ইরানের অষ্টম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন ইব্রাহিম রাইসি। ক্ষমতায় এসেই যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় বিপর্যস্ত অর্থনীতি, ভঙ্গুর স্বাস্থ্যখাত আর ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিতে ফেরা নিয়ে স্থবির আলোচনাসহ বেশ কিছু বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাকে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, পার্লামেন্টে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় শপথ নেন রাইসি। আগামী চার বছরের জন্য গ্রহণ করেন দেশের জনগণের নেতৃত্বভার।
দুই সপ্তাহের বেঁধে দেয়া সময় শেষের দিকে বলে একই দিন প্রস্তাবিত নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম ঘোষণারও কথা রয়েছে তার।
ইরানি সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়, রাইসির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের তালিকায় ছিলেন ইরাকের প্রেসিডেন্ট আর নাইজার, সিরিয়া, তাজিকিস্তান, তানজানিয়া ও উজবেকিস্তানের পার্লামেন্ট স্পিকারসহ দেশ-বিদেশের বেশ কয়েকজন পররাষ্ট্রবিষয়ক কর্মকর্তা।
ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি গত মঙ্গলবার সাবেক বিচার বিভাগীয় প্রধান রাইসিকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দেন। এরপরই তার নিয়োগদান প্রক্রিয়া শুরু হয়।
চলতি বছরের জুনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়ী হন অতি রক্ষণশীল রাইসি। উল্লেখযোগ্য রকমের কম ভোটার উপস্থিতির হার ছিল ওই নির্বাচনে। নানা নিষেধাজ্ঞায় নির্বাচন বর্জন করেছিলেন অনেক হেভিওয়েট ও সংস্কারপন্থি প্রার্থী।
যেসব চ্যালেঞ্জ নিয়ে ক্ষমতায় রাইসি
মধ্যপন্থি হাসান রুহানির উত্তরসূরী রাইসি। ২০১৩ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে আট বছরের শাসনামলে রুহানির ঐতিহাসিক অর্জন ছিল ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি। ইসলামিক প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রটির সঙ্গে ওই চুক্তির মাধ্যমে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেছিল ছয় বিশ্বশক্তি।
কিন্তু ২০১৮ সালে একতরফা সিদ্ধান্তে চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নাম প্রত্যাহার করেন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প, পুনর্বহাল করেন কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা। এতে নতুন করে সংকট শুরু হয় ইরানের অর্থনীতি ও সমাজব্যবস্থায়।
আরব সাগরে গত এক সপ্তাহে ইসরায়েলের একটি তেলবাহী ট্যাংকারে হামলা ও পানামার পতাকাবাহী অপর একটি ট্যাংকার ছিনতাই হয়। এসব ঘটনায় এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইসরায়েলের তোপের মুখে পড়েছেন ৬০ বছর বয়সী রাইসি।
দুটি ঘটনাতেই পশ্চিমা বিশ্বের সন্দেহের তির ইরানের দিকে হলেও অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে তেহরান।
পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনা
তেহরানে বুধবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিক ও পরমাণু চুক্তি আলোচনার অন্যতম প্রতিনিধি এনরিক মোরা।
রাইসির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনিও আমন্ত্রিত।
পরমাণু চুক্তি নতুন করে বাস্তবায়নের চেষ্টায় অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত ইরান ও বিশ্বশক্তিগুলোর মধ্যে ছয় দফা আলোচনা হয়েছে। গত ২০ জুন শেষ বৈঠকের পর পরবর্তী বৈঠকের তারিখ এখনও অনির্ধারিত।
রাইসি জানিয়েছেন, নিষেধাজ্ঞা শিথিলের উপায় খুঁজবে তার সরকার। কিন্তু বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর ইচ্ছায় বাঁচবে না তার দেশ।
অর্থনীতি পুনরুদ্ধার
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে তেল রপ্তানি বাধার মুখে পড়ায় ২০১৮ ও ২০১৯ সালে ছয় শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হারিয়েছে ইরানের অর্থনীতি।
নজিরবিহীন মুদ্রাস্ফীতি, আকাশছোঁয়া আবাসন খরচ, বেসরকারি খাতে মন্দা ও দুর্নীতিতেও বিপর্যস্ত গোটা ইরান।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণেও কঠিন সময় পার করছে ইরান। ছোঁয়াচে এ ভাইরাসে মধ্যপ্রাচ্যের সবচয়ে বিপর্যস্ত দেশটিতে প্রাণহানি ৯২ হাজারের বেশি, শনাক্ত ৪০ লাখের বেশি। টিকা কার্যক্রমে গতি নিয়ে চাপের মুখে আছে ইরান সরকার।
পানি, বিদ্যুৎ আর নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে সম্প্রতি আবারও ফুঁসে উঠেছে ইরানের জনতা।
পানির তীব্র সংকটের মুখে গণবিক্ষোভের কারণেও সংবাদের শিরোনামে উঠে আসে ইরান। পানিবিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে সৃষ্ট খরায় পানির সংকট দেখা দিয়েছে বলে পরস্পরকে দুষছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারাই।
এসব সংকটের দ্রুত সমাধানই রাইসি প্রশাসনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
শপথ অনুষ্ঠানে প্রথমবারের মতো ঢাকার প্রতিনিধি
ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রাইসির শপথের মতো এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় অনুষ্ঠানে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, মধ্যপ্রাচ্যের ভ্রাতৃপ্রতিম অন্য রাষ্ট্রগুলোর মতো ইরানের সঙ্গেও স্বাভাবিক সম্পর্ক চায় বাংলাদেশ। আর এ জন্যই দেশটির নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট সাইয়্যেদ ইব্রাহিম রাইসির শপথ অনুষ্ঠানে প্রথমবারের মতো তেহরানে প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে ঢাকা।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ৩ সদস্যের ওই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ইরানের নতুন নেতৃত্বের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ বার্তা নিয়ে গেছেন তারা।