইরে নারী ও পুরুষ একত্রিত না হতে পারেন।
‘পুরুষ শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছেড়ে বের না হওয়া পর্যন্ত ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করবেন নারী শিক্ষার্থীরা।’