আফগানিস্তানের পাঞ্জশির উপত্যকায় প্রতিরোধ আন্দোলনের নেতা আহমেদ মাসুদ দেশে ছেড়ে পালিয়ে তুরস্কে অবস্থান করছেন।
তালেবানের সংবাদমাধ্যমের এক প্রতিনিধি সোমবার এনডিটিভিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানান।
তালেবানের নিউজ চ্যানেল আলেমারাহর সাংবাদিক তারিক গজনিওয়াল বলেন, ‘পাঞ্জশিরে ইন্টারনেট সেবা নেই।
‘আহমেদ মাসুদ তাহলে অনলাইনে পোস্ট দিচ্ছেন কীভাবে? তুরস্কে চলে গেছেন তিনি।’
গজনিওয়াল বলেন, ‘কাবুল পতনের পর তালেবান যোদ্ধারা পাঞ্জশির ঘিরে রাখে। আমাদের ড্রোন আছে। তবে পাঞ্জশিরে বিদ্রোহীদের সঙ্গে আমাদের লড়াইয়ে আমরা সেসব ব্যবহার করিনি।
‘আমরা মাজার-ই-শরিফ শহরে ড্রোন ব্যবহার করি। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের কাছে পাঞ্জশিরকে নিয়ে তেমন কোনো তথ্য নেই।’
পাঞ্জশিরে স্থানীয় বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াইয়ে তালেবান জয়ী হয়েছে বলে সোমবার তালেবান মুখপাত্র জাবিহউল্লাহ মুজাহিদ দাবি করেন।
সাক্ষাৎকারে গজনিওয়াল বলেন, ‘অন্যান্য প্রদেশের মতো পাঞ্জশিরের নেতাদের সঙ্গেও আমরা কথা বলার চেষ্টা করি।
‘তবে সেখানকার কিছু মানুষ আমাদের প্রস্তাবে রাজি ছিল না। বাইরের দেশ তাদের প্রভাবিত করেছিল।
‘আমরা ১৫ দিন অপেক্ষা করেছি। আমাদের মুজাহিদিনরা পাঞ্জশিরের প্রবেশপথের বাইরে অপেক্ষায় ছিল।
‘বিদ্রোহীরা আমাদের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় পাঞ্জশিরে আক্রমণ করতে বাধ্য হই।’
অবশ্য পাঞ্জশিরের প্রতিরোধ বাহিনীর বরাতে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ‘তালেবান ও তাদের মিত্রদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে বিদ্রোহীরা।
‘পাঞ্জশিরজুড়ে কৌশলগত অবস্থানে রয়েছে তারা।’
শনিবার পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সের (আইএসআই) প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফয়েজ হামিদ কাবুলে যান।
এ বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য না করে গজনিওয়াল বলেন, ‘আগামীতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরাও আফগানিস্তানে আসতে পারেন।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্ব ও আফগানদের জন্য গ্রহণযোগ্য নতুন সরকার গঠনের চেষ্টা করছি আমরা।
‘তাই অনেকের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে। তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা দেশের আমির হবেন।’
রাজধানী কাবুল থেকে প্রায় ৯০ মাইল উত্তরে হিন্দুকুশ পর্বতমালায় অবস্থিত পাঞ্জশির গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তালেবানের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ দেখে।
১৫ আগস্ট তালেবানের হাতে কাবুল পতনের পর কয়েক হাজার স্থানীয় মিলিশিয়া, আফগান সেনাবাহিনী ও বিশেষ বাহিনীর সাবেক সদস্যদের নিয়ে পাঞ্জশিরে জাতীয় প্রতিরোধ বাহিনী (এনআরএফএ) গড়ে তোলেন স্থানীয় নেতা মাসুদ। সঙ্গে যুক্ত হন আফগানিস্তানের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহ।
আশির দশকে সোভিয়েত ও নব্বই দশকে তালেবানবিরোধী লড়াইয়ে আফগানিস্তানের আলোচিত যোদ্ধা ছিলেন মুজাহিদিন কমান্ডার প্রয়াত আহমেদ শাহ মাসুদ। তারই ছেলে আহমেদ মাসুদ।
কাবুল পতনের আগে আফগানিস্তানের ৩৪টি প্রদেশের মধ্যে ৩৩টিই তালেবান দখল করতে পারলেও পাঞ্জশির তারা দখল করতে পারেনি।
ভৌগোলিক অবস্থানগত সুবিধা ও স্থানীয়দের চরম তালেবানবিরোধী মনোভাব পাঞ্জশিরকে অনেকটা অজেয় দুর্গে পরিণত করে।
তবে এবার অজেয় পাঞ্জশির দখলে মরিয়া ছিল তালেবান। প্রদেশটি দখলে গত কয়েক দিনে এনআরএফএর বিদ্রোহীদের সঙ্গে তুমুল লড়াই হয় সংগঠনটির।
সংঘর্ষে উভয় পক্ষে শতাধিক মানুষের মৃত্যুর খবর দেয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম।